দুর্গাপুজো মানেই বাঙালির প্রাণের উৎসব। সেই উৎসবের প্রতিটা মুহূর্তকে ছুঁয়ে থাকে একটাই সুর— ঢাকের বোল। তাই ভিন্ রাজ্যের দুর্গাপুজোয় ডাক পড়ে বাংলার ঢাকিদের। পুরুলিয়া জেলার বহু ঢাকি বরাবরের মতো এ বারও পড়শি রাজ্য ঝাড়খণ্ডের পুজো মণ্ডপ মাতানোর ডাক পেয়েছেন।
বলরামপুর ব্লকের পারদদা গ্রামে পঞ্চাশটিরও বেশি কালিন্দী সম্প্রদায়ের পরিবারের বাস। তাঁরা দুর্গাপুজোর সময়ে ঢাক বাজান। ভাদ্র মাস পড়তেই নতুন ঢাক তৈরি করা থেকে রং করানো, সাজানোর ব্যস্ততা শুরু হয়ে যায়।
এই গ্রামের বাসিন্দা প্রয়াত হরিরাম কালিন্দী ছিলেন এক সময়ের নামকরা নাটুয়া শিল্পী। শুধু বাংলাই নয়, ঝাড়খণ্ড ও দেশের বাইরেও তিনি অনুষ্ঠান করেছেন। সেই ধারা বহন করছেন তাঁর ছেলে ডাক্তার কালিন্দী। পুজোর সময়ে তিনি ঢাকও বাজান। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের গ্রামের একশোর বেশি মানুষ দুর্গাপুজোর সময়ে
ঝাড়খণ্ডের চান্ডিল, জামশেদপুর, রাঁচী প্রভৃতি জায়গায় ঢাক বাজাতে যান। আমাদের বংশানুক্রমে এটা চলে আসছে।’’
আড়শা ব্লকের বড়াম, হেঁসলা প্রভৃতি গ্রাম থেকেও বহু ঢাকি প্রতিবছর ঝাড়খণ্ডে যান। বড়াম গ্রামের ঢাকি শখা কালিন্দী, দুর্গা কালিন্দী বলেন, “বাইরের রাজ্যের মানুষ তাঁদের পুজোয় আমাদের ঢাক বাজাতে ডাকেন, এটা আমাদের গর্বের বিষয়। পুজোর দু’দিন আগেই আমরা রওনা দিই। শুধু অর্থ উপার্জন নয়, সেখানে যে সম্মান পাই, সেটাও একটা বড় প্রাপ্তি।’’
জয়পুর, ঝালদা, কোটশিলা প্রভৃতি এলাকার ডোম সম্প্রদায়ের ঢাকিরাও এই সময়ে পাড়ি দেন ভিন্ রাজ্যে। সারা বছর অন্য পেশায় যুক্ত থাকলেও, ভাদ্র মাস এলেই তাঁরা ঢাকের যত্নে নেমে পড়েন। ঢাক রং করে রঙিন কাপড়ে মোড়া হয়। কেউ কেউ কাশফুলও গুঁজে নেন। তাঁরা জানান, এখন শুধু ঢাকির দক্ষতা থাকলেই হবে না, ঢাকের সাজও হতে হবে আকর্ষণীয়।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)