Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
তালড্যাংরার গ্রামে নালিশ শুনলেন কর্তারা

হস্টেলে উপরের ক্লাসের দাদারা মেরেছে

স্কুলের হস্টেলের মধ্যে কী ভাবে আক্রান্ত হল তাঁর ছেলে, তা জানতে তদন্তের দাবি তুলেছিলেন বাবা। সেই ঘটনারই তদন্ত করতে হস্টেলে গিয়ে নানা অভিযোগ উঠে এল শিশুকল্যাণ কমিটি (সিডব্লিউসি) ও চাইল্ড লাইনের কর্তাদের কাছে। যা শুনে তাজ্জব বনে গিয়েছেন ওই আধিকারিকেরাই!

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০০:৫৮
Share: Save:

স্কুলের হস্টেলের মধ্যে কী ভাবে আক্রান্ত হল তাঁর ছেলে, তা জানতে তদন্তের দাবি তুলেছিলেন বাবা। সেই ঘটনারই তদন্ত করতে হস্টেলে গিয়ে নানা অভিযোগ উঠে এল শিশুকল্যাণ কমিটি (সিডব্লিউসি) ও চাইল্ড লাইনের কর্তাদের কাছে। যা শুনে তাজ্জব বনে গিয়েছেন ওই আধিকারিকেরাই!

শনিবার রাতে তালড্যাংরার কাদামাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হস্টেলে বছর ছয়েকের এক প্রথম শ্রেণির ছাত্রকে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ ওঠে। রবিবার ওই ছাত্রকে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এখনও ওই শিশু হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন। মারের চোটে ওই ছাত্রের মাথার পিছনের অংশ ফেটে গিয়েছিল। তার বুকে ও পিঠে ছিল বেত ও ডাস্টারে পেটানোর দগদগে ঘা। ওই ছাত্রের বাবা প্রথম থেকেই হস্টেল সুপারের বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ তুলছিলেন। এ বিষয়ে তালড্যাংরা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে তদন্তের দাবি করেন তিনি।

ওই ঘটনারই তদন্তে মঙ্গলবার কাদামাড়া প্রাথমিক স্কুল ও হস্টেল পরিদর্শনে যান সিডব্লিউসি-র চেয়ারম্যান মৈনুর আলম, সদস্য অপূর্ব মণ্ডল এবং চাইল্ড লাইনের জেলা কো-অর্ডিনেটর সজল শীল। মৈনুর আলম বলেন, “ওই হস্টেলের ইনচার্জ, স্কুলের প্রধান শিক্ষক, হস্টেলের কর্মী এবং গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে আমরা জানতে পেরেছি, চতুর্থ শ্রেণির কিছু আবাসিক ছাত্র মদ্যপ অবস্থায় ওই প্রথম শ্রেণির ছাত্রের উপরে রাতভর অত্যাচার চালিয়েছে। তবে, সুপারের বিরুদ্ধেও নানান অভিযোগ উঠেছে।’’

তদন্তকারী আধিকারিকদের কাছে হস্টেলের ইনচার্জ শ্রীকান্ত মিদ্যা লিখিত ভাবে এ-ও জানিয়েছেন, চতুর্থ শ্রেণির কিছু ছাত্র স্কুলের সরস্বতী পুজোর চাঁদায় দিয়ে মদ কেনে। হস্টেল সুপারের অনুমতি নিয়েই রাতে হস্টেলের রুমে না শুয়ে ছ’জন চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ওই প্রথম শ্রেণির ছাত্রটিকে নিয়ে স্কুলের ক্লাস রুমে শুতে যায়। রাতে সেখানেই তার উপরে অত্যাচার চালানো হয়। মৈনুর আলমের বক্তব্য, “হস্টেল সুপারের বাড়িতেই বেআইনি মদ তৈরি হয় বলে গ্রামবাসী ও হস্টেল ইনচার্জ আমাদের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন।’’ তিনি জানান, এ দিন হস্টেল সুপারকে বারবার স্কুলে ডেকে পাঠানো হলেও তিনি তদন্তকারীদের সঙ্গে দেখা করতে আসেননি।

সুপারের সঙ্গে এ দিন অনেক চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। তবে, স্কুলের প্রধান শিক্ষক মদনমোহন মান্ডি বলেন, “হস্টেল সুপারের বিরুদ্ধে আগেও অভিযোগ পেয়েছি। বারবার তাঁকে সতর্ক করেছি। তার পরেও উনি বদলাননি। সবার নজর এড়িয়ে স্কুলে এই সব হচ্ছে বলে জানা ছিল না।’’ হস্টেলের ইনচার্জ শ্রীকান্ত মিদ্যাও বলেন, “স্কুলে দীর্ঘদিন ধরেই এই সব হচ্ছে। আমি সবে তিন মাস হস্টেলের দায়িত্ব পেয়েছি। এই সব রুখতে প্রশাসন যাতে হস্তক্ষেপ করে, সেই দাবি তুলছি।’’ এই ঘটনা নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ চূড়ান্ত করতে আজ, বুধবার আলোচনায় বসতে চলেছেন শিশুকল্যাণ কমিটির কর্তারা।

অত্যাচারের শিকার শিশুটির আতঙ্ক এখনও কাটেনি। হস্টেল সুপারের কঠিন শাস্তি দাবি করার পাশাপাশি ওই স্কুলের হস্টেলে ছেলেকে রেখে আর পড়াবেন কিনা, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে শিশুটির পরিবার। তার বাবার কথায়, ‘‘হাসপাতালের চিকিৎসায় ধীরে ধীরে আমার ছেলে সুস্থ হচ্ছে। কিন্তু, ওর মনে যে ক্ষত দিয়ে গেল ওই অত্যাচার, তা কি কোনও ভাবে মুছবে?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE