রেলযাত্রী পক্ষ-র পরে হমসফর সপ্তাহ।
রেলের যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্য বাড়াতে পরপর দু’বছরে দু’টি বিশেষ কর্মসূচি নিল রেল। কিন্তু যাত্রীদের দুরবস্থা কি ঘুচল? ২৬ মে থেকে ১ জুন রেলের ‘হমসফর সপ্তাহ’ শেষে এই প্রশ্নটাই ঘুরপাক খাচ্ছে ট্রেনের কামরায় যাত্রীদের মধ্যে। তাঁদের বক্তব্য, রেলের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) থেকে ডিআরএম প্রমুখ কর্তারা রেল সফর করে যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলছেন। কিন্তু তারপরে ছোটখাটো কিছু সমস্যার সমাধান হলেও সামগ্রিক ভোলবদল হচ্ছে না কেন? কেন এখনও প্রত্যন্ত স্টেশনে জল মিলছে না, কেন দূরপাল্লার ট্রেনের শৌচালয়ে ঢুকলে দুর্গন্ধে বমি উঠে আসে? রেলকর্মীদেরও ক্ষোভ, কতদিন তাঁদের আবাসনের ছাদ ফুটো ঘরে থাকতে হবে, ভেঙে পড়া দেওয়াল ও মেঝেই বা কবে সংস্কার করা হবে?
রেলমন্ত্রকের দায়িত্ব পাওয়ার পরেই রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু রেলের কর্তাদের সঙ্গে যাত্রীদের সরাসরি যোগাযোগ তৈরির চেষ্টা শুরু করেছেন। রেলযাত্রী পক্ষ, হমসফর সপ্তাহের মতো কর্মসূচি নিয়ে রেলমন্ত্রক চাইছে রেলের পদস্থ কর্তারা প্যাসেঞ্জার ট্রেনে চেপে, সাধারণ কামরায় ভ্রমণ করে যাত্রীদের মনের কথা জানুন। তাঁদের সমস্যা জেনে সমাধানের কাজ করুন।
ওই কর্মসূচির অঙ্গ হিসাবে সপ্তাহজুড়ে প্যাসেঞ্জার ট্রেনের সাধারণ কামরায় চড়ে যাত্রীদের সমস্যার কথা শুনেছেন ডিআরএম অনশূল গুপ্ত-সহ ডিভিশনের সমস্ত কর্তারা। পরিদর্শন করেছেন বিভিন্ন স্টেশন। ঝাড়ুহাতে সাফাই করেছেন প্লাটফর্ম-সহ আশপাশের এলাকাও।
কর্তারা ৪০টি ট্রেনে চেপে, ৬৫টি স্টেশনে পরিদর্শন করেছেন। হাজার দুয়েক যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে তাঁদের সমস্যা শুনেছেন রেলের কর্তারা। ২৬টি রেল কলোনি পরিদর্শন করা হয়েছে। মোট ২৬০টি অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। তার মধ্যে ১৬৭টির তৎক্ষণাৎ নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে কথা বলে তাঁদের সমস্যাও শুনেছেন রেলের কর্তারা। রেল কর্তাদের দাবি, হমসফর সপ্তাহ ঘিরে যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যের উন্নতিতে একাধিক কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল। এই কর্মসূচিতে সাধারণ যাত্রীদের কাছ থেকে সাড়া ও সাহায্যে ভালই মিলেছে। রেলের কর্তাদের সামনে পেয়ে বিভিন্ন সমস্যার কথা জানিয়েছেন যাত্রীরা। যে গুলি ডিভিশনের পক্ষে মেটানো সম্ভব সেগুলি দ্রুত মেটানো হয়েছে, অন্যান্য দাবি ও অভিযোগ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।
কিন্তু রেলকর্মী সংগঠন থেকে নিত্যযাত্রী সংগঠন সকলেরই অভিযোগ, ঘটা করে দু’বছরে দু’টি কর্মসূচি নেওয়া হলেও অবস্থার খুব একটা উন্নতি হয়নি। নিত্যযাত্রী সমিতির অভিযোগ, রেলকর্তারা স্টেশনে ঘুরে যাত্রীদের সাথে কথা বলে তাঁদের সমস্যা শুনেছেন। কিন্তু এখনও আদ্রা ডিভিশনের বহু প্রত্যন্ত স্টেশনে জলের ব্যাপক সমস্যা রয়েছে। রেলওয়ে ইউজার্স অর্গানাইজেশন নামের ওই যাত্রী সংগঠনের কর্মকর্তা দেবু চক্রবর্তী অভিযোগ তুলেছেন, ‘‘প্রত্যন্ত স্টেশনগুলিতে জলের সমস্যা মেটানোর দাবি আমরা বহুবার রেল কর্তৃপক্ষের কাছে জানিয়েছি। কিন্তু সমস্যা মেটেনি। যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্য বাড়ানোর জন্য এই সব কর্মসূচির পরে সেই সব সমস্যা রয়েই গিয়েছে।’’
শুধু যাত্রী সাধারণই নয়, রেলকর্মীদের মধ্যেও নানা ক্ষোভ রয়েছে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক রেলকর্মী সংগঠনের এক নেতার কথায়, ‘‘পুরনো রেল আবাসনে বৃষ্টি হলেই ছাদ থেকে জল পড়ে। ঘরের মেঝে, দেওয়াল ফাটল থেকে চারা গাছ উঁকি মারে। এইসব ছবি বদল এখনও হয়নি।” যাত্রী ও কর্মী সংগঠনের বক্তব্য, নির্দিষ্ট কোনও কর্মসূচি পালন করার সময়েই শুধু রেলের কর্তা ও কর্মীদের মধ্যে তৎরপতা লক্ষ করা যায়। বছরের বাকি সময়ে সমস্যা সেই একই থেকে যায়। খোঁজ খবর করলে, জানা যায়, সমস্যার কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। অনুমোদন এলেই কাজ হবে। তাহলে ঘটা করে এই কর্মসূচি নেওয়ার অর্থ কী?
বুধবার হমসফর সপ্তাহের কর্মসূচি শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন আদ্রার ডিআরএম-সহ রেলের পদস্থ কর্তারা। পানীয় জলের সমস্যা এখনও যে পুরোপুরি মেটানো যায়নি, তা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন আদ্রার রেল কর্তৃপক্ষ। এই বিষয়ে রেলের কিছু পরিকল্পনা রয়েছে বলে আশ্বাস দিয়েছেন ডিআরএম। তিনি বলেন, ‘‘অনেক স্টেশনে টিউবওয়েল বসানোর কাজ শুরু হচ্ছে। এ ছাড়া যে সব স্টেশনের পাশে রাজ্য সরকারের জলপ্রকল্প রয়েছে, সেই স্টেশনগুলিতে ওই প্রকল্প থেকে জলের সংযোগ নেওয়া হবে।” বেশকিছু স্টেশনে গভীর টিউবওয়েল বসিয়ে ওভারহেড ট্যাঙ্ক তৈরি করে জলসরবরাহের পরিকল্পনা তাঁদের রয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিআরএম।
রেলের দাবি, হমসফর সপ্তাহে রেলের সব শ্রেণির কর্মীদের তাঁদের নির্দিষ্ট দায়িত্ব পালনের বিষয়ে আরও সচেতন করাই অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল। ডিআরএমের কথায়, ‘‘কোনও কর্মসূচিতে পরিষেবার মান উন্নয়ন করার জন্য রেলের আধিকারিকেরা গিয়ে কাজটা শুরু করিয়ে দেন। কিন্তু যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্য দেওয়া একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। শুধু একটা দিনের মধ্যেই তা সীমাবদ্ধ নয়। এই ধরনের কর্মসূচির পরে রেলের অন্যান্য কর্মীরা তাঁদের নিজেদের দায়িত্ব পালন করবে বলে আমরা আশাবাদী।’’