নির্মাণ: রিজার্ভার তৈরি চলছে। বাঁকুড়ায় তোলা নিজস্ব চিত্র।
বসন্তে গরমের সামান্য ছোঁয়া লাগতেই বাঁকুড়া শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে ফের শুরু হয়েছে ‘জল-আতঙ্ক’। দু’বেলা পুরসভার জল মিলবে তো— এই শঙ্কায় দিনগোনা শুরু করেছেন তাঁরা। শহরের অন্য এলাকায় ওখনও দিনে কয়েক ঘণ্টা করে দু’বার জল মিললেও কাটজুড়িডাঙা এলাকার মানুষের অভিযোগ, তাঁরা একদিন অন্তর মোটে একঘণ্টা করে জল পাচ্ছেন। ফলে ভরা গ্রীষ্মে কী হবে, তা সবার অজানা। তবে আশার কথা শোনাচ্ছে, বাঁকুড়া পুরসভা। বাঁকুড়ার কেশিয়াকোলে আন্ডার গ্রাউন্ড রিজার্ভার তৈরির কাজ চলছে। ওই রিজার্ভার চালু হয়ে গেলে পুরবাসীকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানীয় জল সরবরাহ করা যাবে। যদিও এই গ্রীষ্মে ওই রিজার্ভার চালু হবে না। অপেক্ষা করতে হবে আরও এক বছর।
গ্রীষ্ম এলেই বাঁকুড়া শহর জুড়ে শুরু হয় তীব্র পানীয় জলের সঙ্কট। কখন পুরসভার জল আসে, সে জন্য রাত জেগে কলের সামনে হাপিত্যেশ করে অপেক্ষা করেন বাসিন্দারা। পানীয় জলের দাবিতে রাস্তা অবরোধ ও পুরপ্রধানকে ঘেরাও করা চিরাচরিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে এখানে।
কাটজুড়িডাঙা মিলনপল্লির বাসিন্দা স্কুল শিক্ষক শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এর মধ্যেই বাড়ির কুয়োর জলস্তর অনেক নীচে নেমে গিয়েছে। পুরসভার ট্যাপকলে একদিন পরপর জল পাওয়া যাচ্ছে। খুব সঙ্কটে পড়ে গিয়েছি। ভরা গ্রীষ্মে কী হবে, ভাবতে গেলে মাথা ঘুরে যাচ্ছে।’’ মিলনপল্লির বধূ বর্ণালী লায়েক জানান, দিনে কখন জল আসে তার কোন নির্দিষ্ট সময় নেই। তাই সারা দিন কলতলায় কান পেতে থাকেন, জল এল নাকি?
বাঁকুড়ার শিখরিয়া পাড়ার বাসিন্দা বুলুরানি কুণ্ডু, জয়ন্তী বিশ্বাসের কথায়, ‘‘রাস্তার কলের জলই আমাদের ভরসা। যেটুকু জল পাচ্ছি, তাতে চলে যাচ্ছে ঠিকই। কিন্তু ভরা গরমে এ বারও কি গাড়ি থেকে জল নেওয়ার সময় প্রতিবেশিদের সঙ্গে ঝগড়াঝাঁটি করতে হবে? জল সরবরাহ কি স্বাভাবিক হবে না?’’
শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা গেলে, সবাই আশা করেছিলেন, এ বার দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে আনা জল তাঁদের সমস্যা অনেকটা কাটিয়ে দেবে। কিন্তু সে ভরসা দিতে পারছে না পুরসভা।
বাঁকুড়ার পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত জানান, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে জল নিয়ে আসার একটি প্রকল্প নিয়েছে, যার নামকরণ করা হয়েছে ‘জলধি’। এই প্রকল্পে সরকার মোট ২০০ কোটি টাকা খরচ করছে। তার মধ্যে প্রথম দফায় পুরসভা পেয়ে ১০১ কোটি টাকা। দ্বিতীয় দফায় পেয়েছি ১৪ কোটি টাকা।
পুরপ্রধান বলেন, ‘‘গন্ধেশ্বরী নদীতীরের কেশিয়াকোলে ওই প্রকল্পে একটি ভূগর্ভস্থ রিজার্ভার তৈরির কাজ চলছে। সেখানে দামোদর থেকে আনা জল জমা করা হবে। এ ছাড়া শহরের লখ্যাতড়া শ্মশান, গন্ধেশ্বরী রামানন্দ পাম্পহাউস, পাতাকোলা পাম্পহাউস, মাদাকাটা পাম্পহাউস, পাঁচবাগা ময়দান, বাঁকুড়া জেলা স্কুল প্রাঙ্গণে মোট ছ’টি জায়গায় তৈরি হচ্ছে ছটি ওভারহেড জল ট্যাঙ্ক। পাইপ লাইন পাতার কাজও চলছে বিভিন্ন এলাকায়। কেশিয়াকোলের ভূগর্ভস্থ রিজার্ভার থেকে জল ওই ছ’টি ট্যাঙ্কে তুলে প্রতিদিন সময় মতো শহরে সরবরাহ করা হবে।’’ তাঁর আশ্বাস, এক বছরের মধ্যেই এ কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যাবে।
কিন্তু এ বছর গরমে জলের সঙ্কট কী ভাবে মিটবে? পুরপ্রধান বলেন, ‘‘গতবছর পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃষ্টি হওয়ার ফলে পাম্পহাউসগুলি লাগোয়া নদীগর্ভে জলস্তর এখনও পর্যন্ত ঠিক আছে। তাই প্রতিদিন ঠিকঠাক জল দিতে পারা সম্ভব হচ্ছে। ভরা গ্রীষ্মে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের সহায়তায় মুকুটমণিপুর ও দুর্গাপুর ব্যারাজের জল দ্বারকেশ্বর ও গন্ধেশ্বরী নদীতে ফেলে সেই জল পাম্পহাউসগুলির মাধ্যমে শহরে সরবরাহ করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy