Advertisement
E-Paper

রাস্তায় ফেলে মার মহিলা কর্মাধ্যক্ষকে

পাত্রসায়রে তৃণমূলের গোষ্ঠী-বিবাদ ক্রমেই ঘোরালো আকার নিচ্ছে। এক সময় যা ছিল নিছকই দ্বন্দ্ব, এখন তা চেহারা নিচ্ছে মারধর, হিংসার। একবার আক্রান্ত হওয়ার সবে দু’মাস পেরিয়েছে। ফের হামলার মুখে পড়লেন তৃণমূল পরিচালিত পাত্রসায়র পঞ্চায়েত সমিতির শিশু ও নারী কল্যাণ দফতরের কর্মাধ্যক্ষ সুনীতি মুখোপাধ্যায়। আত্মীয় বাড়ি থেকে ফেরার পথে প্রকাশ্য গ্রামের রাস্তায় ফেলে তৃণমূলের ওই মহিলা কর্মাধ্যক্ষকে বেধড়ক মারধর করা হল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৫ ০১:১৯
ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আহত সুনীতিদেবী। মঙ্গলবার। ছবি: দেবব্রত দাস।

ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আহত সুনীতিদেবী। মঙ্গলবার। ছবি: দেবব্রত দাস।

পাত্রসায়রে তৃণমূলের গোষ্ঠী-বিবাদ ক্রমেই ঘোরালো আকার নিচ্ছে। এক সময় যা ছিল নিছকই দ্বন্দ্ব, এখন তা চেহারা নিচ্ছে মারধর, হিংসার।

একবার আক্রান্ত হওয়ার সবে দু’মাস পেরিয়েছে। ফের হামলার মুখে পড়লেন তৃণমূল পরিচালিত পাত্রসায়র পঞ্চায়েত সমিতির শিশু ও নারী কল্যাণ দফতরের কর্মাধ্যক্ষ সুনীতি মুখোপাধ্যায়। আত্মীয় বাড়ি থেকে ফেরার পথে প্রকাশ্য গ্রামের রাস্তায় ফেলে তৃণমূলের ওই মহিলা কর্মাধ্যক্ষকে বেধড়ক মারধর করা হল। মেয়েকে বাঁচাতে গিয়ে মার খেলেন তাঁর মা। মঙ্গলবার বিকেলে ঘটনাটি ঘটেছে পাত্রসায়র থানার বেতুড় গ্রামে।

এই হামলার পিছনেও তৃণমূলেরই একটি গোষ্ঠীর লোকজন রয়েছে বলে অভিযোগ। স্থানীয় রাজনীতিতে সুনীতিদেবী পাত্রসায়র ব্লক তৃণমূল সভাপতি স্নেহেশ মুখোপাধ্যায়ের অনুগামী। তাঁর দাবি, স্নেহেশবাবুর বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা বাবলু সিংহের দলবলই এ দিন তাঁর উপরে হামলা চালিয়েছে। গোটা ঘটনায় পাত্রসায়রে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আরও একবার প্রকাশ্যে এসেছে। ঘটনাচক্রে তৃণমূলের সাংসদ তথা দলের তরফে বাঁকুড়া জেলার পর্যবেক্ষক শুভেন্দু অধিকারী মঙ্গলবারই বাঁকুড়ায় এসেছিলেন পুরভোট নিয়ে কর্মিসভা করতে। সুনীতিদেবীর উপরে হামলার ঘটনা তাঁর কানেও পৌঁছেছে। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘ঘটনার কথা শুনেছি। দলের জেলা সভাপতিকে বলেছি, ব্যাপারটা ভাল করে খোঁজ নিতে।’’ পাত্রসায়রে তৃণমূলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব অনেক দিন ধরেই চলছে এবং বারবার অভিযোগ উঠেছে, জেলা নেতৃত্ব ওই দ্বন্দ্ব থামাতে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। এ প্রসঙ্গে শুভেন্দুর মন্তব্য, ‘‘পাত্রসায়রের পুরো পরিস্থিতির উপরেই আমার নজর রয়েছে!’’

স্থানীয় সূত্রের খবর, এ দিন বিকেল পৌনে চারটে নাগাদ পাটিত গ্রাম থেকে মোটরবাইকে বাড়ি ফিরছিলেন সুনীতিদেবী। বাইকের পিছনে বসেছিলেন তাঁর মা। অভিযোগ, বেতুড় গ্রামের তেঁতুলপাড়ার চৌমাথায় তাঁর বাইক আটকান তৃণমূলের অন্য গোষ্ঠীর লোকেরা। লাঠি, রড নিয়ে বাইক ভাঙচুর করা হয়। টাল সামলাতে না পেরে সুনীতিদেবী রাস্তায় পড়ে যান। এর পর তাঁর মায়ের সামনেই সুনীতিদেবীকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। গুরুতর জখম অবস্থায় ওই তৃণমূল নেত্রীকে দলেরই কর্মীরা উদ্ধার করে প্রথমে পাত্রসায়র ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করান। তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র সূত্রে জানা গিয়েছে, সুনীতিদেবীর দু’টি পা ও বাঁ হাত ভেঙেছে।


সবিস্তার জানতে ক্লিক করুন।

এ দিন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বেডে শুয়ে সুনীতিদেবী বলেন, “আত্মীয় বাড়ি থেকে মাকে নিয়ে ফিরছিলাম। তেঁতুলপাড়ার চৌরাস্তায় বেতুড় গ্রামের মৃত্যুঞ্জয় রায়, জয়দেব মুখোপাধ্যায়, বাপন মালি, ভাস্কর রায়, রাজীব রায়-সহ কয়েক জন লাঠি, রড নিয়ে আমার পথ আটকায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মারতে শুরু করে। ‘আমাকে কেন মারছো’ প্রশ্ন করতেই ওরা বলে, ‘বাবলু সিংহ বলে দিয়েছে, তোকে শেষ করে দিতে!’ এর পর এলোপাথাড়ি মারতে শুরু করে। রাস্তায় পড়ে গেলে আমার শ্লীলতাহানিও করে।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, তিনি ব্লক সভাপতি স্নেহেশবাবুর অনুগামী। তাই বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর নেতা বাবলু সিংহের আশ্রিত দুষ্কৃতীরা তাঁর উপরে পরিকল্পনা মাফিক হামলা চালিয়েছে এবং সম্মানহানির চেষ্টা করেছে। চোখের সামনে রাস্তায় ফেলে যেভাবে তাঁর মেয়েকে মারধর করা হয়েছে, তাতে ক্ষোভে ফুঁসছেন সুনীতিদেবীর বিধবা মা সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ও। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মেয়ের পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে এ দিন তিনি বললেন, “আমার মেয়ে জীবন দিয়ে দলটা করে। কিন্তু, দলেরই কিছু শত্রু ওকে রাজনৈতিক ভাবে শেষ করার জন্য এমন ভাবে মারল।’’

সুনীতিদেবীর উপরে হামলার ঘটনা অবশ্য এই প্রথম নয়। এ বছরই ২২ জানুয়ারি পাত্রসায়র ব্লক অফিসের সভাকক্ষে ব্লক সংসদের বাষির্ক সভা চলাকালীনই তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। ব্লক অফিসে তাণ্ডব চালাল তৃণমূলের লোকজন। বেধড়ক মার খান পাত্রসায়র পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সুচাঁদ দাস এবং নারী ও শিশুকল্যাণ কর্মাধ্যক্ষ সুনীতিদেবী। এই তিন জনই স্নেহেশবাবুর অনুগামী। ওই হামলাতেও অভিযোগ উঠেছিল পাত্রসায়র পঞ্চায়েত সমিতিরই সদস্য বাবলু সিংহ ও তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে। এ দিন ফের সুনীতিদেবীর উপরে হামলা হওয়ায় ব্লক সভাপতি তাঁর ক্ষোভ চেপে রাখেননি। স্নেহেশবাবু বলেন, “দলের দুর্দিনের কর্মী সুনীতির উপরে অতর্কিতে হামলা চালানো হয়েছে। একের পর এক ঘটনা ঘটলেও দলের জেলা নেতৃত্ব হাত গুটিয়ে বসে রয়েছেন। যাঁরা এ সব করছেন তাঁরা যে দলের আসল কর্মীদের মারতে চাইছেন, তা একের পর এক এই সব ঘটনায় পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে!’’ মঙ্গলবার রাতেই পাত্রসায়র থানায় মৃত্যুঞ্জয়, জয়দেব, বাপন-সহ ১১ জনের নামে তাঁর মেয়েকে মারধর ও শ্লীলতাহানির অভিযোগ দায়ের করেছেন সন্ধ্যাদেবী। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীর কুমার বলেন, ‘‘অভিযোগ হয়েছে। তদন্ত চলছে।’’ অভিযুক্তদের ধরা হবে বলেও তিনি আশ্বাস দিয়েছেন।

অভিযুক্তদের সঙ্গে বারবার চেষ্টা করেও এ দিন যোগাযোগ করা যায়নি। তবে, তৃণমূল নেতা বাবলু সিংহ দাবি করেছেন, “আমি ঘটনার কথা জানি না। ওই সময় আমি সোনামুখীতে ছিলাম। কী হয়েছে, পরে খোঁজ নিয়ে বলব।’’ জেলা পরিষদের সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী আবার দাবি করেছেন, যাঁদের নামে অভিযোগ হয়েছে, তাঁরা তৃণমূলের কেউ নন। বরং সবাই নাকি সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতী!

TMC Bankura Woman beaten up Suniti mukhopadhyay South Bengal news Patrasayar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy