Advertisement
E-Paper

টিজারে পুজোর আমেজ দুবরাজপুরে

সেই টিজার এ বার দুবরাজপুরে। কলকাতার অনুকরণে দুর্গাপুজোর ঢের আগে কোথাও খুঁটি পুজো, থিম বা ভাবনা প্রকাশের অনুষ্ঠানের রপ্ত করেছে এই জেলা শহরও। যদিও জেলায় এখনও সেটা লড়াইয়ের আকার নেয়নি। তবে শুরুটা যে হয়েছে সেটা বলাই বাহুল্য।

দয়াল সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৬:৪০
সজ্জা: কয়েক দিন পরে পুজো। সেজে উঠছে মণ্ডপ। নিজস্ব চিত্র

সজ্জা: কয়েক দিন পরে পুজো। সেজে উঠছে মণ্ডপ। নিজস্ব চিত্র

দুবরাজপুরের বাজারে, বাসস্ট্যান্ডে, বিদ্যুতের খুঁটিতে খুঁটিতে ঝুলে রয়েছে একটি পোস্টার। সেই সব পোস্টারে লেখা, ‘সুমনের সঙ্গে জলসাঘরে।’

ভাবছেন কোনও বাংলা সিনেমা বা রিমেকের পোস্টার?

কিংবা সত্যজিৎ রায় বা কবীর সুমনের ছবি-গান নিয়ে প্রাসঙ্গিক কিছু...? এমন একটা কৌতূহলের জন্ম দেওয়া ওই পোস্টারের অর্থ না জানলেও, এটা খুব সহজেই বোধগম্য হয়, এটা স্থানীয় সর্বজনীন পুজো উদ্যোক্তা উত্তারঞ্চলের দেওয়া একটা ‘টিজার’।

চমক এখানেই!

গত কয়েক বছর ধরে পুজোর মাস দু’তিনেক আগে থেকেই দু-এক লাইনের বাক্যবন্ধ, বা ‘টিজার’ দিয়ে নিজেদের পালে হাওয়া টানা শুরু করার ট্রেণ্ড চালু করেছে কলকাতা শহরের বড় পুজোগুলি। আগে দুই পুজো কমিটির লড়াই ছিল ছিল পুজোয়-পুজোয়। খুঁটিতে-খুঁটিতে। এখন থিমে থিমে হয়ে এখন জাঁকিয়ে বসেছে টিজারে-টিজারে!

সেই টিজার এ বার দুবরাজপুরে। কলকাতার অনুকরণে দুর্গাপুজোর ঢের আগে কোথাও খুঁটি পুজো, থিম বা ভাবনা প্রকাশের অনুষ্ঠানের রপ্ত করেছে এই জেলা শহরও। যদিও জেলায় এখনও সেটা লড়াইয়ের আকার নেয়নি। তবে শুরুটা যে হয়েছে সেটা বলাই বাহুল্য।

একটু ব্যতিক্রমী দুর্গাপুজো করার ভাবনায় দুবরাজপুর জেলায় বেশ চর্চিত নাম উত্তরাঞ্চল। বিগত কয়েক বছর ধরেই উদ্যোক্তারা পুজোর আগে থিমভাবনা প্রকাশের জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান করে নজর করেছে। এ বার আরও আগেই এল চমকদার এই টিজার।

‘‘কলকাতার কায়দায় টিজার দিয়ে যদি আগাম পুজো নিয়ে সোরগোল ফেলা যায় তাহলে ক্ষতি কী!’’ বলছেন আয়োজকরা।

মঙ্গলবার থিম ভাবনা প্রকাশের অনুষ্ঠান রয়েছে উত্তরাঞ্চলের। তার আগে ওই টিজার নিয়ে বললেন উদ্যোক্তারা। তাঁরা বলছেন, সত্যজিৎ রায় বা কবীর সুমন এখানে প্রাসঙ্গিক নন। এ বার দুর্গাপুজোর থিম ভাবনার মূলে রয়েছেন কবিয়াল অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি। বিদেশি এবং ভিন্ন ধর্মের হয়েও বাংলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে গিয়ে তিনিই হয়েছিলেন শ্রেষ্ঠ কবিয়াল। তাঁকে নিয়েই পুজো ভাবনা ‘ফারাসডাঙার ফিরিঙ্গি’। সেই বিখ্যাত গানের কলি, ‘আমি যে জলসাঘরে’, আর সুমন বলতে এখানে শিল্পী সুমন কবিরাজ। যিনি এ বার পুরো মণ্ডপসজ্জার দায়িত্ব নিয়েছেন।

দুর্গাপুজোর সঙ্গে হঠাৎ কবিয়াল অ্যান্টনির কী সম্পর্ক?

পুজো উদ্যোক্তাদের দাবি, অ্যান্টনি একজন পর্তুগিজ ছিলেন। যিনি হুগলির ফরাসডাঙায় পৌঁছেছিলেন উনিশ শতকে। বাংলার এক ব্রাহ্মণ বিধবাকে বিয়ে করার পরে তাঁরই অনুপ্রেরণায় বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতি নিবিড় অনুরক্ত হয়ে পড়েন। সেই অনুরাগই তাঁকে তৎকালীন বিখ্যাত কবিয়াল ভোলা ময়রাকে হারিয়ে হয়েছিলেন শ্রেষ্ঠ কবিয়াল হতে উদ্বুদ্ধ করে।

সাহেব কবিয়াল শুধু কবিগান নয়, অনেক ভক্তিগীতি রচনা করেছিলেন বিশেষ করে কালী ও দুর্গাকে নিয়ে। বিখ্যাত হয়ে রয়েছে তাঁর লেখা আগমনী গানগুলিও।

কলকাতার ফিরিঙ্গি কালীবাড়িও তাঁর তৈরি। যদিও উদ্যোক্তা শুভজিত দে, বিশ্বজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় শুভাশিস বক্সী, সুচিন্ত্য দেওয়াসীরা বলছেন, ‘‘দুর্গাপুজো ভাবনায় বিখ্যাত ওই কবিয়াল আসার পিছনে অবশ্য তাঁর কবিয়াল হয়ে উঠার কাহিনি নয়, দুর্গাপুজো শুধুমাত্র কুলীন, জমিদারদের নয়, মা দুর্গা যে সকলেরই সেই ভাবনাও তাঁরই ছিল। স্ত্রীর ইচ্ছে রাখতে কুলীন, জমিদারদের নিষেধ অগ্রাহ্য করে দুর্গাপুজো করেছিলেন। বাঙালির সবচেয়ে বড় মিলন উৎসবে তাঁর মৌলিক ভাবনাটাই তুলে ধরতে চেয়েছি। বর্তমান প্রক্ষাপটে যা অতন্ত্য জরুরিও।’’

উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, ‘অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি’ এবং ‘জাতিশ্বর’— দুটি সিনেমা ও প্রাপ্য নথি থেকে নেওয়া কবিয়াল অ্যান্টনির চর্চার জায়গাটাই মণ্ডপের আকার নেবে। এখন অপেক্ষা শুধু মণ্ডপ গড়ে উঠে কবিগানের জমজমাট আসর শুরুর।

Durga Puja Pandal Theme Dubrajpur দুবরাজপুর
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy