Advertisement
০৪ মে ২০২৪

গোপে অধরাই, ক্ষোভ ছড়াল পুলিশের নিচুতলায়

থানায় ঢুকে পুলিশকে চড় মারায় মূল অভিযুক্ত গোপেকে দু’দিন পরেও গ্রেফতার করতে না পারায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে পুলিশের একাংশের মধ্যে। বিশেষত নিচুতলার পুলিশ কর্মীদের ক্ষোভ, একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইনস্পেক্টরকে (এএসআই) চড় মেরেও যদি কেউ পুলিশের কাছে অধরা থাকে, তাতে পুলিশ কর্মীদেরই মনোবল ধাক্কা খায়। এরপর শাসকদলের চুনোপুঁটি নেতাও দুষ্কর্ম করে পুলিশকে আর ভয় পাবে না। আলিপুর, বোলপুরের প্রসঙ্গ তাঁদের মুখে মুখে ঘুরছে। তাঁদের প্রশ্ন, পুলিশ মার খাবে, অথচ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করবে না, এটাই কি এখন এ রাজ্যের দস্তুর?

ছবি না তোলার হুমকি। শনিবার বিষ্ণুপুর আদালত চত্বরে অভিযুক্ত গোপে দত্ত। ছবি: শুভ্র মিত্র।

ছবি না তোলার হুমকি। শনিবার বিষ্ণুপুর আদালত চত্বরে অভিযুক্ত গোপে দত্ত। ছবি: শুভ্র মিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পাত্রসায়র ও বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৫ ০০:৩৩
Share: Save:

থানায় ঢুকে পুলিশকে চড় মারায় মূল অভিযুক্ত গোপেকে দু’দিন পরেও গ্রেফতার করতে না পারায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে পুলিশের একাংশের মধ্যে। বিশেষত নিচুতলার পুলিশ কর্মীদের ক্ষোভ, একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইনস্পেক্টরকে (এএসআই) চড় মেরেও যদি কেউ পুলিশের কাছে অধরা থাকে, তাতে পুলিশ কর্মীদেরই মনোবল ধাক্কা খায়। এরপর শাসকদলের চুনোপুঁটি নেতাও দুষ্কর্ম করে পুলিশকে আর ভয় পাবে না। আলিপুর, বোলপুরের প্রসঙ্গ তাঁদের মুখে মুখে ঘুরছে। তাঁদের প্রশ্ন, পুলিশ মার খাবে, অথচ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করবে না, এটাই কি এখন এ রাজ্যের দস্তুর?

পঞ্চায়েতের টেন্ডার নিয়ে গোলমালে দলেরই এক ব্যক্তিকে গ্রেফতারের দাবিতে শুক্রবার রাতে পাত্রসায়র থানায় দলবল নিয়ে ঢুকে জেলা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) বাঁকুড়া জেলার প্রাক্তন সহ-সভাপতি সুব্রত দত্ত ওরফে গোপের বিরুদ্ধে ডিউটি অফিসার সুকান্ত দাস দে-কে চড়-থাপ্পড় মারার অভিযোগ ওঠে। এমনকী থানার ওসি রামনারায়ণ পাল থামাতে গেলে তাঁর সঙ্গেও গোপে-ঘনিষ্ঠদের ধস্তাধস্তি বাধে। তাঁকে প্রাণে মারারও হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। থানায় গোলমাল পাকিয়ে গোপে ও তাঁর সঙ্গীরা যখন বেরিয়ে যাচ্ছেন, তখনই পুলিশ বাহিনী সেখানে পৌঁছয়। ২৪ জন ধরা পড়েন। কিন্তু গোপে পালান। গোপে কী ভাবে অত পুলিশের মাঝে পালাতে পারল তা নিয়ে পুলিশের তো বটেই স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বেরও একাংশের সন্দেহ রয়েছে। পুলিশের দাবি, ঘটনার পরে হই হট্টগোলের মাঝে চম্পট দিয়েছে গোপে। তারপরেও শনিবার বিষ্ণুপুর আদালতে ধৃতদের তোলার সময় গোপেকে আদালত চত্বরে দেখা গেলেও পুলিশ তাঁকে কেন ধরেনি তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। প্রকাশ্যেই আদালতে ঘোরাফেরা করছিলেন তিনি। পরিচিত লোকজনদের সঙ্গে খোশ গল্পেও মেতে থাকতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। ছবি তুলতে গেলে চিত্র সংবাদিককে হুমকি পর্যন্ত দেন গোপে। দাবি করেন, সোনামুখীতে পুরভোটে দলের হয়ে কাজ করবেন। কেউ তাঁরা কিছু করতে পারবে না। তৃণমূলেরই একাংশের প্রশ্ন, পুলিশ কি গোপেকে ধরতে পারছে না, না কি ধরার চেষ্টা করছে না?

তৃণমূলের এক জেলা নেতার কথায়, “জেলা তৃণমূলের এক নেতা, যাঁর রাজ্যেও ভাল প্রভাব রয়েছে, তাঁর চাপেই পুলিশ গোপেকে হাতের কাছে পেয়েও গ্রেফতার করছে না। রবিবারও গোপেকে পাত্রসায়রে দেখা গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন তৃণমূলেরই একাংশ। এই ধরনের অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীর কুমার। রবিবারও তিনি দাবি করেছেন, “পুলিশ অভিযুক্তদের ধরতে সঠিক পদক্ষেপ নিচ্ছে।’’ প্রশ্ন অবশ্য তাতে থামছে না। পাত্রসায়র থানার ওসি থানায় হামলার ঘটনায় গোপে-সহ ৭০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। এসপি জানিয়েছিলেন, সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজও তাঁদের কাছে রয়েছে। তারপরেও দু’দিনে বাকিদের কেন পুলিশ ধরতে পারছে না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে নানামহলে। সব দেখে বিজেপির রাজ্য সহ-সভাপতি সুভাষ সরকারের কটাক্ষ, “এই সরকারের আমলে পুলিশই নিরাপদ নয়। তাহলে সাধারণ মানুষকে কে নিরাপত্তা দেবে?”

এ দিকে দলের বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর নেতা-কর্মী থেকে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, কমাধ্যক্ষকে মারধরে গোপের নাম জড়ানোর পরেও দল কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসছেন শাসকদলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরাও। তৃণমূলের পাত্রসায়র ব্লক সভাপতি স্নেহেশ মুখোপাধ্যায়ের একসময় অনুগামী ছিলেন গোপে। এখন অবশ্য দু’জনে ভিন্ন মেরুতে অবস্থান করেন। রবিবার স্নেহেশবাবু অভিযোগ করেন, “গোপের মতো দলেরই একাংশের কাজকর্মে এলাকার মানুষ আতঙ্কে হয়ে রয়েছেন। পুলিশকে আক্রান্ত হতে দেখে সাধারণ মানুষ আরও ভীত হয়ে পড়েছেন। কিন্তু দলের কাছে একাধিকবার গোপেকে বহিষ্কারের দাবি জানালেও তাঁরা কান দিচ্ছেন না।” জেলা পরিষদের সভাপধিপতি অরূপ চক্রবর্তী অবশ্য শনিবারই বলেছেন, “সময় হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” কর্মীদের পাল্টা প্রশ্ন, আর কত বাড়লে, দল তারপর ব্যবস্থা নেবে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

gope dutta patrasayar police agitation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE