Advertisement
E-Paper

আতঙ্কের আড়াই ঘণ্টা

সাত সকালে খবরের কাগজের পাতায় এমন ছবি দেখেছেন আলো সরকার, শিখা কেশরীরা। নিজেদের জীবনেও যে ব্যাপারটা ঘটে যাবে, দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি। পুরুলিয়া শহরের ভবতারণ সরকার রোডে যে বহুতলটিতে শুক্রবার সকালে আগুন লাগে, তাঁরা সেখানে থাকেন।

প্রশান্ত পাল

শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:৩২
দগ্ধ: জানলার কাচ ভেঙে আগুন নেভান দমকল কর্মীরা। কিন্তু ততক্ষণে সব কিছুই পুড়ে খাক। ছবি: সুজিত মাহাতো

দগ্ধ: জানলার কাচ ভেঙে আগুন নেভান দমকল কর্মীরা। কিন্তু ততক্ষণে সব কিছুই পুড়ে খাক। ছবি: সুজিত মাহাতো

দোতলার একটি ঘর থেকে গলগল করে বেরোচ্ছে কালো ধোঁয়া। হুড়মুড়িয়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসছেন বহুতলের বাসিন্দারা। কারও কোলে শিশু। কেউ হাতের কাছে জরুরি যা পেয়েছেন, আঁকড়ে ছুটছেন।

সাত সকালে খবরের কাগজের পাতায় এমন ছবি দেখেছেন আলো সরকার, শিখা কেশরীরা। নিজেদের জীবনেও যে ব্যাপারটা ঘটে যাবে, দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি। পুরুলিয়া শহরের ভবতারণ সরকার রোডে যে বহুতলটিতে শুক্রবার সকালে আগুন লাগে, তাঁরা সেখানে থাকেন। এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, জটলা করে রয়েছেন তাঁরা। চোখেমুখে আতঙ্ক। ততক্ষণে ছড়িয়ে পড়েছে আগুন লাগার খবর। অনেকের মোবাইলে ফোন আসতে শুরু করেছে। কেউ কেউ কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলছেন। এক জন বললেন, ‘‘কেমন একটা ঘোরের মতো লাগছে। আগুন ঘর পর্যন্ত ছড়ায় যদি, কী হবে ভাবতেও পারছি না।’’

অবশ্য দমকল কর্মীদের টানা চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে আসে আগুন। ব্যাঙ্কের বাইরে আর ছড়ায়নি। দুপুরের পরে চেনা ঘরে ফিরে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন সবাই।

শহরের এই বহুতলটি অনেক পুরনো। ছ’তলা। এক তলায় রয়েছে এটিম, দোকানপাট, হোটেল। দোতলায় ব্যাঙ্ক আর কিছু দোকান। তিন তলা থেকেই শুরু হয়েছে ফ্ল্যাট। বেশ কিছু বন্ধ। তার পরেও প্রায় কুড়ি পঁচিশটি পরিবার থাকে চারটি তলা জুড়ে। রয়েছে দু’টি সিঁড়ি। এ দিন আগুন লাগার পরে মূল সিঁড়ি ভরে গিয়েছিল কালো ধোঁয়ায়। অনেকে মুখ ঢেকে কোনও রকমে কাশতে কাশতে সেখান দিয়ে নেমেছেন। তবে পিছনের সিঁড়ির দৌলতে সুবিধা হয়েছে।

চিন্তা: দোতলায় জ্বলছে ব্যাঙ্ক। বহুতল থেকে নেমে এসে রাস্তায় প্রহর গুনছেন আবাসিকেরা। নিজস্ব চিত্র

ব্যাঙ্কের উপরের তলায় থাকেন সৌরভ দরিপা। তিনি বলেন, ‘‘বাইরে চিৎকার কানে ঢোকেনি। ঘুমোচ্ছিলাম। মা এসে ঘুম ভাঙায়। ধড়মড় করে উঠে পিছনের সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসি। হাতের কাছে শুধু মোবাইলটা ছিল। আর কিছু নিতে পারনি।’’

ওই বহুতলেই থাকেন ব্যাঙ্কের ব্রাঞ্চ ম্যানেজারের পরিবার। আগুন আয়ত্তে এসে গেলেও চোখমুখ থেকে আতঙ্কের ছাপ কাটছিল না ব্রাঞ্চ ম্যানেজারের স্ত্রী শিখা কেশরীর। বছরখানেকের মেয়েকে আঁকড়ে ধরে নীচে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘‘হঠাৎ নীচ থেকে শোরগোল শুনলাম, আগুন লেগেছে। জানলা দিয়ে মুখ বার করতেই সবাই চিৎকার করে ওঠেন। এক মুহূর্তও অপেক্ষা করিনি। মেয়েটাকে বুকে চেপে ধরে পড়িমড়ি করে নেমে আসি। কিছু নেওয়ার কথা মাথাতেও আসেনি।’’

তখন সবে ঘুম থেকে উঠে ব্যাঙ্কের উপর তলার ঘরের মধ্যেই পায়চারি করছিলেন রেখা কারিয়র। বলেন, ‘‘হঠাৎ দুম করে একটা শব্দ। জানালা খুলেই ব্যাপারটা বুঝতে পারি।’’ পাঁচ তলা থেকে আতঙ্কে নেমে এসেছিলেন প্রৌঢ়া আলো সাহাও। যদি রাতে আগুনটা লাগত, কী হত ভেবে শিউরে উঠছেন তাঁরা সবাই। দমকল কর্মীরাও মনে করছেন, সে ক্ষেত্রে বিপদ অনেক বেড়ে যেত। ব্যাঙ্কের সঙ্গে একই তলায় বেশ কিছু দোকান রয়েছে। তাতে মজুত জিনিসপত্র দিয়ে আগুন ছড়াতে পারত দ্রুত। পুরুলিয়ার দমকল বিভাগের ওসি সুদীপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আগুন আয়ত্তে আনতে আমাদের অনেকটাই সময় লেগেছে। বহুতলের নীচে নিয়ম মেনে ট্যাঙ্কে জল রাখার কথা। কিন্তু সেটা আমরা পাইনি।’’

শহরের বিভিন্ন বহুতলে সেটা আদৌ রয়েছে কি না, এই ঘটনার পরে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এ দিন খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন শহরের উপ পুরপ্রধান বৈদ্যনাথ মণ্ডল, স্থানীয় কাউন্সিলর প্রদীপ দাগা, পাশের ওয়ার্ডের বিভাসরঞ্জন দাসেরা। প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘আগুন নিয়ন্ত্রণের প্রাথমিক ব্যবস্থা শহরের বহুতলগুলিতে রয়েছে কি না আমরা সেটা খতিয়ে দেখার জন্য পুরসভায় দাবি তুলব।’’ দমকলকে বহুতলগুলি খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দিতে বলা হবে বলে জানিয়েছেন বৈদ্যনাথবাবু। তিনি বলেন, ‘‘দমকলের সুপারিশ মতো ব্যবস্থা নেব।’’

Bank Fire Fire Brigade
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy