Advertisement
E-Paper

নেই দু’পা, সংসার কাঁধে লড়াই চলছে কুরবানের

বছর তিরিশের কুরবান থাকেন নানুরের মুনিগ্রামে। জন্ম থেকেই কোমরের নিচে দু’পা নেই। টেনে-হিঁচড়ে এগোন শরীর। বাবা ইসমাইল শেখ ছিলেন রাজমিস্ত্রি।

অর্ঘ্য ঘোষ

শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:৩৬
দৃঢ়প্রতিজ্ঞ: শেখ কুরবান।

দৃঢ়প্রতিজ্ঞ: শেখ কুরবান।

বাঁচার লড়াইয়ে হাল ছাড়তে নারাজ তিনি। কোমরের নিচ থেকে দু’পা না-ই থাকুক। বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী, ছেলের সংসার টানতে তিনি একাই একশো। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার জেরে জন্মের পর থেকে একের পর এক বাধা এলেও, দৃঢ় প্রত্যয়ে তা রুখেছেন শেখ কুরবান।

বছর তিরিশের কুরবান থাকেন নানুরের মুনিগ্রামে। জন্ম থেকেই কোমরের নিচে দু’পা নেই। টেনে-হিঁচড়ে এগোন শরীর। বাবা ইসমাইল শেখ ছিলেন রাজমিস্ত্রি। তাঁর আয়েই কোনও ভাবে চলত ৩ ভাই, ২ বোন মিলিয়ে ৮ জনের সংসার। বোনদের বিয়ে দিতে বিকিয়ে যায় বাড়ির ঘটিবাটি। টাকার অভাবে অষ্টম শ্রেণির বেশি পড়তে পারেননি কুরবান। খুঁজতে হয় রোজগারের রাস্তা।

কুরবান জানান, এক আত্মীয়ের দোকানে সাইকেল সারাই করতেন প্রথমে। পরে ওই টাকায় দিন কাটছিল না। তত দিনে তিনি বিয়ে করেছেন মনোরা বিবিকে। সংসারে এসেছে ছেলে মুবারক। অন্য ভাইয়েরা ছেড়েছে বৃদ্ধ বাবা-মাকেও। কিন্তু সেই দায়িত্ব এড়িয়ে যাননি কুরবান। একমাত্র ছেলে মুবারক জন্ম থেকেই জটিল স্নায়ুরোগের শিকার। পাঁচ বছরের ছেলেকে নিয়ে বেঙ্গালুরু পর্যন্ত গিয়েছেন কুরবান। লাভ হয়নি তেমন। নিয়মিত ওষুধ দিতে হয় মুরাবককে।

চাপ বহুমুখী। কিন্তু তাতে দমেননি কুরবান। নতুন ভাবে শুরু করেছেন ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই। বিঘাখানেক পৈত্রিক জমি ভাগে পেয়েছিলেন। সেটা বন্ধক রেখে বছরখানেক আগে ৮০ হাজার টাকা দিয়ে কেনেন হস্তচালিত বিশেষ টোটো। সকাল হলেই টোটো নিয়ে তিনি হাজির হন সাওতা বাসস্ট্যান্ডে। যাত্রী নিয়ে ছোটেন নানুর, বোলপুর, কীর্ণাহারে। কুরবানের টোটো এখন ভরসা হয়ে উঠেছে এলাকাবাসীর কাছে। তাঁর মোবাইল নম্বর রয়েছে অনেক বাড়িতেই। দিন তো বটেই, রাতেও বিপদে ফোন করলে টোটো নিয়ে হাজির হন কুরবান।

গ্রামবাসী সুজন শেখ, আফরোজা বিবি বলেন— ‘‘আমাদের এলাকায় গাড়ি নেই। গাড়ি ভাড়া করার মতো সামর্থ্যও নেই। কিন্তু কুরবানের জন্য চিন্তায় থাকি না। জরুরি প্রয়োজনে কত বার অনেক কম টাকা নিয়ে আমাদের নানুর বা বোলপুর হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছেন।’’ সাওতা বাসস্ট্যান্ডে দোকান শেখ সানোয়ার, বসির খানের। তাঁরা জানান, কোনও কারণে হঠাৎ বাস চলাচলে বিভ্রাট হলে যাত্রীদের মুসকিল আসান হয়ে ওঠে কুরবান। ন্যায্য ভাড়ায় গন্তব্যে পৌঁছে দেন। কখনও পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে বেশি ভাড়া চান না। তাঁকে নিয়ে খুশি টোটোস্ট্যান্ডের সহকর্মীরাও। মাধব দাস, শের আলি জানান— ‘‘যান্ত্রিক গোলযোগ বা অন্য কোনও কারণে মাঝপথে আমাদের টোটো আটকে গেলে সাহায্যের হাত এগিয়ে দেন কুরবান।’’ কুরবানের বাবা ইসমাইল শেখ বলেন, ‘‘ও পাশে না থাকলে এই বয়সে কোথায় গিয়ে দাঁড়াতাম কে জানে।’’ কুরবানের স্ত্রী মনোরা বিবি বলেন, ‘‘পরিবারের জন্য সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পরিশ্রম করে। মনেই হয় না ওর কোনও শারিরীক সমস্যা রয়েছে। এমন স্বামী পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।’’ কুরবানের কথায়, ‘‘অনেকের অবজ্ঞা, অবহেলায় ছোটবেলায় পা না থাকার যন্ত্রণা টের পেতাম। লড়াই করে অতীত ভুলেছি।’’ নানুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বানী সাহা বলেন, ‘‘কোনও সরকারি প্রকল্পে তাঁকে সাহায্য করা যায় কি না দেখা হবে।’’

Differently abled Toto Nanoor
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy