Advertisement
E-Paper

সুপারি কিলার দিয়েই খুন, দাবি পুলিশের

শুক্রবার রাতে পাড়া থানার আনাড়ার শ্যামপুর গ্রামে হানা দিয়ে বাড়ি থেকে পুলিশ দীপুকে গ্রেফতার করেছে। শনিবার তাকে রঘুনাথপুর আদালতে তোলা হলে ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজত হয়। কাশীপুর ব্লক যুব তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক হামিদের দেহ এ দিন পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের মর্গে ময়না-তদন্ত করা হয়।  

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:২৯
হামিদ আনসারি। ধৃত সুদীপ্ত রায়চৌধুরী। (ডানদিকে)।

হামিদ আনসারি। ধৃত সুদীপ্ত রায়চৌধুরী। (ডানদিকে)।

যুব তৃণমূল নেতাকে খুন করেছে সুপারি কিলারেরা। আদ্রার হামিদ আনসারিকে খুনের ঘটনায় জড়িত অভিযোগে এক জনকে গ্রেফতার করে এমনই দাবি করছে পুলিশ। তদন্তকারীদের দাবি, পুলিশের খাতায় ধৃত সুদীপ্ত রায়চৌধুরী ওরফে দীপুর পরিচিতি সুপারি কিলার বা ভাড়াটে খুনি হিসাবে। তার বিরুদ্ধে কয়েকটি খুনের মামলা রয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য অপরাধমূলক কাজেও তার নাম জড়িয়েছে।

শুক্রবার রাতে পাড়া থানার আনাড়ার শ্যামপুর গ্রামে হানা দিয়ে বাড়ি থেকে পুলিশ দীপুকে গ্রেফতার করেছে। শনিবার তাকে রঘুনাথপুর আদালতে তোলা হলে ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজত হয়। কাশীপুর ব্লক যুব তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক হামিদের দেহ এ দিন পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের মর্গে ময়না-তদন্ত করা হয়।

তবে, এ দিনও হামিদের খুনের কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি। ধন্দে হামিদের পরিবারও। খুনের কারণ ঠিক কী, সে বিষয়ে ভাঙতে চাইছেন না জেলা পুলিশের কর্তারাও। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার আকাশ মাঘারিয়া শনিবার বলেন, ‘‘সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে তদন্ত চলছে। দ্রুত খুনের কারণ স্পষ্ট হয়ে যাবে।”

শুক্রবার বেলা ১১টা নাগাদ রঘুনাথপুর থেকে আদ্রায় বাড়ি ফেরার পথে মিছিরডি গ্রামের রেলগেটের কাছে আততায়ীদের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যান হামিদ। তাঁর মুখে, পিঠে, কোমরে ১১টি গুলি ঢুকেছিল। হেলমেটের কাচ ভেঙেও মুখ গুলি চালিয়েছিল আততায়ীরা। ঘটনার পরের ২৪ ঘণ্টায় তদন্তে পুলিশ কর্মীরা মনে করছেন, এ কাজ ভাড়াটে খুনিদের দিয়েই করানোর সম্ভাবনা বেশি। তারা অল্প সময়ের মধ্যে মৃত্যু নিশ্চিত করতে অতগুলি গুলি চালিয়েছিল। গুলির খোল দেকে পুলিশের অনুমান, ৯ এমএম ও দেশি পিস্তল ব্যবহার করা হয়েছে।

দেহ ঘিরে শোকার্ত পরিজনেরা।

কিন্তু, এই খুনের ‘মাস্টার মাইন্ড’ কে?

ঘটনার পরেই তদন্তে নামেন পুরুলিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার চন্দ্রশেখর বর্ধন এবং এসডিপিও (রঘুনাথপুর) সত্যব্রত চক্রবর্তী। রাতে আদ্রায় যান পুলিশ সুপার। আদ্রা থানায় তিনি পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ তদন্ত নিয়ে আলোচনা করেন।

চাপা স্বভাবের হামিদ কখনই তাঁদের কাছে হামলার আশঙ্কার কথা জানাননি বলে শুক্রবার দাবি করেছিলেন হামিদের ঘনিষ্ঠেরা। রাতে হামিদের বাড়িতে গিয়ে তাঁর স্ত্রী হুসনেবানুর সঙ্গে কথা বলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। সূত্রের খবর, হামিদের স্ত্রী পুলিশকে জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাতে হামিদ রঘুনাথপুর এলাকার এক ব্যবসায়ীর কাছে গিয়েছিলেন। শুক্রবার সকালে ফের ফোন পেয়ে ওই ব্যবসায়ীর কাছে যান। পুলিশের অনুমান, সেখান থেকে ফেরার সময়েই আততায়ীরা তাঁকে খুন করে।

ঘটনা হল, নিহত নেতা রেলের ছোটখাটো ঠিকাদারির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সংখ্যালঘুদের নিয়ে একটি সংগঠনও তৈরি করছিলেন। ফলে খুনের পিছনে রাজনৈতিক কারণ, না কি রেলের ঠিকা সংক্রান্ত বিবাদ, না কি অন্য কিছু আছে— একে একে সব সম্ভাবনাই খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

বাড়ির সামনে দিয়ে চলেছে শেষযাত্রা।

শুক্রবার বিকেলে আদ্রা থানা থেকে হামিদের দেহ পাঠানো হয় রঘুনাথপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। সেখান থেকে শনিবার সকালে পুরুলিয়ায় পাঠিয়ে দেহের ময়না-তদন্ত করায় পুলিশ। পরে পুরুলিয়ায় তৃণমূলের জেলা অফিস ঘুরিয়ে দেহ আনা হয় দলের কাশীপুর ব্লক অফিসে। সেখানে দেহে মালা দেন বিধায়ক স্বপন বেলথরিয়া-সহ নেতারা। তারপরে দেহ আদ্রার ডিভিসি মোড়ে বেকো অঞ্চলের দলীয় অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে মিছিল করে দেহ নিয়ে যাওয়া হয় পলাশকোলায় হামিদের বাড়িতে। পলাশকোলায় গিয়ে হামিদের দেহে ফুল দেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো ও পুরুলিয়ার সাংসদ মৃগাঙ্ক মাহাতো।

বাড়িতে পৌঁছতেই হামিদের দেহের উপরে আছড়ে পড়েন তাঁর স্ত্রী। দূরে দাঁড়িয়ে ছিল তাঁর সাত বছরের ছেলে রেহান। কী হয়েছে, বোঝার ক্ষমতা নেই অতটুকু ছেলের। হামিদের বন্ধুরা তাকে কোলে করে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যায়। পড়শিরা জানান, নানা সমস্যায় এলাকার মানুষজন পাশে পেতেন হামিদকে। এ দিন তাঁর শেষযাত্রায় শামিল হন বহু মানুষ।

ছবি: সঙ্গীত নাগ ও নিজস্ব চিত্র

Murder Contract Killing Adra TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy