Advertisement
E-Paper

একই দিনে দুর্ঘটনায় মৃত দম্পতি-সহ ৪

‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ নিয়ে লাগাতার প্রচার করা হচ্ছে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে। অথচ পরিসংখ্যান বলছে, জেলায় দিন দিন দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে।

তন্ময় দত্ত

শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:১৫
এমনই হাল হল অটোর। ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনার পরে। পালোয়ানবাবার মাজারের কাছে। Bনিজস্ব চিত্র.

এমনই হাল হল অটোর। ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনার পরে। পালোয়ানবাবার মাজারের কাছে। Bনিজস্ব চিত্র.

জাতীয় সড়ক যেন মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে উঠেছে নলহাটি, মুরারইয়ে। মঙ্গলবার ভোর থেকে বিকেলের মধ্যে ওই দুই এলাকায় পৃথক পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল এক দম্পতি-সহ চার জনের। সব দুর্ঘটনাই ঘটেছে পানাগড়-মোরগ্রাম ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে। এবং প্রতিটি ক্ষেত্রেই দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে লরি বা ট্রাক। ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ নিয়ে লাগাতার প্রচার করা হচ্ছে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে। অথচ পরিসংখ্যান বলছে, জেলায় দিন দিন দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে।

এ দিন সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনাটি ঘটনাটি ঘটে নলহাটি থানার গোপালপুর গ্রামের কাছে, জাতীয় সড়কে। মোটরবাইকে রামপুরহাট শহরে ডাক্তার দেখাতে গিয়েছিলেন রফিকুল ইসলাম (৩৫) ও তাঁর স্ত্রী পরভীন বিবি (৩০)। ফেরার পথে গোপালপুর গ্রামের কাছে ওই মোটরবাইকে পিছন থেকে ট্রাক ধাক্কা মারলে ঘটনাস্থলেই স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যু হয়। দম্পতির বাড়ি নলহাটি থানারই আন্দিপুর গ্রামে। খবর পেয়ে পুলিশ এসে মৃতদেহ উদ্ধার করে রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলা হাসপাতালে ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়। দুর্ঘটনার পরে বেশ কিছুক্ষণ জাতীয় সড়ক অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। দম্পতির মাথায় হেলমেট ছিল না বলেও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত দম্পতির কোনও সন্তান ছিল না। রফিকুল পেশায় কৃষক। দশ বছর আগে তাঁদের বিয়ে হয়েছিল। সন্তানহীনতার চিকিৎসা করাতে এ দিন রামপুরহাট গিয়েছিলেন ওই দম্পতি। রফিকুলের মা মুর্শেদা বিবি আক্ষেপ করে বলছিলেন, ‘‘ছেলে বলেছিল, বউমাকে ডাক্তার দেখিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরবে। কোথা থেকে কী হয়ে গেল, বুঝতে পারছি না। ওদের মাথায় হেলমেট থাকলে হয়তো প্রাণে বেঁচে যেত।’’ দম্পতির মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেছে আন্দিপুরে।

এর আগে দিনের প্রথম ঘটনাটি ঘটে মঙ্গলবার ভোররাতে, নলহাটির পালোয়ান বাবার মাজারের কাছে। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম ছোট্টু মাল (২৬)। বাড়ি রামপুরহাট পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে। তিনি পিক-আপ ভ্যানের খালাসি। স্থানীয় সূত্রের খবর, এ দিন ভোরে পিক-আপ ভ্যানে টোম্যাটো বোঝাই করতে ছোট্টু নলহাটি থানার চামটি বাগানে গিয়েছিলেন। পালোয়ান বাবার মাজারের কাছে গাড়ি দাঁড় করিয়ে কাচ পরিষ্কার করার সময় আচমকাই দ্রুত গতিতে আসা একটি লরি ওই পিক-আপ ভ্যানে ধাক্কা দেয়। ঘটনাস্থলেই মারা যান ছোট্টু।

ওই জায়গাতেই এ দিন সকালে আর একটি পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় মদন জাটুয়া (৪৫) নামে এক ব্যক্তির। তাঁর বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবার। এ দিন ভোরে অটোরিকশায় তারাপীঠ থেকে সপরিবার নলাটেশ্বরী মন্দিরে পূজো দিতে যাচ্ছিলেন মদনবাবু। সঙ্গে ছিলেন মা দাসু জাটুয়া, বোন মামণি এবং স্ত্রী প্রীতিলতা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ওই অটোর সামনে থাকা একটি বালি বোঝাই ট্রাক ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরে পালোয়ান বাবার মাজারের কাছে হঠাৎ দাঁড়িয়ে যায়। নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পেরে অটোটি সজোরে ট্রাকের পিছনে ধাক্কা মারে। মদনবাবু ঘটনাস্থলেই মারা যান। তাঁর স্ত্রী, মা, বোন এবং অটো চালক মিঠুন মণ্ডল গুরুতর জখম অবস্থায় রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। প্রীতিলতাদেবীর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর।

স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, জাতীয় সড়কের এই অংশে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। কিছু লোক অবৈধ ভাবে ওইখানে ট্রাক ও লরি থেকে টাকা তোলে। সেই তোলা এড়াতে অনেক চালক দ্রুত গতিতে ট্রাক-লরি চালান। এর ফলে দুর্ঘটনা বাড়ছে। ওই সব ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিক প্রশাসন—এমনই দাবি এলাকার মানুষের।

অন্য দিকে, এ দিনই মুরারই থানার ঘুষকিড়া–মুরারই রাস্তায় পেট্রল পাম্প থেকে মোটরবাইকে তেল ভরে বেরোতে গিয়ে লরির ধাক্কায় জখম হন মসিবুল রহমান (২৯)। তাঁর বাড়ি মুরারই থানার বিশোর গ্রামে। তাঁকে প্রথমে মুরারই ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও পরে রামপুরহাট মেডিক্যালে ভর্তি করানো হয়।

বস্তুত, নলহাটি, মুরারইয়ে লরি ও ট্রাকের দাপট যে ভাবে দিনদিন বেড়ে চলেছে, তাতে এমন দুর্ঘটনা আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় মানুষ। তাঁদের ক্ষোভ, জাতীয় সড়ক তো বটেই, মুরারই, নলহাটির ছোটখাট রাস্তাতেও বেপরোয়া ভাবে ট্রাক-লরি চলে। বিশেষ করে জাতীয় সড়কে যান নিয়ন্ত্রণের দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। নলহাটি শহরের বাসিন্দা শুভদীপ দাস বলেন, ‘‘ট্রাক-লরি যেমন বেপরোয়া, তেমনই কিছু মানুষের সচেতনতার অভাবেও দুর্ঘটনা ঘটছে। জাতীয় সড়কে গাড়ির সংখ্যা বাড়লেও রাস্তা সম্প্রসারণ হয়নি। রাস্তা মেরামতির কাজ চলছে খুব ধীর গতিতে। প্রশাসনকে আরও সজাগ হতে হবে। দ্রুত গতির যানগুলিকে চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তি দিতে হবে।’’ হেলমেটবিহীন বাইক-আরোহীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াও দরকার বলে বাসিন্দারা মনে করছেন।

এসডিপিও (রামপুরহাট) সৌম্যজিৎ বড়ুয়া বলেন, ‘‘জাতীয় সড়কের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করব। তোলা আদায়ের বিষয়টি আমার জানা নেই। যদি কেউ অবৈধ ভাবে টাকা তোলে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

Accident Death Birbhum
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy