Advertisement
E-Paper

পুণ্যস্নানেও জড়িয়ে গেল তরজা

প্রতি বছর মকর স্নান সেরে জয়দেবের শতাব্দী প্রাচীন রাধাবিনোদ মন্দিরে পুজো দেন লক্ষ পুণ্যার্থী। মঙ্গলবার ভোরেও দিয়েছেন। প্রাচীন সেই টেরাকোটার মন্দিরের জীর্ণদশা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে এলাকাবাসীর।

দয়াল সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:৩৮

মকর সংক্রান্তির পুণ্যস্নান ঘিরেও বীরভূম প্রত্যক্ষ করল রাজনীতির চাপানউতোর।

প্রতি বছর মকর স্নান সেরে জয়দেবের শতাব্দী প্রাচীন রাধাবিনোদ মন্দিরে পুজো দেন লক্ষ পুণ্যার্থী। মঙ্গলবার ভোরেও দিয়েছেন। প্রাচীন সেই টেরাকোটার মন্দিরের জীর্ণদশা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে এলাকাবাসীর। এ দিন জয়দেব-কেঁদুলিতে পুণ্য স্নান সেরে মন্দিরের বর্তমান হাল নিয়ে শাসকদলকেই দায়ী করলেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। শুধু মন্দির নিয়ে নয়, মেলার সার্বিক পরিকাঠামোয় ‘খামতি’ আছে বলেও তাঁর অভিযোগ। একই সঙ্গে মেলা প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে রাজনৈতিক অভিযোগও তুলেছেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি।

এ দিন সকালে জয়দেবে পৌঁছে স্নান সেরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সরকারি জয়দেব মেলার পরিকাঠামো থেকে গাড়ি পার্কিংয়ের চার্জ-সহ একাধিক বিষয়ের ‘বিচ্যুতি’ নিয়ে মুখ খোলেন দিলীপবাবু। নিশানায় শাসকদল ও প্রশাসন। তাঁর প্রথম অভিযোগ, ‘‘বীরভূম ও বর্ধমানের মাঝে অজয় নদের তীর, কবি জয়দেবের স্মৃতি বিজড়িত স্থান। অথচ সুপ্রাচীন রাধাবিনোদ মন্দির ভেঙে পড়ছে। তার সংস্কার নেই।” তাঁর কথায়, ‘‘এই জায়গাটা বাংলার লোকসংস্কৃতির কেন্দ্র। বাউল, কীর্তন দিনভর, রাতভর চলছে। মানুষ এখানে আনন্দের সঙ্গে আসেন, স্নান করেন এটাই বাংলার সংস্কৃতি। সেই জন্য এখানে এসেছিলাম সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিলতে, থাকতে।’’ এর পরেই তাঁর অভিযোগ, মেলার প্রস্তুতি সরকারি তরফে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। মেলার রাস্তার বেহাল অবস্থা, হাঁটা যাচ্ছে না, হাঁটতে গেলে মানুষ পড়ে যাবে। তাঁর পরের অভিযোগ, ‘‘১০০ টাকা করে এক একটি গাড়িতে ট্যাক্স নেওয়া হচ্ছে। যতবার গাড়ি আসবে ততবার দিতে হবে। আমার মনে হয়, রাজ্য সরকারের এই মেলায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত।’’

যদিও দিলীপের অভিযোগকে ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছেন শাসকদলের নেতারা। মেলায় পরিকাঠামোগত বিচ্যুতির কথা মানেননি জেলা প্রশাসনের কর্তারাও। জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরীর পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘ওঁর চোখে কি ছানি পড়েছে? কোথায় রাস্তা খারাপ? এত সংখ্যক পুণ্যার্থী মেলায় আসেন। তাঁদের যাতে কোনও সমস্যা না হয়, সে ব্যাপারে যাবতীয় ব্যবস্থা করা হয়েছে প্রশাসনিক ভাবে। চওড়া রাস্তা, পর্যাপ্ত শৌচাগার, বিদ্যুৎ, পানীয় জল, নিরাপত্তা সুনিশ্চিত পর্যাপ্ত পুলিশ দমকল, ওয়াচ চাওয়ার। তা হলে খামতিটা কোথায়?’’

তাঁর দাবি, বীরভূমে এত উন্নয়ন হয়েছে বলেই কেন্দ্রীয় সরকার দু-দু’বার বীরভূমকে সেরা জেলার শিরোপা দিয়েছে। ‘‘আসলে উনি ইতিহাস-ভূগোল জানেন না। মুখে যা আসে তাই বললেই হবে!’’—পাল্টা কটাক্ষ বিকাশবাবুর। রাধাবিনোদ মন্দির প্রসঙ্গেও সভাধিপতির বক্তব্য, আগে দিলীপবাবু জানতে হবে, মন্দির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ বা আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া। তাঁর দাবি, ‘‘বহুবার বলা সত্ত্বেও ওই দফতর কাজে হাত দেয়নি। এ বার আমরা সেকাজ করব।’’ পার্কিং ফি নিয়েও দিলীপের বক্তব্যকে সমর্থন করছেন না প্রশাসনিক কর্তারা। তাঁরা জানান, কোন গাড়ির ক্ষেত্রে কত পার্কিং ফি, সেটা চার্টে স্পষ্ট দেওয়া আছে। মেলার পরিকাঠামোর পাশাপাশি শাসকদলের উদ্দেশে চিমটি কাটতে ছাড়েননি দিলীপ। মকর স্নান নিয়ে সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘বীরভূমে তো সবচেয়ে বেশি পাপ। যত খুনখারাপি, লুটপাট, বোম-বন্দুকের আওয়াজ, সেটা পশ্চিমবাংলার সংস্কৃতি নয়। সেই জন্য এখানেই সবচেয়ে বেশি শান্তি হওয়া উচিত। এখানে স্নান করা উচিত। আর তাহলে মানুষের মন যদি একটু পবিত্র হয়, শুদ্ধ হয়, পরিবেশও শুদ্ধ হয়, আমরা শান্তিতে থাকতে পারব।’’

যা শুনে বীরভূমের জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল বলেন, ‘‘উনি নিজে পাপ করেছেন বলেই এখানে স্নান করতে এসেছেন।’’

Dilip Ghosh Joydev Mela Temple
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy