পুজোর প্রস্তুতি মেতে খুদেরা। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি
প্রথমবার পুজো পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েই সাড়া ফেলে দিয়েছেন লাভপুরের রক্ষাকালীতলা পাড়ার মহিলারা। প্লাস্টিকের যথেচ্ছ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন তাঁরা। বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাঁদা তোলার পাশাপাশি চলছে প্রচার। শুধু পুজোর সময়টুকু নয়, বছরভর যাতে সেই চর্চা থাকে তার জন্যেও নেওয়া হয়েছে উদ্যোগ।
এক সময় এই তল্লাটে পুরুষেরাই পুজোর প্রচলন করেছিলেন। পুজো ঘিরে যাবতীয় পরিকল্পনায় ছিল পুরুষেরই একচেটিয়া অধিকার। আলপনা আঁকা, ভোগ রান্নার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল মহিলাদের যোগদান। কর্মদক্ষতার জোরে পুজো পরিচালনার কর্তৃত্ব এ বারে ছিনিয়ে নিয়েছেন মহিলারা। কর্তৃত্ব পেয়েই অভিনব উদ্যোগও নিয়েছেন।
এক সময় পাড়ায় সরস্বতী, লক্ষ্মী, কালী-সহ অন্য পুজো হলেও ছিল না দুর্গাপুজো। তাই পাড়ার বাসিন্দাদের অঞ্জলি কিংবা পুজো দিতে যেতে হত অন্য পাড়ায়। ঠাকুর দেখতে গেলেও পুজো কিংবা অঞ্জলি দেওয়া হত না। এই পরিস্থিতিতে পাড়ায় দুর্গাপুজোর দাবি ছিলই। গৃহিণীদের আবদার রাখতে পাড়ার ১৫টি পরিবার একত্রিত হয়ে ২৯ বছর আগে দুর্গাপুজোর প্রচলন করেন। কিন্তু ক্রমেই পুরুষদের উৎসাহে ভাঁটা পড়তে থাকে। পুজো বন্ধ হওয়ার আশঙ্কায় মহিলারাই এগিয়ে আসেন। এ বারে এক্কেবারে সামনের সারিতে।
৩৪ জন মহিলা নিয়ে তৈরি হয়েছে পুজো কমিটি। তাঁরাই এখন সংসারের কাজ সামলে মণ্ডপ, প্রতিমা নির্মাণের তদারকি থেকে শুরু করে বাড়ি বাড়ি চাঁদা তোলা শুরু করেছেন। চাঁদা তুলতে তুলতেই চলছে প্লাস্টিক বর্জনের প্রচার। প্লাস্টিক ব্যবহারের কুফল বিষয়ক পোস্টার, ফেস্টুন, ছবি সাঁটিয়ে বোঝানো হচ্ছে কেন প্লাস্টিক ব্যবহার করা উচিত নয়। পুজো মণ্ডপ তো বটেই, গোটা পাড়ায় ওই প্রচার ছেয়ে দেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে।
শুধু প্রচার অভিযানেই থমকে নেই প্লাস্টিকের বাহুল্য বর্জনের উদ্যোগ। দশমীতে প্লাস্টিকের বাহুল্য বর্জনের শপথ নেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
কেন এমন ভাবনা?
পুজো কমিটির সম্পাদিকা বলাকা মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, প্রচার মাধ্যমে প্লাস্টিক ব্যবহারের কুফলের প্রচার দেখে তার গুরুত্ব বুঝে এমন সিদ্ধান্ত। পুজো কয়েক দিন মণ্ডপ তো বটেই বাড়িতেও কোনও রকম প্লাস্টিকের ব্যবহার চলবে না। কোথাও প্লাস্টিক সামগ্রী পড়ে থাকবে না। বছরভর যাতে ধারাবাহিকতা থাকে তার জন্য দশমীতে শপথ গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। বলাকাদেবীর কথায়, ‘‘কারণ ওই দিন কেউ কোনও শপথ নিলে তা রাখার চেষ্টা করেন।’’
সভানেত্রী সঙ্গীতা মুখোপাধ্যায় যোগ করছেন, ‘‘আমরা জানি হঠাৎ করে প্লাস্টিক বর্জন করা সম্ভব নয়। কারণ বহু প্লাস্টিক সামগ্রীর বিকল্প সহজে মেলে না। তাই আমরা প্রথম দিকে ব্যবহারের বাহুল্য বর্জনের কথা বলছি। নিতান্তই যা বর্জন করা যাবে না, তা ফেলার জন্য পুজো মণ্ডপ তো বটেই, সারা বছর পাড়াতেও ডাস্টবিন রাখা হবে। বাহিনীর এ হেন উদ্যোগ যে তাঁদের পিছনে ফেলে দিয়েছেন তা মানছেন পুরুষেরাও। পুজো কমিটির প্রাক্তন কর্মকর্তা বদ্রীবিশাল মুখোপাধ্যায়, শ্যামল সরকাররা একবাক্যে মানছেন, ‘‘কই এমন ভাবনা তো মাথায় আসেনি।’’ এখানেই গুরুত্ব পাচ্ছে প্রমীলা বাহিনীর ভাবনা।
পুজো ঘিরে যাদের আনন্দের অন্ত নেই, কী বলছে সেই কচিকাঁচারা? ষষ্ঠ শ্রেণির ঊষসী মুখোপাধ্যায়, অষ্টম শ্রেণির রত্নার্ঘ্য মুখোপাধ্যায়রা বলছে, ‘‘এত দিন বাবা-কাকাদের পুজো পরিচালনা দেখছি। এ বার মা, কাকিমা, জেঠিমারা পরিচালনা করেছেন। আমরা নম্বর দেব। যাদের পরিচালনা ভাল হবে, তারাই আবার পরের বারের দায়িত্ব পাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy