Advertisement
E-Paper

বাউলের সুরে মাতল সোনামুখীর মহোৎসব

বাউল গানের সুরে ডুবে থাকল সোনামুখী। সম্প্রতি শেষ হল তিন দিনের মহোৎসব। হিন্দুদের পাশাপাশি বহু মুসলিম পরিবারও উৎসবে যোগ দিয়েছিলেন। আক্ষরিক অর্থেই এই উৎসব যেন সম্প্রীতির মেলা হয়ে উঠেছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৭ ০২:২৪
সুরে-সুরে: মনোহরতলায় বাউলের আসর। ছবি: শুভ্র মিত্র

সুরে-সুরে: মনোহরতলায় বাউলের আসর। ছবি: শুভ্র মিত্র

বাউল গানের সুরে ডুবে থাকল সোনামুখী। সম্প্রতি শেষ হল তিন দিনের মহোৎসব। হিন্দুদের পাশাপাশি বহু মুসলিম পরিবারও উৎসবে যোগ দিয়েছিলেন। আক্ষরিক অর্থেই এই উৎসব যেন সম্প্রীতির মেলা হয়ে উঠেছিল।

সোনামুখীর তন্তুবায় সম্প্রদায়ের আরাধ্য মনোহর দাসের তিরোধাম দিবসকে স্মরণ রেখে নবমী তিথিতে এই উৎসব শুরু হয়। কয়েকশো বছর ধরে এই উৎসব চলে আসছে।

বাঁকুড়ার বিভিন্ন এলাকা তো বটেই, বীরভূম, বর্ধমান, নদিয়া জেলা থেকে অনেক কীর্তন ও বাউল শিল্পীরা এখানে আসেন। সেই উপলক্ষে সোনামুখীর মনোহরতলায় মনোহর দাস জীউ মন্দিরে বহু মানুষের ঢল নেমেছিল।

তিন দিনের এই মেলা পরিচালনা করেন তন্তুবায় সম্প্রদায়ের মানুষেরা। উৎসবের ক’দিন তাঁরা নিরামিষ খান, খালি পায়ে থাকেন, গলায় তুলসিকাঠির মালা পরেন।

লোকমুখে শোনা যায়, যে মানুষটিকে ঘিরে এত বড় মেলার আয়োজন, সেই মনোহর দাস কিন্তু সোনামুখীর বাসিন্দা ছিলেন না। তিনি ঘুরতে ঘুরতে সোনামুখীতে ডেরা বেঁধেছিলেন। এখন যে এলাকা মনোহরতলা, সেখানেই তিনি তালপাতার ছাউনির নীচে থাকতেন। প্রায় দশ বছর সোনামুখীতে তিনি বসবাস করেছিলেন। শ্রীকৃষ্ণ ও চৈতন্যদেবের ভক্ত ছিলেন তিনি। একসময় সোনামুখীর তাঁতিরা মহাসঙ্কটের পড়েন। বিশেষ এক ধরনের পোকা তাঁদের তাঁত কেটে নষ্ট করে দিচ্ছিল।

তাঁতিরা মনোহর দাসের শরণাপন্ন হন। তাঁর চেষ্টায় সেই সমস্যা থেকে তাঁতিরা মুক্তি পান। তারপর থেকেই মহোৎসবের সব ভার সোনামুখীর তন্তুবায় সম্প্রদায় বহণ করে আসছেন।

তিন দিন ধরে সোনামুখী শহরের ২৪টি জায়গাতে বাউলের আখরা বসেছিল। শ্যামসুন্দর আখড়ার কর্ণধার কালীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এ বার আমরা বাউল গানের মধ্যে দিয়ে লোক শিল্পী কালিকাপ্রসাদকে শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করেছি।’’

বীরভূম থেকে আসা গোপীনাথ দাস বাউল, বাঁকুড়ার সত্যানন্দ দাস বাউলরা বলেন, ‘‘মনের শান্তি আর প্রাণের আরামের মিলনস্থল আমাদের এই সোনামুখীর মনোহর দাস জীউের মহোৎসব।’’

দিবাকর বাউল, সাধনা বাউল, প্রানেশ দাশ বাউল, অশোক কীর্তনিয়াদের উপলব্ধি, ‘‘এই মোচ্ছবে বাউল আর কীর্তন পরিবেশন না করলে আমাদের পূর্ণতা আসে না।’’

শুধু গান শোনাই নয়। তিন দিন ধরে পেটপুরে ভোগের ব্যবস্থাও থাকে। তন্তুবায়রা নিজেরাই সমস্ত খরচ সামলান। সোনামুখী শহর-সহ আশেপাশের ধনশিমলা, রামপুর, কোচডি, রপট, জসরা, ধুলাই, সাহাপুর, কাশীপুর থেকে গ্রামবাসীরা আসেন। মনোহরদাস জীউ মন্দির সংলগ্ন এলাকায় মেলা বসে।

প্রবীণ তন্তুবায় কুমারেশ পাত্র বলেন, ‘‘দিন দিন চারপাশের অনেক কিছু বদলে যাচ্ছে। কিন্তু এই মহোৎসেবর উন্মাদনা কমেনি।’’

কেন?

নতুন প্রজন্মের বিজয় ঘোষাল, সোমনাথ দাস, অনিমেষ সেন, উত্তম পালদের কথায়, ‘‘বছরভর ডিজে, হিন্দি-বাংলা সিনেমার গান শুনলেও এই ক’টা দিন বাউলেই মেতে থাকি আমরা। এ গান যে আমরা ছেলেবেলা থেকে শুনে আসছি। রক্তের সঙ্গে মিশে গিয়েছে।’’

Sonamukhi Baul Folk
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy