Advertisement
E-Paper

দুই ব্যারাজে জল ছাড়ায় সতর্কতা

গত কয়েকদিন ধরে নাগাড়ে বৃষ্টিপাত হওয়ায় ব্রাহ্মণী নদীর বৈধরা ব্যারাজ ও দ্বারকা নদের ডেউচা ব্যারাজ থেকে জল ছাড়া শুরু করল সেচ দফতর। সকাল ৮টা নাগাদ ব্রাহ্মণী নদীর বৈধরা ব্যারাজ থেকে সর্বোচ্চ ২২,৮০০ কিউসেক হারে জল ছাড়া হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৫ ০২:৫৯
এক দিকে, অঝোর ধারে বৃষ্টি। তারই মাঝে জল ছাড়া হচ্ছে ময়ূরাক্ষী নদীর উপরে তিলপাড়া ব্যারাজে। শুক্রবার সকালে ছবিটি তুলেছেন তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।

এক দিকে, অঝোর ধারে বৃষ্টি। তারই মাঝে জল ছাড়া হচ্ছে ময়ূরাক্ষী নদীর উপরে তিলপাড়া ব্যারাজে। শুক্রবার সকালে ছবিটি তুলেছেন তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।

গত কয়েকদিন ধরে নাগাড়ে বৃষ্টিপাত হওয়ায় ব্রাহ্মণী নদীর বৈধরা ব্যারাজ ও দ্বারকা নদের ডেউচা ব্যারাজ থেকে জল ছাড়া শুরু করল সেচ দফতর। সকাল ৮টা নাগাদ ব্রাহ্মণী নদীর বৈধরা ব্যারাজ থেকে সর্বোচ্চ ২২,৮০০ কিউসেক হারে জল ছাড়া হয়। একই সময়ে দ্বারকা নদের ডেউচা ব্যারাজ থেকে ৮,০০০ কিউসেক হারে জল ছাড়া হয়। বেলা বাড়তে দু’টি ব্যারাজ থেকেই জল ছাড়ার পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া হয়। দুপুর ২টা নাগাদ জল ছাড়ার পরিমাণ দাঁড়ায় বৈধরা ব্যারাজে ১২,৯২০ কিউসেক এবং ডেউচা ব্যারাজে ৪,১৪৪ কিউসেক। তুমুল জল ছাড়ার জন্য নদী সংলগ্ন এলাকায় রামপুরহাট মহকুমার নলহাটি ১, ২ ও নলহাটি ২ ব্লকে বাড়তি সতর্কতা জারি করে সেচ দফতর।

সেচ দফতরের ময়ূরাক্ষী উত্তর ক্যানালের রামপুরহাটের বিভাগীয় নির্বাহী বাস্তুকার তরুণ রায় চৌধুরী জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে ২৪ ঘণ্টায় রামপুরহাট এলাকায় ২৬.৪ মিলিমিটার, মল্লারপুরে ৭৫ মিলিমিটার, নলহাটিতে ১৯.২ মিলিমিটার, পাইকরে ৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। এ ছাড়া ডেউচায় ৪০.৬ মিলিমিটার, মহম্মদবাজার এলাকায় ৪৮.২৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। বীরভূম লাগোয়া ঝাড়খণ্ড সীমানাতেও প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে। তার জেরে ব্রাহ্মণী নদী এবং দ্বারকা নদে জলের চাপ বাড়ে। সে জন্য ব্যারাজ থেকে জল ছাড়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়।

এ দিকে জল ছাড়ার জন্য ব্রাহ্মণী নদীর দুই পাড়ে নলহাটি ১, ২ এবং রামপুরহাট ২ ব্লক এবং দ্বারকা নদের জল ছাড়ার জন্য রামপুরহাট ১ ও ২ ব্লকের বাসিন্দাদের সংশ্লিষ্ট বিডিওদের মাধ্যমে সতর্ক করা হয়। সেচ বিভাগের আধিকারিক তরুণ রায় চৌধুরী বলেন, ‘‘যে সমস্ত এলাকায় নদী ছোট হয়ে গিয়েছে, জল ছাড়ার ফলে সেই সমস্ত এলাকায় নদী বাঁধগুলির পরিস্থিতি দেখতে দফতরের কর্মীরা এলাকায় উপস্থিত রয়েছেন।’’ এ দিকে নলহাটি ২ ব্লকের শীতলগ্রাম অঞ্চলের সাহেবনগর এলাকায় নদীবাঁধের ছোট ছোট সুড়ঙ্গ দিয়ে নদীর জল মাঠে ঢুকতে দেখা যায়। খবর পেয়ে সেচ দফতরের কর্মীরা পরে বার দুয়েক সুড়ঙ্গ মেরামত করেন।

বীরভূমের সীমানা এলাকার গ্রাম যেখানে নদীর জলের চাপ সব চেয়ে বেশি সেই টিঠিডাঙা নিয়ে প্রশাসনের সবচেয়ে বেশি চিন্তা। গ্রামের মাঝখান দিয়ে ব্রাহ্মণী বয়ে গিয়েছে। নদীর উত্তর পাড় কিছুটা মাড়গ্রাম থানা আবার কিছুটা মুর্শিদাবাদ জেলার খড়গ্রাম থানার অধীনে। আবার দক্ষিণ পাড়ের কিছু অংশ নলহাটি থানার অধীনে, কিছু অংশ মুর্শিদাবাদের নবগ্রাম থানার অধীনে। নদীর দুই পাড় থেকে তিন-চার ফুট নীচ দিয়ে জল বইছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। টিঠিডাঙা গ্রামের বাসিন্দা আমিরুল ইসলাম, শাজাহান সেখদের বক্তব্য, ‘‘আর যদি জল ছাড়ে তাহলে নদী বাঁধ ছাপিয়ে গ্রামের ভিতর জল ঢুকবে। তাই সবাই খুব চিন্তায় রয়েছি।’’ রামপুরহাট ২ বিডিও সৌমনা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, নদী পাড় থেকে কয়েকজনকে গ্রামের ভিতরে গিয়ে থাকতে বলা হয়েছে। দ্বারকা নদের বিষ্ণুপুর অঞ্চলেও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে এখনও পর্যন্ত কোনও গ্রামে জল ঢোকেনি ।

নলহাটি ১ বিডিও তাপস বিশ্বাস বলেন, ‘‘বড়লা, কলিঠা, কুরুমগ্রাম অঞ্চলের প্রধান-সহ গ্রাম সদস্যদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। তবে এলাকা ঘুরে দেখা গিয়েছে নদীতে জল ছাড়ার পরিমাণ যেহেতু কমে গিয়েছে, তাই এখনও পর্যন্ত বিপদ সীমার নীচে জল আছে। নলহাটি ২ ব্লকের বিডিও গোবিন্দ নন্দী বলেন, ‘‘সাহেবনগর এলাকায় নদী বাঁধে কিছুটা সমস্যা দেখা দিয়েছিল। সেখানে সেচ দফতরের ইঞ্জিনিয়র, ব্লকের প্রাকৃতিক বিপর্যয় বিভাগের কর্মীরা, যুগ্ম বিডিও গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন।’’ আর যদি জল ছাড়া যদি না হ,য় তাহলে পরিস্থিতি আপাতত ঠিক থাকবে বলে বিডিও দাবি করেছেন।

শঙ্কা কুঁয়ে নদীর দুই পাড়েও
লাভপুর

জলাধার থেকে জল ছাড়ার খবরে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন লাভপুরের জলমগ্ন মানুষ জন। নতুন করে বন্যা কবলিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রশাসনের অবশ্য আশ্বাস, এখনই আশঙ্কার কিছু নেই। গত শনিবার লাভপুর এলাকার দু’ জায়গায় কুঁয়ে নদীর বাঁধ ভেঙে জলমগ্ন হয়ে পড়ে প্রায় ৫০টি গ্রাম। দুর্গত হয়ে পড়েন ৫ হাজারের কিছু বেশি মানুষ। শুক্রবার রামঘাটির হাসিনা বিবি, গোকুলবাটির অশোক মেটেরা বলেন, ‘‘গ্রাম থেকে জল সরে গেলেও মাঝে মধ্যেই বৃষ্টি হচ্ছে। তার উপর জল ছাড়ার খবর পেয়ে চরম আশঙ্কায় পড়েছি। ভেবেছিলাম দু’ এক দিনের মধ্যে ঘরে ফিরব। কিন্তু ফের বন্যা হলে কী হবে জানি না।’’ লাভপুরের বিডিও জীবনকৃষ্ণ বিশ্বাস অবশ্য জানিয়েছেন, তিলপাড়া থেকে জল ছাড়া হলে লাভপুর এলাকায় তার তেমন প্রভাব পড়বে না। একমাত্র ময়ূরাক্ষী উপচে যদি কুঁয়ে নদীতে না মিশে, তা হলে নতুন করে বন্যা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা নেই।’’

Flood Rampurhat birbhum Nalhati luvpur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy