Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

করোনাভাইরাস-সতর্কতা, গান বাঁধছেন বাউলেরাও

ফেসবুকে ঘুরছে নারায়ণের গানের ভিডিও। প্রবীণ এই লোকশিল্পীর পরনে গেরুয়া পাঞ্জাবি।

 বার্তা: মাস্ক পরে শান্তিনিকেতনের আনন্দ ক্ষ্যাপা। নিজস্ব চিত্র

বার্তা: মাস্ক পরে শান্তিনিকেতনের আনন্দ ক্ষ্যাপা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
নিজস্ব সংবাদদাতা দুবরাজপুর, শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০২০ ০২:০৮
Share: Save:

দোতারায় আঙুল সুর তুলছে। করোনাভাইরাস নিয়ে গান বেঁধেছেন দুই বাউল শিল্পী। একদজনের গান ইতিমধ্যেই ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। অন্যজন, গান শোনাচ্ছেন পথে পথে। প্রথমজন খয়রাশোলের ভাড্ডির নারায়ণ কর্মকার। দ্বিতীয়জন শান্তিনিকেতনের আনন্দ ক্ষ্যাপা।

ফেসবুকে ঘুরছে নারায়ণের গানের ভিডিও। প্রবীণ এই লোকশিল্পীর পরনে গেরুয়া পাঞ্জাবি। হাতে খঞ্জনি। করোনা সচেতনতায় একের পর এক স্বরচিত গান গেয়ে চলেছেন আর সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্ট করছেন তিনি। কোনও গানে করোনা রোগ সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়েছে। কোনওটি স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশ মেনে জনগনকে সচেতন থাকার বার্তা। ইতিমধ্যেই রীতিমত সাড়া ফেলেছে গানগুলি। তাঁর বন্ধুরাও গানগুলি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছেন।

‘করোনাভাইরাসের কথা বিশ্ব জুড়ে হেথা সেথা, / কি রোগ ওটা, কেমন পারা ভাই’ বা ‘জগতে করোনাভাইরাস এসেছে / কি করো, আর কী করোনা, স্বাস্থ্য শিক্ষা ভেবে বলছে।’ ‘করোনাভাইরাস সরাতে থাকরে মন সচেতন / কী ভাবে কোন ব্যবস্থায় বাঁচবে সুখের এ জীবন।’ নিজেই সুর দিয়েছেন এই গানগুলিতে।

বিশ্বজুড়ে ত্রাসের চেহারা নিয়েছে করোনাভাইরাস কোভিড-১৯। আমাদের দেশেও সময় যতো গড়াচ্ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যাও ততোই বাড়ছে। দেশে যাতে সংক্রমণ লাফিয়ে লাফিয়ে না বাড়ে, তার জন্য সব রাজ্য সরকারগুলোকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে বলেছে কেন্দ্র। সেই পথে হাঁটছে রাজ্য সরকারও। ভয়াবহ পরিস্থিতি এড়াতে সচেতনতাই যে একমাত্র পথ তা নিয়ে নিত্য আলোচনা চলছে। সচেতন নাগরিকদের পাশাপাশি সচেতনতা বাড়াতে এগিয়ে এসেছন শিল্পীরাও। সেই তালিকায় জুড়ে গিয়েছেন জেলার বাউল শিল্পী নারায়ণ কর্মকারের নামও।

যতই ব্যানার বা পোস্টার লাগানো হোক না কেন, সাধারণ নাগরিকের কাছাকাছি পৌঁছাতে হলে জনপ্রিয় মাধ্যম গুলোর সাহায্য নেওয়া ছাড়া গতি নেই। স্বাক্ষর-নিরক্ষর, গ্রামীণ-শহুরে নির্বিশেষে সকলের কাছে পৌঁছানো যায় গানের মাধ্যমে। মুম্বইয়ের গায়কই হোন বা গ্রাম বাংলার লোকশিল্পী সকলেই যে যাঁর মতো করে করোনা সচেতনতায় এগিয়ে এসেছেন। বিখ্যাত হয়েছে পড়শি বাংলাদেশের কিশোর গালি বয় খ্যাত রানা তাবীরের গান। সেখানে গরিব পথশিশুদের কথা ভাবতে অনুরোধ করা হয়েছে এই জরুরি অবস্থায়। সোশ্যাল মিডিয়া খুললেই বিভিন্ন ভাষায় সচেতনতার নানা পোস্ট চোখে পড়ছে। নারায়ণের কাছে যে কোনও বিষয়ে মুহূর্তে গান বেঁধে ফেলাটা সহজাত বিষয়। শিল্পীর কথায়, ‘‘বিশ্বের কঠিনতম পরিস্থিতিতে সকলেরই কিছু দায়িত্ব থাকে। আমাদের মতো শিল্পীরা গান বেঁধে যদি কিছু মানুষ, বিশেষ করে যাঁরা নিরক্ষর, তাঁদেরকে এই মারণ রোগ নিয়ে সচেতন করতে পারি, সেটাই প্রাপ্তি।’’

থেমে নেই শান্তিনিকেতনের বাউল আনন্দ ক্ষ্যাপাও। গান বেঁধেছেন ‘আমরা সাবধানেতে থাকবো রে ভাই, করোনা তে করবে কী? / সাবান দিয়ে হাত ধোয়া চাই রে ভাই, স্পিরিট দিয়ে হাত ধোয়া চাই।’ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে সরকারি ও বেসরকারি নানা মহলের তরফ থেকে নানান সচেতনতামূলক প্রচারের পদক্ষেপ করা হচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই প্রচারের মাধ্যম হিসেবে, গান বা নাটককেই বেছে নেওয়া হয়। এই উদ্দেশ্য নিয়েই করোনাভাইরাস সম্পর্কে সতর্কতায় গান বেঁধেছেন বোলপুরের আনন্দ ক্ষ্যাপা বাউল। গানের প্রতিটি ছত্রে তিনি প্রয়োজনীয় সাবধানতা গুলির উল্লেখ করেছেন। এমনিতেই শান্তিনিকেতন বাউল গানের জন্য প্রসিদ্ধ। সেখানে তাঁর এই প্রচার রীতিমতো সাড়া ফেলেছে। তিনি বলেন, “সবার উচিত গুজব না ছড়িয়ে, সাবধানতা প্রচার করা। একজন ভারতীয় হিসেবে আমার পক্ষে এ ব্যাপারে যেটুকু করা সম্ভব আমি তাই করার চেষ্টা করলাম।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Music
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE