Advertisement
E-Paper

পুরনো সেতুর লোহার খাঁচায় আটকে ছিল পা

কংসাবতীই ফিরিয়ে দিল শুভঙ্করের দেহ! রবিবারের ছুটির দুপুরে বন্ধুদের সঙ্গে কংসাবতীতে স্নান করতে গিয়েছিল পুরুলিয়া শহরের নডিহা এলাকার বাসিন্দা, বছর আঠারোর শুভঙ্কর মাহাতো। ফেরেনি আর। আস্ত দিন-রাত পেরিয়ে গেলে, সকলেই ধরে নেয় বর্ষার কংসাবতীর চোরাস্রোতে তলিয়ে গিয়েছে সে। নদীবক্ষে যেখানে চোরাস্রোতে সে তলিয়ে গিয়েছিল বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করা হয়েছিল, সোমবার সেখান থেকে বেশ খানিকটা দূরে মিলল তার দেহ।

প্রশান্ত পাল

শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৫ ০১:০৯
মৃত শুভঙ্কর মাহাতো।

মৃত শুভঙ্কর মাহাতো।

কংসাবতীই ফিরিয়ে দিল শুভঙ্করের দেহ!
রবিবারের ছুটির দুপুরে বন্ধুদের সঙ্গে কংসাবতীতে স্নান করতে গিয়েছিল পুরুলিয়া শহরের নডিহা এলাকার বাসিন্দা, বছর আঠারোর শুভঙ্কর মাহাতো। ফেরেনি আর। আস্ত দিন-রাত পেরিয়ে গেলে, সকলেই ধরে নেয় বর্ষার কংসাবতীর চোরাস্রোতে তলিয়ে গিয়েছে সে। নদীবক্ষে যেখানে চোরাস্রোতে সে তলিয়ে গিয়েছিল বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করা হয়েছিল, সোমবার সেখান থেকে বেশ খানিকটা দূরে মিলল তার দেহ।
‘‘কী করে কী হল বলুন তো! জলে তো ওর ভয় ছিল!’’
নদী থেকে কয়েক জন যুবক যখন শুভঙ্করের দেহ তুলে আনছেন, কান্নায় ভেঙে পড়ে বলছিলেন তার বাবা গোপেশ্বরবাবু। নদীর ধারেই পুলিশের পক্ষ থেকে একটি অস্থায়ী ক্যাম্প করা হয়েছিল। সেই ক্যাম্পেই এ দিন ভোর থেকে চুপচাপ ঠায় বসেছিলেন তিনি। যদি কোনওভাবে অসুস্থ অবস্থাতেও ছেলেকে খুঁজে পাওয়া যায়! যত সময় গড়িয়েছে, ততই হতাশায় ডুবে গিয়েছেন তিনি। শেষমেষ শুভঙ্করের দেহ যখন উঠল, নিজেকে আর সামলে রাখতে পারলেন না!
ঘড়িতে তখন আড়াইটে। স্থানীয় বাসিন্দাদের তৎপরতায় জল থেকে নিথর দেহ উঠল শুভঙ্করের। জলের নীচ থেকে উদ্ধারকারীদের দাবি, নদীর জলের নীচে থাকা পুরনো সেতুর স্তম্ভের লোহার খাঁজে তার পা আটকে গিয়েছিল। ঘটনাস্থলে ছিলেন, জেলা পুলিশের ডিএসপি(শৃঙ্খলা ও প্রশিক্ষণ) কুন্তল বন্দ্যোপাধ্যায়। উদ্ধারের পর বলেন, ‘‘যেখানে তলিয়ে গিয়েছিল বলে মনে করা হচ্ছিল, সেখান থেকে খানিকটা দূরে নদীর জলের নীচে থাকা কোনও লোহার খাঁজে শুভঙ্করের পা আটকে গিয়েছিল। পুলিশের বিপর্যয় ব্যবস্থাপন দল, সিভিল ডিফেন্সের সদস্য ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। দেহটি ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে।’’

রবিবার সকালে টিউশনি সেরে বাড়িতে সামান্য কিছু মুখে দিয়েই বেরিয়ে গিয়েছিল হুড়ার লক্ষণপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের কৃষি বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র শুভঙ্কর। পশ্চিম মেদিনীপুরের নয়াগ্রামের বালিগেড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা গোপেশ্বরবাবু একটি নিরাপত্তারক্ষী সংস্থায় কাজ করার সুবাদে পুরুলিয়া শহরে অনেকদিন ধরেই ভাড়া বাড়িতে থাকেন। তাঁর দাবি, ‘‘ছেলে টিউশনি করে বাড়ি ফেরার পরে ওর মোবাইলে কেউ ফোন করে। সঞ্জু নামের কেউ ফোন করেছিল। আমাকে কিছু বলে যায়নি। ওর মাকে বলে গিয়েছিল যে কংসাবতী নদীতে যাচ্ছে। আমি আর কিছুই জানতাম না। তার পর তো আর ফিরল না!’’

শুভঙ্কর কংসাবতীর চোরাস্রোতে তলিয়ে যাবার পরে এ দিন বিকেল থেকে পুলিশের উদ্যোগে নদীর বুকে জোর তল্লাশি শুরু হয়। তাঁর সঙ্গেই নদীতে স্নানে যাওয়া বন্ধুদের কথায়, শুভঙ্কর যে নদীতে নেমে তলিয়ে গিয়েছে তা প্রথমে তাঁদের কারোরই চোখে পড়েনি। নদীর পাড়ে থাকা কয়েকজন বাসিন্দাই তাঁদের জানায় যে, তাদের এক বন্ধু তলিয়ে গিয়েছে। হুঁশ ফিরে নিজেরা কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করে হতাশ হয়ে পুলিশে খবর দেয়।

তখনও পাওয়া যায়নি শুভঙ্করের দেহ। কংসাবতীর বুকে চলছে জোর তল্লাশি। সোমবার ছবিটি তুলেছেন সুজিত মাহাতো।

পুলিশ সন্ধ্যে পযর্ন্ত কংসাবতীর শিমূলিয়া ঘাটের পাড়ে দাঁড়িয়ে উদ্ধারের কাজ চালায়। জলের নীচে নামানো হয় ওয়াটার ক্যামেরা। কিন্তু জল ঘোলা এবং স্রোতের টান থাকায় ওয়াটার ক্যামেরা থেকে কোনও সূত্র মেলেনি। রবিবার সন্ধ্যের পরে তল্লাশি অভিযান থামিয়ে সোমবার ভোর থেকে ফের শুরু হয় তল্লাশি। রাজ্য সশস্ত্র পুলিশের ৭ নম্বর ব্যাটেলিয়ান থেকে বিপর্যয় মোকাবিলা দলের (ডিএমজি) সদস্যদের নিয়ে আসা হয়। কিন্তু, সকাল থেকে দুপুর অবধি কোনও হদিস মেলেনি শুভঙ্করের। সোমবার তল্লাশি করে উদ্ধারকারী দুযোর্ধন মাহাতো ও আসলাম আনসারি বলেন, ‘‘আমরা নদীতে তল্লাশি চালাচ্ছিলাম। এক জায়গায় চোখে পড়ে জলের অনেকটা নীচে মাথার চুল। ততক্ষণে নদীর স্রোত আগের দিনের থেকে খানিকটা কমে গিয়েছিল। মাথা দেখে সন্দেহ হয়, এখানেই থাকতে পারে। জলের নীচে ডুব দিয়ে দেখি ছেলেটার পা পুরনো সেতুর লোহার খাঁজে আটকে রয়েছে। পা ছাড়িয়ে ছেলেটাকে তুলে আনি।’’

পুলিশ এ দিন তার দেহ পুরুলিয়া মফস্সল থানায় নিয়ে আসার পরে গোপেশ্বরবাবু বলেন, ‘‘ও জলকে ভয় করে। সাঁতার জানে না। কোনওদিন কংসাবতী নদীতে যায়নি। এটা নিছক দুর্ঘটনা বলে আমার মনে হচ্ছে না।’’ তাঁর যুক্তি, ‘‘ওর স্যান্ডো গেঞ্জি ছেঁড়া অবস্থায় মিলেছে। তার থেকে মনে হচ্ছে ওকে জলে নামাতে টানাহ্যাঁচড়া করা হয়েছিল। নাহলে আর কারও পোষাক তো ছেঁড়া মেলেনি। আমি পুলিশকে তা তুলে দিয়েছি। তাছাড়া নদীর সেতুর রেলিঙের উপরে রাখা ছিল ওর পোষাক। পুরো একটা দিন জলের নীচে থাকার পরেও ওর দেহ ফোলেনি! পুলিশকে গোটা ঘটনাটি তদন্ত করে দেখতে অনুরোধ জানাব।’’

অতিরিক্ত পুলিশসুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ময়না তদন্তের রিপোর্টে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে। রবিবার ঠিক কি হয়েছিল শুভঙ্করের বন্ধুদের কাছ থেকেই তা জানা হবে।’’

—নিজস্ব চিত্র

Kangsabati dead body purulia police super
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy