শান্তিনিকেতনের পরে এ বার মহম্মদবাজার। ‘ডাইনি’ অপবাদে আবারও এক অদিবাসী বৃদ্ধাকে মারধরের অভিযোগ উঠল পড়শি মহিলাদের বিরুদ্ধে।
সোমবার সকাল ১১টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে মহম্মদবাজার থানার পুরানগ্রাম কালাদিঘি আদিবাসী পাড়ায়। আহত ওই বৃদ্ধা মহম্মদবাজার ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসাধীন। ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশই ওই বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসে। বিএমওএইচ জানিয়েছেন, বর্তমানে তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল। একই সঙ্গে তিনি বলছেন, ‘‘ওঁনার সঙ্গে কথা বলে বুঝেছি শারীরিক আঘাতের থেকে মানসিক আঘাত বেশি।’’ পুলিশ জানিয়েছে, ওই ঘটনার পিছনে কুসংস্কার না অন্য কোনও অভিসন্ধি রয়েছে এখনও তা স্পষ্ট নয়।
দিন কয়েক আগেই শান্তিনিকেতনের রূপপুর পঞ্চায়েতের বড়ডাঙা গ্রামে ডাইনি অপবাদে এক আদিবাসী বধূকে মারধরের অভিযোগে শোরগোল পড়েছিল জেলায়। ওই ঘটনাতেও প্রতিবেশী মহিলাদের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ উঠেছিল। পুলিশ পাঁচ জনকে গ্রেফতারও করে। ইতিমধ্যে ওই এলাকায় পুলিশ-প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে সচেতনতা কর্মসূচিও নেওয়া হয়েছে।
কালাদিঘিতে ঠিক কী ঘটেছে?
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, ওই আদিবাসী পড়ায় ৬০-৬৫ ঘর আদিবাসী পরিবারের বাস। গত শনিবারে গ্রামে মনসা পুজো গিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, সেই পুজোর পরে গ্রামের কিছু মহিলার ভর আসে। এবং তাঁদের মুখ থেকেই ওই বৃদ্ধার নাম উঠে আসে। ডাইনি গ্রামে থাকলে অনেকের অনেক ক্ষতি
হতে পারে সেই আক্রশে সোমবার সাকালে ওই প্রৌঢ়া যখন বোরো ধানে খেতে জল দেওয়ার কাজ করছিলেন তখনই গ্রাম থেকে বেশ
কিছু মহিলা গিয়ে তাঁর উপর চড়াও হয়। তাঁকে মারতে মারতে চুলের মুঠি ধরে টানতে টানতে গ্রামে নিয়ে আসে। এবং তাঁরই ঘরের দরজায় সামনে এনে শুরু হয় বেধরক মারধর। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে এ দিন বৃদ্ধা বলছেন, ‘‘পড়শিরা আমাকে ইট দিয়ে ঠুকে ঠুকে মারতে থাকে। আমাকে শেষ করারই উদ্দেশ্য ছিল। আমার ছেলে না থাকলে মেরেই ফেলত। পুলিশ এসে আমাকে ওদের হাত থেকে বাঁচায়। কিন্তু বাড়ি ফিরলে ওরা আবার আমাকে মারবে।’’
বৃদ্ধার ছেলে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় থানায় প্রতিবেশি ছয় মহিলার নামে মারধরের অভিযোগ জানিয়েছেন। জেলাপুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীরকুমার বলেন, ‘‘অভিযোগের প্রেক্ষিতে যা ব্যবস্থা নেওয়ার নেবে পুলিশ। তবে বোলপুরের একটি দলকে দিয়ে এলাকায় ডাইনিপ্রাথার বিরুদ্ধে একটা সচতনতা প্রচারের ভাবনা চলছে।’’ জানা যাচ্ছে, ‘ডাইন’ অপবাদ দিয়ে অত্যাচার এই প্রথম নয় এলাকায়। আগেও একাধিক বার হয়েছে। বৃদ্ধার মেয়েরা বলেন, ‘‘গ্রামের লোকজনকে ডেকে বুঝিয়েছিল থানা। তারপরও অত্যাচার থামছে না। কী করে মা-কে বাড়ি নিয়ে যাব বুঝতে পারছি না।’’
কেন ক্ষোভ ওই বৃদ্ধার উপর?
তাঁর পরিজনেরা বলছেন, ‘‘বাড়িতে রাধাকৃষ্ণের পুজো করেন বৃদ্ধা। পুজো করেন না তুকতাক করেন এই নিয়ে গ্রামের বেশ কিছু লোকের রাগ।’’ বৃদ্ধা নিজে বলছেন, ‘‘আমি শ্বশুরবাড়িতে নয়, থাকি বাপের বাড়িতে। প্রায় ২০ কাঠা সম্পত্তি রয়েছে আমাদের দুই বোনের নামে। আমাকে ডাইনি হিসাবে দেগে দিয়ে প্রাণে মেরে ফেললে বা ঘর ছড়া করলে সম্পত্তি হাতাতে সুবিধা হবে তাই এত অত্যাচার।’’
এ দিকে ঘটনার পরে আতঙ্কে পুরো পরিবার। বাড়ি ফিরতেই ভয় পাচ্ছেন সকলে। আদিবাসী গাঁওতার নেতা সুনীল সরেন বলছেন, ‘‘এমন ঘটনার কথা জানা নেই। তবে ডাইনি আপবাদে কারও উপর অত্যাচারের ঘটনা নিন্দনীয়।’’ ওই আদিবাসী বৃদ্ধা যাতে গ্রামে ফিরতে পারেন এবং শান্তিতে থাকতে পারেন পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে সে ব্যাপারে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy