Advertisement
E-Paper

এসি-র আগুনে আতঙ্ক মেডিক্যালে

সতর্ক না হলে যে কোনও সময় ঘটে যেতে পারে অগ্নিকাণ্ড— এমন পূর্ভাবাস ছিলই। হলও তাই। রবিবার দুপুরে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের দোতলায় সার্ভার রুমে আগুন লেগে ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ল গোটা হাসপাতালে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৬ ০০:৫৭
তখন দুপুর ২টো ১০। বাঁকুড়া মেডিক্যালের এই সার্ভার রুমেই লাগে আগুন।

তখন দুপুর ২টো ১০। বাঁকুড়া মেডিক্যালের এই সার্ভার রুমেই লাগে আগুন।

সতর্ক না হলে যে কোনও সময় ঘটে যেতে পারে অগ্নিকাণ্ড— এমন পূর্ভাবাস ছিলই। হলও তাই। রবিবার দুপুরে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের দোতলায় সার্ভার রুমে আগুন লেগে ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ল গোটা হাসপাতালে। প্রাণ ভয়ে ওয়ার্ড ছেড়ে দৌড়ে বেরিয়ে এলেন মুমূর্ষু রোগীরা। হাসপাতালের কর্মীদের তৎপরতায় অবশ্য দ্রুত আগুন নিভিয়ে বড়সড় দুর্ঘটনা ঠেকানো গিয়েছে। তবে, এই ঘটনা ফের বেআব্রু করে দিয়েছে হাসপাতালের বেহাল অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাকে।

তখন দুপুর দুটো দশ। হঠাৎই হাসপাতালের সার্ভার রুম থেকে গলগল ধোঁয়া বেরোতে দেখা যায়। সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করে দেওয়া হয় হাসপাতালের মেন স্যুইচ। হাসপাতালে উপস্থিত কর্মীরা অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র নিয়ে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেন। সার্ভার রুমের পাশেই রয়েছে পুরুষ ও মহিলা অর্থোপেডিক্স ওয়ার্ড। ওই দু’টি ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা প্রায় ১০০ জন রোগীকে তড়িঘড়ি বের করে হাসপাতাল বিল্ডিংয়ের বাইরে নিয়ে যাওয়া শুরু করেন কর্মীরা। ধোঁয়া দেখে আতঙ্কে কাঁপছিলেন রোগীরা। ওই রোগীদের হাসপাতাল থেকে বের করতে দেখে বড় কিছু ঘটে গিয়েছে আশঙ্কায় অন্যান্য ওয়ার্ড থেকেও রোগীরা বেরিয়ে পড়েন। হাসপাতাল জুড়ে হইচই বেধে যায়।

ঘটনার খবর পেয়ে কয়েক মিনিটের মধ্যেই হাসপাতালে চলে আসে দমকলের একটি ইঞ্জিন। সার্ভার রুমের আগুন অবশ্য ততক্ষণে অনেকটাই নিভিয়ে ফেলেছিলেন হাসপাতাল কর্মীরা। দমকল বাকি আগুন নেভায়। হাসপাতাল সুপার পঞ্চানন কুণ্ডু বলেন, “অগ্নিকাণ্ডের সময় রোগীদের বের করে আনার পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসতেই তাঁদের ফের ওয়ার্ডে রেখে আসা হয়েছে। রোগীরা সুরক্ষিত।’’

যার জেরে আতঙ্কে ওয়ার্ড ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসেন রোগীরা।

সার্ভার রুম থেকে কিছুটা দূরের ফিমেল সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীদের অবশ্য বের করে আনা হয়নি। কিন্তু, আতঙ্কে আত্মীয়েরাই তাঁদের বাইরে নিয়ে আসেন। ওই ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলেন বাঁকুড়া শহরের নতুনচটির প্রৌঢ়া লক্ষ্মী নন্দী। ছেলে গৌতম কাঁধে করে মাকে ওয়ার্ড থেকে বের করে আনেন। গৌতমবাবুর কথায়, “চারিদিকে পোড়া পোড়া গন্ধ ও ধোঁয়া ছড়িয়ে গিয়েছিল। সামনের ওয়ার্ডের রোগীদের দেখলাম বের করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বড়সড় বিপদের ভয়ে তখন মাথা কাজ করছিল না। মাকে বেড থেকে তুলে নিয়ে দ্রুত বেরিয়ে গিয়েছিলাম।’’ পুরুলিয়ার বাসিন্দা রতি বাউরি সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলেন। তাঁর মেয়ে পার্বতী বলেন, “হাসপাতাল থেকে রোগীদের ওই ভাবে বেরিয়ে যেতে দেখে খুব ভয় পেয়েছিলাম। পাশের বেডে ভর্তি থানা অন্য রোগীদের আত্মীয়দের সাহায্যে মাকে নিয়ে কোনও মতে ওয়ার্ড থেকে বেরোই।’’ পায়ে চোট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া পুরুলিয়ার বলরামপুরের প্রৌঢ়া বকুল মন্ডলের কথায়, “চারিদিক ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছিল। হঠাৎ করে হাসপাতালের ইলেক্ট্রিক বন্ধ হয়ে পড়ায় চারদিক অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। ভয়ে চিৎকার করতে শুরু করে দিয়েছিলাম”।

কী ভাবে আগুন লাগল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে হাসপাতাল কর্তাদের একাংশের দাবি, সার্ভার রুমের এসি মেশিনটি বহু পুরনো। ওই মেশিনেই আগুন লেগে এই ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে তাঁদের অভিমত। চলতি বছর অগস্টেই বহরমপুর শহরে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এসি-তে শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লেগেছিল চিকিৎসকদের বিশ্রাম নেওয়ার ঘরে। আগুন ছড়িয়ে যেতে পারে এই আশঙ্কায় সবাই একসঙ্গে পালাতে গিয়ে পদপিষ্ট হয়ে মারা যান হাসপাতালেরই এক আয়া এবং এক রোগীর আত্মীয়া। ক’দিন আগে আগুন লাগে এগরার সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে। প্রতিবারই অগ্নিকাণ্ডের পরে তদন্তে দেখা গিয়েছে, কলকাতা ও জেলার বহু সরকারি হাসপাতালেই বড় আগুন লাগলে তা মোকাবিলা করার মতো পরিকাঠামোর অভাব।বাঁ কুড়ার ঘটনায় হতাহত না হলেও ভবিষ্যতের জন্য সতর্কবার্তা রেখে গেল, এমনই মনে করছেন রোগীরা।

অনেককে হাসপাতাল চত্বরেই শুইয়ে দেওয়া হয়।

এ দিন আগুন লাগার খবর পেয়েই হাসপাতালে ছুটে আসেন বাঁকুড়া মেডিক্যালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু, জেলা সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী, ওন্দার বিধায়ক অরূপ খাঁ, বাঁকুড়ার পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত, জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি শিবাজী বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ অনেকে। বুধবার হাসপাতালে এসে স্ত্রী ও প্রসূতি বিভাগ খতিয়ে দেখে হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ড ঠেকাতে জেলাশাসক পরিকাঠামো নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সচেতন করে গিয়েছিলেন। আদতে গোটা হাসপাতালের পরিকাঠামোই যে ঢেলে সাজা দরকার, এ দিনের ঘটনা তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে।

বাঁকুড়া মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম প্রধান এ দিন কলকাতায় ছিলেন। ফোনে তিনি বলেন, “হাসপাতালের পুরনো এসি মেশিন বদল করা হচ্ছে। এখনও কয়েকটি পুরনো এসি রয়ে গিয়েছে। সার্ভার রুমের মেশিনটিও পুরনো।’’

জেলাশাসক মৌমিতাদেবী বলেন, “অগ্নিকান্ডের প্রকৃত কারণ এখনও জানা যায়নি। সব দিক খতিয়ে দেখছি আমরা। ওই রুমের সিসিটিভি ফুটেজও খুঁটিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ সার্ভার রুমের দু’টি কম্পিউটার মেশিনও আগুনে নষ্ট হয়ে গিয়েছে।

ফিমেল সার্জিক্যাল ওয়ার্ড পুরো ফাঁকা হয়ে যায়।

অধ্যক্ষের কথায়, “হাসপাতালের কয়েক জন কর্মীদের তৎপরতায় বড়সড় দুর্ঘটনা এড়ানো গিয়েছে, এটাই রক্ষে। যেভাবে আগুন নেভাতে তাঁরা ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, অন্য দিকে রোগীদের দ্রুত ওয়ার্ড থেকে বের করে আনার কাজ সেরে ফেলেছিলেন, তা প্রশংসনীয়।’’

রবিবার অভিজিৎ সিংহের তোলা ছবি।

Fire incident Bankura Medical College
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy