Advertisement
০৭ মে ২০২৪
Durga Puja 2020

বাজেটে টান, উধাও ‘থিম’ 

কেবল বাঁকুড়া শহরেই নয়, জেলার বেশিরভাগ বড় পুজো কমিটিই ভিড় এড়াতে ‘থিম’-এর পুজো এড়িয়েই চলছে।

সাদামাটা: ‘থিম’ বাদ। পুরুলিয়া শহরের ভাগাবাঁধপাড়া সর্বজনীনের পুজো এ বছর হবে মন্দিরেই। নিজস্ব চিত্র।

সাদামাটা: ‘থিম’ বাদ। পুরুলিয়া শহরের ভাগাবাঁধপাড়া সর্বজনীনের পুজো এ বছর হবে মন্দিরেই। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০২০ ০১:২৮
Share: Save:

করোনার মার, সংক্রমণের ভয়, বাজেটে টান, সরকারি বিধি-নিষেধ মেনে পুজো—চক্রব্যূহে পড়ে শারদোৎসব হলেও কোপ পড়েছে ‘থিম’-এর আড়ম্বরে। পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া জেলার নানা প্রান্তে ফি বছর চমক লাগানো ‘থিম’ করে লোক-টানা পুজো কমিটিগুলি কার্যত নিয়মরক্ষার পথে হাঁটতে চাইছে এ বছর।

গত কয়েকবছর ধরে পুরুলিয়া, আদ্রা, রঘুনাথপুর, মানবাজার, ঝালদার বড় পুজোগুলি নানা ‘থিম’ করে আসছে। করোনা-আবহে তা বাদ পড়েছে। কেন? উদ্যোক্তাদের মতে, কারণ মূলত তিনটি। প্রথমত, করোনো পরিস্থিতিতে বড় ‘থিম’ পুজো করলেই ভিড় জমতে পারে। যেখানে প্রতিদিন সংক্রমণ বাড়ছে, সেখানে মণ্ডপে ভিড় কোনও ভাবেই কাম্য নয়। দ্বিতীয়ত, করোনা পরিস্থিতিতে রোজগার কমেছে অনেকেরই। তা ছাড়া, সংক্রমণের আশঙ্কায় বাড়ি বাড়ি ঘুরে চাঁদা তোলা সম্ভব হচ্ছে না। পুজোর বাজেট অর্ধেক করতে হয়েছে। আর তৃতীয়ত, মণ্ডপ তৈরির ক্ষেত্রে চারপাশ খোলামেলা রাখার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। তা মানতে হলে ‘থিম’নির্ভর জমকালো মণ্ডপ তৈরি সম্ভবপর নয়।

পুরুলিয়া শহরের অন্যতম দু’টি বড় পুজো নডিহা বারোয়ারি ও ভাগাবাঁধপাড়া সর্বজনীন। আদতে মন্দিরের পুজো হলেও ‘থিম’ভিত্তিক নজরকাড়া মণ্ডপ তৈরি হয়। উদ্যোক্তারাই জানান, এ বার মন্দিরেই পুজো হবে। নডিহার কর্মকর্তা শম্ভু সরকার বলেন, ‘‘বর্তমান পরিস্থিতিতে বাড়ি বাড়ি চাঁদা আদায় সম্ভব নয়। আমরা মাইকে প্রচার করেছি, কেউ স্বেচ্ছায় চাইলে মন্দির এসে চাঁদা দিয়ে যেতে পারেন।” পুজোর বাজেট কম-বেশি ছয় থেকে আট লক্ষ টাকা হলেও এ বছরে তা আপাতত এক লক্ষে দাঁড়িয়েছে বলে জানান তিনি। ভাগাবাঁধ সর্বজনীনের সম্পাদক প্রদীপ মুখোপাধ্যায় জানান, ভিড় এড়াতে মন্দিরে পুজো হবে।

একশো বছর পার করা আদ্রার বাঙ্গালী সমিতি সর্বজনীনের সহকারী সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শহরে সংক্রমণ বাড়ছে। চাঁদা আদায় ঝুঁকিপূর্ণ। বাজেটও অর্ধেক করতে হয়েছে। তার বেশিরভাগ খরচ হবে মণ্ডপে স্বাস্থ্য-বিধি মানার কাজে। থিম তাই বাদ এ বার।’’ রঘুনাথপুর শহরের গ্রামরক্ষী সর্বজনীনের কোষাধ্যক্ষ সুকুমার মণ্ডল, নবীন সঙ্ঘ সর্বজনীনের সহকরী সম্পাদক সু্ব্রত দাসও জানান, সংক্রমণের আশঙ্কায় পুজো হচ্ছে সাদামাটা ভাবে।”

মানবাজারের গ্রাম্য যোগাশ্রম সর্বজনীন পুজোর কর্মকর্তা মনোজ মুখোপাধ্যায় বা ঝালদা শহরের নামোপাড়া সর্বজনীনের কর্মকর্তা অনুপ চোপড়ারাও জানান, ‘থিম’ বাদ দিয়ে পুজো হচ্ছে ছোট করেই।

ফি বছর ‘থিম’-এর বৈচিত্র থাকে বাঁকুড়া শহরের ইঁদারাগড়া হরেশ্বরমেলা সর্বজনীনের পুজোয়। এ বার করোনা-আবহে কোনও রকম ঝুঁকি নিতে রাজি নন পুজো-কমিটির কর্তারা। কমিটির সম্পাদক রমেশ মুরারকার কথায়, ‘‘মণ্ডপ এমন ভাবে তৈরি হচ্ছে, যাতে হাওয়া চলাচল হয়। প্রতিমাও এমন ভাবে রাখা হবে, যাতে দর্শনার্থীদের তা দেখতে ভেতরে ঢুকতে না হয়। এখন মানুষের সুস্থ থাকাটাই বড় চ্যালেঞ্জ। তাই স্বাস্থ্য-বিধি নিয়ে ঝুঁকি নিতে আমরা নারাজ।’’

একই মত বাঁকুড়া শহরের কমরার মাঠ সর্বজনীন দুর্গোৎসব পুজো কমিটির সাংস্কৃতিক পত্রিকার সম্পাদক রাজদীপ দাসমোদকের। তিনি বলেন, “পুজোয় থিম হচ্ছে না। পুজোর বাজেটও কমানো হয়েছে। ভিড় এড়াতে প্রতিমাও বাইরে থেকে দর্শনের ব্যবস্থা হচ্ছে।’’

তবে কেবল বাঁকুড়া শহরেই নয়, জেলার বেশিরভাগ বড় পুজো কমিটিই ভিড় এড়াতে ‘থিম’-এর পুজো এড়িয়েই চলছে। বিষ্ণুপুরের কৃষ্ণগঞ্জ সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির সভাপতি তথা বিষ্ণুপুরের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলার রবিলোচন দে-র বক্তব্য, “এ বারের পুজো হবে সম্পূর্ণ সরকারি নিয়ম মেনে। আমরা কেউ ঝুঁকি নিতে চাই না। খোলামেলা মণ্ডপে সাদামাটা পুজো হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Durga Puja 2020
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE