Advertisement
E-Paper

দু’দিনের ফূর্তি ক্ষতি করছে পাহাড়ের

হাঁটতে গেলে মাটি খুঁজে পাওয়া ভার। থার্মোকলের থালা-বাটি যেন গদি বিছিয়ে গিয়েছে পায়ের নীচে। যত্রতত্র উড়ছে পেঁয়াজের খোসা, মুরগির পালক। কোথাও এঁটোকাঁটা-ডিমের খোলস-পচা খাবারের স্তূপ থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।

তিয়াষ মুখোপাধ্যায় ও রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ২৩:৫৮
শুশুনিয়ায় এমনই পরিবেশে চলে পিকনিক। ছবিটি তুলেছেন অভিজিৎ সিংহ।

শুশুনিয়ায় এমনই পরিবেশে চলে পিকনিক। ছবিটি তুলেছেন অভিজিৎ সিংহ।

হাঁটতে গেলে মাটি খুঁজে পাওয়া ভার। থার্মোকলের থালা-বাটি যেন গদি বিছিয়ে গিয়েছে পায়ের নীচে। যত্রতত্র উড়ছে পেঁয়াজের খোসা, মুরগির পালক। কোথাও এঁটোকাঁটা-ডিমের খোলস-পচা খাবারের স্তূপ থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। ইতিউতি পড়ে আইসক্রিমের কাপ, প্লাস্টিক-গ্লাস, জলের বোতল। সকাল থেকে বিকেল তারস্বরে গান-বাজনা।

বাঁকুড়ার শুশুনিয়া পাহাড়ের ছবিটা শীতকালে ঠিক এমনই। সৌজন্যে, লাগামছাড়া পিকনিক।

সম্প্রতি নব্বই জন ছেলেমেয়ে নিয়ে শুশুনিয়া পাহাড়ে ‘রক ক্লাইম্বিং কোর্স’ করিয়ে এসেছেন ইছাপুরের ‘অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি মাউন্টেনিয়ার্স অ্যান্ড ট্রেকার্স’ ক্লাবের সম্পাদক বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়। পাহাড় চড়ায় হাতেখড়ি দেওয়ার পাশাপাশি প্রকৃতিপাঠও শিখেছেন ছাত্রছাত্রীরা।

বিপ্লববাবুর উদ্বেগ, ‘‘ফি বছর দূষণের পাল্লা বেড়েই চলেছে এই পাহাড়ে। পিকনিকের সংখ্যা যত বাড়ছে, ততই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এলাকার জীববৈচিত্র্য। ধুলোয় ঢেকে যাচ্ছে আকাশ। আর এখন নতুন ফ্যাশন হয়েছে, চড়া শব্দে বক্স না-বাজালে আনন্দ হয় না।’’ এ রকম চলতে থাকলে খুব তাড়াতাড়িই নষ্ট হয়ে যাবে পাহাড়টা!—আশঙ্কা তাঁর।

ছোটনাগপুর মালভূমির অংশ এই শুশুনিয়া পাহাড় সারা রাজ্যের প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের অন্যতম আকর্ষণস্থল। পর্বতারোহণের প্রাথমিক পাঠস্থল হিসেবেও এর খ্যাতি। শীতকাল জুড়ে অজস্র পর্বতারোহণ ক্লাব তাঁবু বিছোয় পাহাড়ের কোলে। রক ক্লাইম্বিংয়ে হাত পাকায় অসংখ্য কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী। শিশুদের নিয়ে বসে প্রকৃতিপাঠের আসর। আর এর মধ্যেই হুজুগে মানুষের পিকনিক-আমোদে বিপজ্জনক হারে বেড়ে চলেছে পাহাড়ের দূষণ।

আনন্দ-ফূর্তির নামে পাহাড়ের সর্বনাশে ক্ষুব্ধ স্থানীয় মানুষেরাও। শুশুনিয়া মোড়ে খাবারের দোকানের ব্যবসায়ী ঝাড়ুপ্রসাদ দত্তের ক্ষোভ, প্রতি বছর এই শীতের সময়ে নোংরায়, দূষণে প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে ওঠে তাঁদের। সকাল থেকে ধোঁয়া উড়িয়ে আসতে থাকে পরের পর বাস, ম্যাটাডর। প্রতিটি দলের সঙ্গেই বক্স বাজিয়ে গানের ব্যবস্থা। সারা এলাকা নোংরা করে দিনভর হুল্লোড় করে ফিরে যায় পিকনিক-পার্টি। বড়দিন বা বর্ষবরণের দিনে তো পাহাড়ের নীচে পা ফেলার জায়গা থাকে না।

স্থানীয় বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ, এত মানুষকে দেওয়ার মতো শৌচাগার পরিষেবা নেই শুশুনিয়ার পাহাড়ি এলাকায়। ফলে পিকনিকের মরসুমে পাহাড়ে-জঙ্গলে বহু মানুষ মলমূত্র ত্যাগ করায় এলাকা খুবই নোংরা হয়। ঝাড়ুপ্রসাদ বললেন, ‘‘লোকে এক বা দু’দিন মজা করতে এসে পাহাড়ের যে ক্ষতিটা করে দিয়ে যায়, আমাদের সারা বছর তার ফল ভোগ করতে হয়।’’

অভিযোগ, পিকনিকের অত্যাচার তো রয়েছেই, সেই সঙ্গে ছোট ছোট অস্থায়ী খাবারের দোকান, ঠেলাগাড়ি— এ সবের ঠোঙা, প্লাস্টিকের ব্যবহারে কোনও নিয়ন্ত্রণ না-থাকায় এলাকায় আবর্জনা আরও বেড়েছে। প্রশ্ন, এই আবর্জনা সাফাইয়ের দায়িত্ব কে নেবে? সম্প্রতি বাঁকুড়ার অন্য একটি পর্যটনস্থল মুকুটমণিপুরে প্লাস্টিক নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে প্রশাসন। শুশুনিয়ার ক্ষেত্রেও তেমন কিছু করা যেতে পারে কি না, প্রস্তাব রেখেছেন পরিবেশপ্রেমীরা।

চলতি পিকনিক-মরসুমেই শুশুনিয়া ঘুরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মহকুমাশাসক (বাঁকুড়া সদর) অসীম কুমার বালা। পাহাড় চত্বর পরিষ্কার করার নির্দেশ দিয়েছেন পঞ্চায়েতকে। ছাতনা থানার পুলিশ জানিয়েছে, পঞ্চায়েতের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে সাফাই চলবে।

সাফাইয়ের পরেও যে ফের নোংরা হবে না পাহাড়, তার নিশ্চয়তা কী? অসীমবাবু বলেন, ‘‘খুব তাড়াতাড়িই এলাকায় প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করার কথা ঘোষণা করা হবে। মাইক, সাইনবোর্ড দিয়ে প্রচারও করা হবে এই বিষয়ে। থাকবে পুলিশের কড়া নজরদারি। নির্দেশ না মানলে কড়া পদক্ষেপও করা হবে প্রশাসনের তরফে।’’

সে দিকেই এখন তাকিয়ে রয়েছেন পরিবেশপ্রেমীরা।

Susunia Hill Picnic Party
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy