Advertisement
E-Paper

বিয়ের আসরে দেখা,  বিয়ে করেই জুটি বাঁধা

 স্কুল ছাড়ার দীর্ঘদিন পরে দু’জনের দেখা হয়েছিল একটি বিয়ের আসরে। তারপরে যা হয়। বেরিয়ে আসছিল, জমে থাকা সুখ-দুঃখের কথা, ছেলেবেলার স্মৃতি। সবই চলছিল হাত ও মুখের ইশারায়। তাঁদের দেখে আত্মীয়দের মধ্যে কানাঘুষো শুরু হয়—আহারে, দু’জনেই মূক-বধির। ওদের বিয়ে দিলে ভালই জুটি হবে।

প্রশান্ত পাল

শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:৪৯
দম্পতি: পুরুলিয়া শহরে। নিজস্ব চিত্র

দম্পতি: পুরুলিয়া শহরে। নিজস্ব চিত্র

স্কুল ছাড়ার দীর্ঘদিন পরে দু’জনের দেখা হয়েছিল একটি বিয়ের আসরে। তারপরে যা হয়। বেরিয়ে আসছিল, জমে থাকা সুখ-দুঃখের কথা, ছেলেবেলার স্মৃতি। সবই চলছিল হাত ও মুখের ইশারায়। তাঁদের দেখে আত্মীয়দের মধ্যে কানাঘুষো শুরু হয়—আহারে, দু’জনেই মূক-বধির। ওদের বিয়ে দিলে ভালই জুটি হবে।

পুরুলিয়া শহরের নিমটাঁড় এলাকার মূক-বধির সীমা দেওঘরিয়ার যে কোনও দিন বিয়ে হবে, সে আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন পরিজনেরা। একই অবস্থা ছিল পুরুলিয়া শহরের ভাটবাঁধের বাসিন্দা মূক-বধির গোপাল মুখোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রেও। দু’জনের বয়সই চল্লিশের কাছাকাছি।

কিন্তু মাস তিন-চারেক আগে শহরের সেই বিয়ে বাড়িতে দুই পুরনো সহপাঠীর সাক্ষাৎ-ই সব ওলটপালট করে দিল। অন্যের বিয়ের অনুষ্ঠানে আসা দু’জনে বাধা পড়ে গেলেন চিরদিনের জন্য। বৃহস্পতিবার এলাকার একটি কালীমন্দিরে গোপাল ও সীমার বিয়ে হয়ে গেল।

নিমটাঁড় নিউ কলোনির বাসিন্দা সীমার মা অঞ্জনা দেওঘরিয়া বলছিলেন, ‘‘আমার মেজ ও ছোট দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বড় মেয়ে সীমা কথা বলতে পারে না বলে এত দিন ওর বিয়ের কথা ভাবিনি। সে নিজেও ভাবত না। কিন্তু উপরওয়ালা ঠিক ওর জন্য পাত্র খুঁজে দিলেন।’’

অঞ্জনাদেবীর কথায়, ‘‘পাড়ায় একটি বৌভাতের আসরে মেয়েকে নিয়ে গিয়েছিলাম। সেখানেই দেখি মেয়ে একটি ছেলের সঙ্গে ইশারায় হাসিমুখে ‘কথা’ বলছিল। পরে জানতে পারি, ছেলেটি ওর সঙ্গেই মূক-বধির স্কুলে পড়ত। পরিচিতেরা দু’জনের চার হাত এক করার প্রস্তাব দিতে আমি লুফে নিই।’’ অঞ্জনাদেবী সেখানেই গোপালকে জানান, তিনি বিয়েতে সম্মত হলে তাঁর পরিবারের লোকেরা যেন খবর দেন। পাত্রপক্ষের বাড়ির লোকজনের মতামত জেনে কনেপক্ষ বিয়ের কথা পাড়েন। এরপরে সাতপাকে বাঁধা পড়াটা ছিল সময়ের অপেক্ষা।

গোপালের মা রূপালিদেবীর কথায়, ‘‘ছেলে কথা বলতে পারে না। কিন্তু এই বিয়ে নিয়ে ওর মত রয়েছে দেখে আমরাও আর না করিনি।’’ গোপালের বড়দা মনোজ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ভাইয়ের পছন্দ জেনে আমরাও মত দিয়েছি।’’

ছত্তীসগঢ়ের বিলাসপুরের শুভেন্দুচন্দ্র সাহা আর বীরভূমের আমোদপুর লাগোয়া ঈশ্বরপুরের তুলসী শর্মা দু’জনেই মূক-বধির। ফেসবুকের সূত্রে দু’জনের পরিচয় থেকে প্রেম। মঙ্গলবার তাঁদের বিয়ে হয়েছে। সে দিক থেকে গোপাল ও সীমা দু’জনে এক শহরে থাকলেও স্কুল ছাড়ার পরে তাঁদের দেখাসাক্ষাৎ হয়নি। তাই ওই বিয়ের আসরে তাঁদের দেখা হওয়াটা কাকতালীয় বলেই মানছেন পরিজনেরা। সীমার দেবীর বোন রিমা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গোপালদাকে অনেক দিন ধরে চিনতাম। এতদিন খোঁজ ছিল না। তাই হঠাৎ করে ওদের দেখা হওয়ার পরে বিয়ে হল দেখে আমরা খুব খুশি।’’

Marriage Deaf and Dumb
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy