Advertisement
E-Paper

ব্রজ-দুর্গা বাঁধে সেচের জল চায় মাসড়া

এখনও বৃষ্টির উপরেই নির্ভর করে চাষ করতে হয় সেই এলাকায়। 

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:০৯
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

মেলার নাম ‘ব্রজ-দুর্গা’। নব্বইয়ের দশক থেকে প্রতি বছর সরকারি এই মেলা বসে রামপুরহাট থানার শালবাদরা গ্রাম সংলগ্ন এলাকায়। বৃহস্পতিবার বিকেলে চার দিনের এই মেলার উদ্বোধন করেন কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়।

এলাকার বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, আদিবাসীদের মন ‘জিততে’ পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের আমল থেকে এখনও পর্যন্ত সরকারি খরচেই ওই মেলা করা হয়। সেখানে থাকে সরকারি বিভিন্ন কর্মসূচির প্রচার। কিন্তু ওই মেলা যে দু’জন চাষির স্মৃতিরক্ষায় শুরু, তাঁদের লড়াইয়ের সুফল থেকে এলাকার চাষিরা আজও বঞ্চিত। এখনও বৃষ্টির উপরেই নির্ভর করে চাষ করতে হয় সেই এলাকায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রামপুরহাট ১ পঞ্চায়েত সমিতির অধীন মাসড়া অঞ্চল। মাসড়াতেই হয় ব্রজ দুর্গা মেলা। রামপুরহাট থানার ঠাকুরপুরা গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন ব্রজ মুর্মূ ও দুর্গা হেমব্রম। এলাকায় চাষের সুবিধার জন্য তাঁরা বুঝেছিলেন— স্থানীয় ভুটকা কাঁদরের জল ধরে রাখতে পারলে মাসড়ার চাষিরা উপকৃত হবেন। সেই উদ্দেশে ১৯২৪ সালে তাঁরা অন্য চাষিদের সংগঠিত করে কাঁদরের উপরে সেচবাঁধ তৈরির জন্য আন্দোলন শুরু করেন। ইংরেজের বিরুদ্ধে লড়াই করে বাঁধও তৈরি করেন তাঁরা। পরে ওই দুই চাষির স্মৃতিরক্ষায় ১৯৯১ সালে ওই বাঁধের সংস্কার করে ব্রজ-দুর্গা নাম দেওয়া হয়। ৪০ ফুট উঁচুতে জল ধরে রাখার জন্য ১৯৯৫-৯৬ সালে একটি জলাধার তৈরি করা হয়। পরে বিদ্যুৎচালিত যন্ত্রও বসানো হয়। অভিযোগ, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হওয়ার আগেই ওই যন্ত্র চুরি হয়ে যায়। সেই থেকে আজ পর্যন্ত বাঁধ সংস্কার করা বা নতুন যন্ত্র বসানো হয়নি। বৃষ্টিনির্ভর মাসড়া অঞ্চল তা-ই এখনও সেচের সুবিধা থেকে বঞ্চিত।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মাসড়া পঞ্চায়েতের ৩৬টি গ্রামের মধ্যে ৩৩টি গ্রাম আদিবাসী অধ্যুষিত। সেই সব গ্রামের বাসিন্দারা এখনও বৃষ্টির উপরে নির্ভর করেই চাষ করেন। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, একাধিক বার পঞ্চায়েতের মাধ্যমে সেচের উন্নতির জন্য আবেদন জানালেও কাজ হয়নি। আলুপাহাড়ি এলাকার চাষি হরেন মাড্ডি, চাঁদেরজোলের বালিচাঁদ রায় বলেন, “মাসড়া এলাকায় ওই দু’টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে প্রায় ১৪০ বিঘা জমিতে সেচের সুবিধা পাওয়া যেত।” একই কথা জানান ঠাকুরপুরা গ্রামের বাসিন্দা তথা প্রাক্তন উপপ্রধান ডাক্তার মির্ধা। মাসড়ার সৈয়দ মৈনুদ্দিন হোসেন জানান, ব্রজ দুর্গা বাঁধের সংস্কার করলে যেমন ঠাকুরপুরা গ্রামের চাষিরা উপকৃত হবেন, পাশাপাশি মাসড়া গ্রামের পাশ দিয়ে যাওয়া ময়ূরাক্ষী উত্তর ক্যানালের সেচনালা সংস্কার করে চাঁদনি হয়ে মাসড়া পর্যন্ত সেচ ক্যানালের জল নিয়ে যাতে পারলে চাঁদেরজোল, শিমুলবোনা, শালতলা, তেঁতুলবাঁধি, তুলসিপাড়া, বামনিগ্রাম, চাঁদনি, মাসড়ার মতো গ্রামগুলি উপকৃত হবে। ঠাকুরপুরা গ্রামের বাসিন্দা তথা দুর্গা হেমব্রমের বংশধর মৃত্যুঞ্জয় হেমব্রম জানান, ব্রজ দুর্গা বাঁধের সংস্কার করে এলাকার চাষিদের উপকার হবে। মাসড়া অঞ্চলের ৯০ শতাংশ চাষি সেচের সুবিধা পাচ্ছেন না। যে বছর বৃষ্টি ভাল হয়, সে বছর ধান চাষ করতে পারেন চাষিরা। ১০ শতাংশ জমিতে রবি চাষ করতে পারেন।

এলাকার আদিবাসী নেতা রবীন সরেন জানান, বামফ্রন্ট সরকারের আমলেও ব্রজ দুর্গা বাঁধের সংস্কার করা হয়নি। এই আমলেও সংস্কার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

এ নিয়ে আশিসবাবু জানান, ব্রজ দুর্গা বাঁধের সংস্কারের জন্য সেচমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। খুব শীঘ্রই এ বিষয়ে সেচ ও কৃষি দফতরের সচিব পর্যায়ে আলোচনার আশ্বাস দেন তিনি। রামপুরহাট ১ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি পান্থ দাস জানান, ব্রজ দুর্গা বাঁধের সংস্কারের জন্য পঞ্চায়েত সমিতিতে আলোচনা করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানানো হবে। রামপুরহাট ১ ব্লকের বিডিও দীপান্বিতা বর্মণ জানান, এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য, পঞ্চায়েত প্রধান, পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য এবং স্থানীয় মানুষের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।

Irrigation Water Rampurhat
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy