Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বিসর্জনেও ঐতিহ্য বজায় পঞ্চকোটে

পুজো মানেই এখানে পরম্পরা। মল্লে রা, শিখরে পা, সাক্ষাৎ দেখবি তো শান্তিপুরে যা...। তামাম মানভূম জুড়ে ছড়িয়ে থাকা প্রবাদের আবর্তেই এ বারও মহাসমারোহে দেবীর আরাধনা হয়ে গেল পঞ্চকোট রাজবংশে। 

প্রথা। নিজস্ব চিত্র

প্রথা। নিজস্ব চিত্র

প্রশান্ত পাল
কাশীপুর শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৮ ০৪:০০
Share: Save:

পুজো মানেই এখানে পরম্পরা। মল্লে রা, শিখরে পা, সাক্ষাৎ দেখবি তো শান্তিপুরে যা...। তামাম মানভূম জুড়ে ছড়িয়ে থাকা প্রবাদের আবর্তেই এ বারও মহাসমারোহে দেবীর আরাধনা হয়ে গেল পঞ্চকোট রাজবংশে।

প্রথা মেনে জিতাষ্টমীর পরের দিন থেকে কাশীপুরে রাজবংশের কুলদেবীর মন্দিরে দুর্গাপুজো শুরু হয়েছিল। সেই রীতি মেনেই বিজয়া দশমীর গোধূলি বেলায় বংশের কুলদেবতা শ্যামরঘুবরকে পালকিতে চড়িয়ে বিজয়া যাত্রা হল। এই দিনটিতে রাজবংশের বর্তমান বংশধরেরা ও কাঁহারদের কাঁধে চড়ে শ্যামরঘুবর বিজয়াযাত্রায় বের হয়েছিলেন। তাঁরা যান ছাতামাড়া বেজা বিঁধার ময়দানে। ঐতিহ্য থাকলেও সেই গরিমা এখন ফিকে।

এই রীতির সঙ্গে জুড়ে রয়েছে অকালবোধনের পুজোর ইতিহাস। বর্তমান বংশধর সোমেশ্বরলাল সিংহদেওয়ের কথায়, ‘‘রামচন্দ্র অকালবোধনে দেবীর আরাধনা করেছিলেন। মহানবমীর দিন রামচন্দ্র রাবণকে বধ করেছিলেন বটে। কিন্তু সে দিন তিথি অনুসারে দশমী পড়ে গিয়েছিল। সেই আনন্দে শ্যামরঘুবরকে পালকিতে চড়িয়ে বিজয়া যাত্রা করা হয়। শিখরভূমে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দুর্গাপুজোয় বিজয়া যাত্রার এই রীতি চলে আসছে হাজারেরও বেশি বছর ধরে।’’

১৮৩২ থেকে কাশীপুর পঞ্চকোট রাজবংশের সদর এবং পঞ্চকোটের শেষ রাজধানী। কেশরগড় থেকে যে সময় এই রাজবংশ কাশীপুরে তাঁদের সদর স্থানান্তরিত করেছিলেন, তখনও পুরুলিয়া শহর গড়ে ওঠেনি। ‘‘বিস্তীর্ণ এলাকার মধ্যে তখন শুধু কাশীপুরের পঞ্চকোট রাজবাড়িতেই ধুমধামের সঙ্গে দুর্গাপুজো হত।’’— বলছিলেন রাজবংশের বর্তমান উত্তরপুরুষ জগদানন্দপ্রসাদ সিংহদেও। সেই কথা মনে করিয়ে দেন তিনি, তখন দুর্গাপুজোকে ঘিরে কাশীপুর উৎসবে মেতে উঠত। বিজয়ার দিন হাজার হাজার লোক ভিড় জমাতেন। রাজবাড়ির প্রতিমা যেত বিসর্জনের জন্য কাহারদের কাঁধে। তার পিছনে পালকিতে শ্যামরঘুবর। তার পিছনে হাতির পিঠে রাজা যেতেন ছাতামাড়া বেজা বিঁধার ময়দান পর্যন্ত।

কী হতো সেখানে? তাঁর কথায়, ‘‘ছেলেবেলার সেই শোভাযাত্রার কথা এখনও অল্পস্বল্প মনে রয়েছে। বেজা বিঁধা অর্থাৎ একটা লক্ষ্যবস্তু রাখা হত। নির্দিষ্ট লক্ষ্যে তির ছুঁড়ে যিনি আঘাত করতে পারতেন, তাঁকে রাজদরবারে সম্মানিত করা হত। অন্য প্রজারাও যেতেন রাজার কাছে। এই দিনটিতে পান দরবার বসত। রাজা বিজয়ার দিনে সকলকে পান দিয়ে শুভেচ্ছা জানাতেন।’’

সেই রীতি মেনে আজও অপরাজিতা লতা হাতের বাজুবন্ধে বাঁধেন রাজবংশের সদস্যেরা। তারপরে দেবী বাড়ি সংলগ্ন মন্দির থেকে শ্যামরঘুবরকে পালকিতে চড়িয়ে বিজয় যাত্রার শোভাযাত্রা বেজা বিঁধার ময়দান পর্যন্ত যায়। বংশের আর এক উত্তরপুরুষ ভগবতীপ্রসাদ সিংহ দেও বলেন, ‘‘ওই ময়দানে বেদিতে শ্যামরঘুবরের অধিষ্ঠিত করে তাঁর আরতি করা হয়। জ্বলন্ত প্রদীপ সেই মাঠ থেকে ফের মন্দিরে ফিরিয়ে আনা হয়। প্রণাম করে তাঁর আশীর্বাদ নিয়ে পরিবারের সবাই মাথায় শিরোপা বাঁধেন। তারপরেই আমাদের ষোলো কল্পের পুজো শেষ হয়। এই শিরোপার নাম শ্যামরঘুবরের শিরোপা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Manbhum Panchakot Tradition Durga Puja 2018
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE