সেনেড়া মৌজায় পাহাড় কেটে পাথর বের করার যে সরকারি প্রকল্প শুরু হয়েছে, সেখানে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের ঝামেলা পাকানো বিক্ষিপ্ত কোনও ঘটনা নয় বলেই মনে করছে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ-প্রশাসন। খোঁজখবর নিয়ে পুলিশ জেনেছে, পাহাড় রক্ষার দাবিতে স্থানীয় স্তরে সংগঠিত হওয়া আন্দোলনেরই অঙ্গ ওই ঝামেলা। ঘটনার পিছনে রাজনীতির ছায়াও দেখতে পাচ্ছেন অনেকে।
ঘটনা হল, কাশীপুরের পলসড়া মৌজার ধাঁচে রঘুনাথপুরের সেনেড়াতেও পাহাড় রক্ষার দাবিতে ইতিমধ্যেই কমিটি তৈরি হয়েছে। চলতি জানুয়ারিতে এলাকায় সভা করে কুইলাতোড়া পাহাড় বাঁচাও নামের একটি কমিটি তৈরি হয়েছে। কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন রঘুনাথপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতির ওই এলাকার সিপিএম (শুক্রবারের প্রতিবেদনে ভুল করে তৃণমূল লেখা হয়েছিল) সদস্য সোম হেমব্রম।
রঘুনাথপুর ১ ব্লকের খাজুরা পঞ্চায়েতের সেনেড়া মৌজায় ১৮.৪০ একর জমিতে গ্রানাইট পাথর বের করার কাজ করবে রাজ্য সরকারি সংস্থা ওয়েস্ট বেঙ্গল মিনারেল ডেভলেপমেন্ট অ্যান্ড ট্রেডিং কর্পোরেশন লিমিটেড (এমডিটিসি)। ওই কাজের বরাত পেয়েছে একটি বেসরকারি সংস্থা। কিন্তু, সেই জমির মধ্যেই থাকা একটি ছোট পাহাড় বা টিলা কেটে পাথর বের করার প্রশ্নেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। কমিটির দাবি, ওই টিলায় আছে আদিবাসীদের ধর্মীয়স্থান। টিলা কাটা হলে সেটি নষ্ট হবে। তা ছাড়া, ওখানে সরস্বতী পুজোর পর দিন বড় পুজো হয়। বহু মানুষ তাতে যোগ দেন। প্রকল্প রূপায়িত হলে টিলার জঙ্গল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কাও করছে কমিটি।
প্রশাসনের অবশ্য দাবি, এমডিটিসি কর্তৃপক্ষ তাদের জানিয়েছেন, পাহাড় কেটে পাথর বের করা হবে না। বরং কাজ হবে পাহাড়ের নীচে ও তার পাশের এলাকায়। ফলে আদিবাসীদের ধর্মীয়স্থান বা পুজোর জায়গা বা পাহাড়ের জঙ্গল নষ্ট হওয়ার সম্ভবনা কার্যত নেই।
পুলিশের সন্দেহ, ভ্রান্ত ধারণা থেকেই মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্থানীয় কিছু লোক গিয়ে ওই বেসরকারি সংস্থার সাইট অফিসে ভাঙচুর করে। তদন্তের পরে পুলিশ ও প্রশাসনের একাংশের দাবি, নভেম্বর মাসে ওই বেসরকারি সংস্থাটি প্রাথমিক ভাবে প্রকল্প এলাকায় পৌঁছনোর জন্য রাস্তা তৈরির কাজ শুরু করার পরেই স্থানীয় লোকজন প্রকল্প গুটিয়ে নেওয়ার জন্য বলেছিল। কিন্তু সংস্থা কাজ চালিয়ে যাওয়াতেই তাদের সাইট অফিসে ভাঙচুর হয়েছে। সোম হেমব্রম অবশ্য দাবি করেছেন, কমিটির লোকজন এই হামলায় জড়িত নন। কমিটি এই ধরনের ঘটনাকে সমর্থন করে না।
কুইলাতোড়ার ঘটনায় কাশীপুরের পলসড়া মৌজায় এমডিটিসি-র এমনই আরও একটি প্রকল্পের সাদৃশ্য খুঁজে পাচ্ছে প্রশাসনের একাংশ। কাশীপুরেও একই ভাবে পাহাড় রক্ষার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছিলেন আদিবাসীরা। সমস্যা মেটাতে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। ওই প্রকল্পের কাজ আপাতত বন্ধ। রঘুনাথপুরের ক্ষেত্রেও আদিবাসী ও অন্য বাসিন্দারা মিলিত ভাবে কমিটি তৈরি করার পরে বিষয়টি নিয়ে সর্তক ভাবেই এগোতে চাইছে শাসকদল।
স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরির অভিযোগ, সরকারি কাজে বাধা দিতে আদিবাসী সম্প্রদায়কে উস্কে পিছন থেকে রাজনীতি করতে চাইছে সিপিএম। তিনি বলেন, ‘‘পাহাড়ের মধ্যে থাকা আদিবাসীদের ধর্মীয়স্থান বা অন্য সম্প্রদায়ের পুজোর জায়গা সরকারি প্রকল্প রূপায়ণের জন্য নষ্ট হবে, এটা আমাদের মুখ্যমন্ত্রী কখনওই চান না। ফলে আমরা সকলকে নিয়ে বসে সব দিক বজায় রেখে কী ভাবে কাজ করা যায়, সেই সমাধানসূত্র খোঁজার চেষ্টা করছি।” মঙ্গলবারের ঘটনার পরেই এমডিটিসি-র শীর্ষ কর্তারা যোগাযোগ করেন পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের মন্ত্রী তথা জেলা তৃণমূল সভাপতি শান্তিরাম মাহাতোর সঙ্গে। সমস্যা কী ভাবে মেটানো যায়, তা তাঁরা দেখছেন বলে জানিয়েছেন শান্তিরামবাবু।
সিপিএমের সোমবাবুর অবশ্য দাবি, এই কমিটির সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই। কুইলাতোড়া ছাড়াও লালপুর, মহুলবাড়ি, ধাদকিবনা-সহ ছয়-সাতটি গ্রামের লোক এই কমিটিতে রয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy