শুরুটা হয়েছিল রবিবার সকালে। প্রথমে দু’এক জন করে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছিলেন। বিকেলের পরে হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল সেখানে জায়গা পাওয়াই ভার!
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, মানবাজার থানার বলুডি লাগোয়া ভেলাইগোড়া, মধুপুর এবং পাথরমহড়া গ্রামে এ পর্যন্ত অন্তত পঞ্চাশ জন ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। সংখ্যাটা আরও বাড়তে পারে বলে ওই সূত্রের আশঙ্কা। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অনিলকুমার দত্ত বলেন, ‘‘সম্ভবত পানীয় জল থেকে ডায়েরিয়ার উপসর্গ দেখা দিয়েছে। তবে চিকিৎসায় সকলে সুস্থ আছেন। আশঙ্কার কারণ নেই।’’ চিকিৎসার পাশাপাশি সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।
প্রথমে পেট ব্যথা, বার বার পায়খানা সঙ্গে বমির উপসর্গ নিয়ে রবিবার সন্ধ্যায় বলুডি গ্রামের জনা তিরিশেক বাসিন্দা মানবাজার গ্রামীণ হাসপাতালে গিয়েছিলেন। অভিযোগ, এই সময় চিকিৎসকের দেখা না মেলায় রোগীর আত্মীয়েরা বিক্ষোভ দেখান। বিএমওএইচের দেখা না মেলায় জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি হস্তক্ষেপ করলে বিক্ষোভ প্রশমিত হয়।
সোমবার সকাল দশটা নাগাদ জেলা থেকে মেডিক্যাল টিম আসে। কিছু পরে আসেন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিজেই। মেডিক্যাল টিম প্রথমে ভর্তি থাকা রোগীদের দেখেন। পরে স্বাস্থ্যকর্মীদের ওআরএস, ব্লিচিং-সহ প্রয়োজনীয় ওষুধ নিয়ে এলাকায় যাওয়ার নির্দেশ দেন।
মেডিক্যাল টিম এলাকায় গেলে বলুডি গ্রামের লোকজন মাটির তলায় থাকা জলের রিজার্ভারটি দেখিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন। অভিযোগ, মাটির উপরের রিজার্ভারটি বেহাল হয়ে পড়ায় পাঁচ বছর আগে সেটি বাতিল করা হয়েছিল। এরপর থেকে কংসাবতী নদীর হরেকৃষ্ণপুর ঘাট থেকে মানবাজার শহরে সরাসরি নদীর জল সরবরাহ করা হচ্ছে। ভালভ খোলা এবং বন্ধের মাধ্যমে এক একটি এলাকায় জল সরবরাহ করা হয়। বলুডি, ঝাড়বাগদা, মধুপুর, ভেলাইগোড়া, পাথরমহড়া গ্রামে বলুডি গ্রামের ওই রিজার্ভারের জল সরবরাহ করা হয়।
অভিযোগ, এমন গুরুত্বপূর্ণ জলাধারটি দীর্ঘ দিন সংস্কার করা হয়নি। বাসিন্দাদের অভিযোগ, অন্তত কয়েক বছর ধরে এখানে ব্লিচিং-ফিটকিরি কিছুই দেওয়া হয় না। তার ফলে দূষিত হচ্ছে জল। আর তা থেকে ছড়াচ্ছে পেটের রোগ!
সমস্যার কথা মেনেছেন মানবাজার ১ এর বিডিও সত্যজিৎ বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘‘গোটা বিষয়টি রবিবার রাতেই জেলার জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরে জানিয়েছিলাম। সোমবার দুপুরে দফতরের আধিকারিকরা ওই রিজার্ভার পরিদর্শন করেন। তাঁরা জানিয়েছেন রিজার্ভারের জল ফেলে, তলার পলি বের করে জল ভরার পরে নিয়মিত ব্লিচিং এবং ফিটকিরি জাতীয় জিনিস দিয়ে শোধন করা হবে।’’ রিজার্ভারের বেহাল লোহার ঢাকনাগুলিও বদলে দেওয়া হবে বলে আশ্বস্থ করেছেন তিনি। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অনিলবাবু জানিয়েছেন, ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত ওই চারটি গ্রামে নিয়মিত ভাবে স্বাস্থ্যকর্মীরা যাবেন।