Advertisement
E-Paper

জ্বরে বেহুঁশ বাসিন্দারা, তবু হুঁশ নেই প্রশাসনের

বুধবার সকালে ঘুঘুডাঙা গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, মশারির ভিতরে গায়ে ধুম জ্বর নিয়ে শুয়ে আছেন বছর বাইশের তনুময় ঘোষ। তাঁর পড়শি বিপ্লব ঘোষের বাড়িতেও জ্বরে কাহিল তাঁর মেয়ে বৃষ্টি ও স্ত্রী বুলটিদেবী।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৭ ০১:২৮
নিরাপত্তা: ঘুঘুডাঙা গ্রামের একটি বাড়িতে মশারির ঘেরাটোপে জ্বরে আক্রান্ত এক বাসিন্দা। বুধবার সকালে। ছবি: শুভ্র মিত্র

নিরাপত্তা: ঘুঘুডাঙা গ্রামের একটি বাড়িতে মশারির ঘেরাটোপে জ্বরে আক্রান্ত এক বাসিন্দা। বুধবার সকালে। ছবি: শুভ্র মিত্র

এক মাস ধরে জ্বরে ভুগছেন গ্রামের অনেকে। কিন্তু চিকিৎসক দলের দেখা নেই। পঞ্চায়েতের সদস্যেরাও খোঁজ নিতে আসেননি বলে অভিযোগ। বিষ্ণুপুর ব্লকের মড়ার গ্রাম পঞ্চায়েতের ঘুঘুডাঙায় এখন কার্যত ঘরে ঘরে জ্বর। কখন কী হয়, এই আশঙ্কাতেই দিন কাটছে তাঁদের।

বুধবার সকালে ঘুঘুডাঙা গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, মশারির ভিতরে গায়ে ধুম জ্বর নিয়ে শুয়ে আছেন বছর বাইশের তনুময় ঘোষ। তাঁর পড়শি বিপ্লব ঘোষের বাড়িতেও জ্বরে কাহিল তাঁর মেয়ে বৃষ্টি ও স্ত্রী বুলটিদেবী।

গ্রাম সূত্রে জানা যায়, প্রায় দুশোটি পরিবারের বসবাস সেখানে। অধিকাংশ মানুষই কৃষিজীবী। বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে সদ্য চিকিৎসা করিয়ে আসা বিউটি ঘোষ বলেন, ‘‘প্রায় এক মাস আগে প্রথম জ্বর হয় একটি পরিবারে। তারপর থেকে গ্রামের একেক জন জ্বরে অসুস্থ হচ্ছেন। অথচ টনক নড়েনি পঞ্চায়েত কিংবা বিষ্ণুপুর স্বাস্থ্য জেলা আধিকারিকদের।’’

গ্রামবাসীরা জানান, এই গ্রামে নিকাশি নালা বলে কিছু নেই। পাইপলাইনের জলের কল খারাপ হয়ে যাওয়ায় জল পড়েই যায়। সেই জল পাশের নিচু জায়গায় জমছে। সেখানেই ডিম পাড়ছে মশা। বেশির ভাগ বাড়ির আশপাশ ঝোপ-জঙ্গলে ভর্তি। গ্রাম ঘুরে কারও বাড়িতে শৌচলয় নজরে আসেনি। গ্রামবাসী জানান, মাঠেঘাটেই তাঁরা শৌচকর্ম সারেন।

স্বাস্থ্যকর্মীরা নিয়মিত আসেন না এখানে? ঘুঘুডাঙা গ্রামবাসীর স্বাস্থ্যের খোঁজখবর রাখার দায়িত্বে থাকা সরস্বতী মণ্ডলের খোঁজ করতে গিয়ে দেখা গেল, তাঁর বাড়ির পাশেই এক হাঁটু-সমান জল জমে রয়েছে বাঁশঝাড়ের মধ্যে।

হিমাংশু ঘোষ, অজিত মণ্ডলেরা বলেন, ‘‘পুরো গ্রামে নিকাশি নালা বলে কিছু নেই। যেখানে সেখানে জল জমে মশার আঁতুর ঘর তৈরি হয়েছে। সেই সঙ্গে ঘরে ঘরে জ্বরের রোগী বাড়ায় আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। স্বাস্থ্য কর্মী সরস্বতীদেবী সপ্তাহ দুয়েক আগে পনেরো জনের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যান। কী রিপোর্ট এল, জানা গেল না।’’

এর মধ্যে ডেঙ্গি নিয়ে চারপাশে ভয় ছড়ানোয় অনেকেই বেসরকারি ল্যাবরেটরিতে রক্ত পরীক্ষা করেন। কয়েকজনকে বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়।

মড়ার গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান সাগর সাউ বলেন, ‘‘ঘুঘুডাঙায় জ্বর হচ্ছে বলে কিছু শুনিনি। এক মাস হল ঘুঘুডাঙা সংসদের পঞ্চায়েত সদস্য চিকিৎসা করাতে পুদুচেরী গিয়েছেন। আমারও খোঁজ নেওয়া হয়নি। এলাকা থেকেও কেউ খবর দেননি। খোঁজ নিয়ে দেখছি কী করা যায়।’’ তিনি জানান, ওই এলাকায় জায়গার অভাব থাকায় নিকাশি নালা তৈরি করা যায়নি।

চারপাশে নির্মল বাংলা প্রকল্পে শৌচাগার তৈরি চললেও ঘুঘুডাঙা কেন ব্রাত্য? মড়ার পঞ্চায়েত নির্মাণ সহায়ক নিরঞ্জন কর্মকার দাবি করেন, ‘‘২০০৮ সালে ওই গ্রামে সব বাড়িতে খাতায়-কলমে শৌচালয় তৈরি হয়ে গিয়েছে!’’ কিন্তু বাস্তবে যে ওই গ্রামে শৌচালয় নেই, তা কি পঞ্চায়েতের জনপ্রতিনিধিরা বা কর্মীরা জানেন না?— পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন ঘুঘু়ডাঙার বাসিন্দারা।

সব শুনে বিষ্ণুপুর স্বাস্থ্য জেলার সহকারী মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অরবিন্দ হালদার বলেন, ‘‘একটি চিকিৎসক দলকে ওই গ্রামে পাঠানোর জন্য আমি বিষ্ণুপুর ব্লক প্রাথমিক মেডিকেল অফিসারকে নির্দেশ দিচ্ছি। প্রত্যেকের রক্ত পরীক্ষা করা ছাড়াও, যা যা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, তা নেওয়া হবে।’’

Dengue Administration Dwellers
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy