Advertisement
E-Paper

ভরদুপুরে পুড়ল হিড়বাঁধের জঙ্গল

গত শুক্রবার হিড়বাঁধের বিরাডির জঙ্গলের শুকনো পাতায় আগুন লেগেছিল। সেই আগুন দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়তে থাকে। বাড়ি থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে জঙ্গলে আগুনের লেলিহান শিখা দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন জঙ্গল লাগোয়া বিরাডি ও বেলাডি গ্রামের বাসিন্দারা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৬ ০১:৫৯
জ্বলে খাক সারি সারি গাছ। যে সব গাছে এখনও সবুজ রয়েছে, ঝলসে গেছে তাও।—নিজস্ব চিত্র

জ্বলে খাক সারি সারি গাছ। যে সব গাছে এখনও সবুজ রয়েছে, ঝলসে গেছে তাও।—নিজস্ব চিত্র

বিরাডির পর ইটামারা— এক সপ্তাহ কাটতেই ফের আগুন লাগল জঙ্গলে। শুক্রবার দুপুরে বাঁকুড়ার হিড়বাঁধ থানার ইটামারা জঙ্গলের ঘটনা। আগুন দাবানলের চেহারা নিতে চলায় খবর যায় দমকলের কাছে। শেষে দমকলের একটি ইঞ্জিন প্রায় ঘণ্টা তিনেকের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে আগুনে পুড়ে প্রায় শতাধিক গাছ নষ্ট হয়ে গিয়েছে বলে আশঙ্কা করছে বনদফতর।

বনদফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল ১১টা নাগাদ হাতিরামপুর-মানবাজার রাস্তার থেকে কিছুটা দূরে ইটামারার জঙ্গলে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। এলাকার বাসিন্দাদের তা নজরে আসে। তাঁরা থানায় খবর দেন। হিড়বাঁধ থানার ওসি প্রসেনজিৎ বিশ্বাস বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। পুলিশকর্মী, সিভিক ভল্যান্টিয়ার এবং স্থানীয় বাসিন্দারা আগুন নেভানোর চেষ্টা চালাতে থাকেন। দুপুর ১২টা নাগাদ খাতড়া থেকে দমকলের একটি ইঞ্জিন ইটামারার জঙ্গলে এসে পৌঁছয়। টানা প্রায় ৩ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। অবশ্য ততক্ষণে জঙ্গলের প্রায় তিনশো মিটার এলাকা জুড়ে থাকা শাল, মহুয়া, শিরিষ, ইউক্যালিপটাস, সোনাঝুরি-সহ বিভিন্ন প্রজাতির শতাধিক গাছের গোড়া ও পাতা ঝলসে গিয়েছে।

গত শুক্রবার হিড়বাঁধের বিরাডির জঙ্গলের শুকনো পাতায় আগুন লেগেছিল। সেই আগুন দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়তে থাকে। বাড়ি থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে জঙ্গলে আগুনের লেলিহান শিখা দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন জঙ্গল লাগোয়া বিরাডি ও বেলাডি গ্রামের বাসিন্দারা। ওই আগুন গ্রামে ছড়িয়ে পড়তে পারে এই আশঙ্কায় অনেকেই বাড়ি থেকে তাঁদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দ্রুত অন্যত্র সরিয়ে ফেলতে শুরু করে দেন। অনেকেই আবার নিজেদের খড়ের ছাউনি দেওয়া বাড়িতে জল ঢালতে থাকেন। প্রায় ৬ ঘণ্টা ধরে দমকলের তিনটি ইঞ্জিনের চেষ্টায় শেষে আগুন আয়ত্তে আসে। তবে সেই অগ্নিকাণ্ডের জেরে বন দফতরের কয়েক লক্ষ টাকার গাছ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। আগুন থেকে দু’টি গ্রাম ভস্মীভূত হয়ে যেতে পারত বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলন খোদ বন দফতরের হিড়বাঁধ রেঞ্জ অফিসার শুকদেব মাহাতো। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের হিড়বাঁধের জঙ্গলে আগুন লাগায় উদ্বিগ্ন বনদফতর।

সম্প্রতি হিড়বাঁধের গোপালপুর অঞ্চলের ধানারাঙি গ্রামে এক বিজেপি নেতার বাগানে আগুন লেগেছিল। পতিত জমিতে বনসৃজন করেছিলেন ওই নেতা ও তাঁর পরিবারের ৬ জন সদস্য। আগুন লেগে গাছের গোড়া ও পাতা ঝলসে অনেক টাকার ক্ষতি হয়েছিল তাঁদের। তবে সেই ঘটনায় দমকল ডাকতে হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দারাই পুকুর থেকে জল তুলে আগুন নিভিয়েছিলেন।

এ দিন হিড়বাঁধ রেঞ্জের আধিকারিক শুকদেব মাহাতো বলেন, “ইটামারার জঙ্গলে আগুন লাগার খবর পেয়ে বনকর্মীদের সেখানে পাঠিয়েছিলাম। প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, জঙ্গলে পাতা বা কাঠ কুড়োতে গিয়ে কেউ জ্বলন্ত বিড়ি-সিগারেটের টুকরো ফেলে দিয়েছিলেন। তার থেকেই পাতায় আগুন লেগে ছড়িয়ে পড়ে।’’ বিরাডির জঙ্গলের ক্ষেত্রেও বিড়ির টুকরো থেকে আগুন লাগার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছিলেন তিনি। পর পর এই ঘটনার পরে বনদফতর সচেতনতার প্রচারে আরও জোর দেওয়ার কথা ভাবতে শুরু করেছে।

দমকল এবং স্থানীয়দের তৎপরতায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা গেলেও আগুনে গাছের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়ে চলেছে।

বনদফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, আগুনে গাছের গুঁড়ি এবং পাতা বেশি ঝলসে গেলে তার বাঁচার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়। বিরাডির জঙ্গল এবং ধানারাঙি গ্রামের বিজেপি নেতার জমিতে গাছের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল আগুন লাগার পরে। শুকদেববাবু জানান, শুক্রবারের আগুনে ইটামারার জঙ্গলেও বড় গাছের গোড়া এবং ছোট গাছগুলির ডাল-পাতা আগুনের আঁচে ঝলসে গিয়েছে। এর জেরে বেশ কিছু গাছ নষ্ট হয়ে যেতে পারে বলে তাঁর আশঙ্কা।

হিড়বাঁধ থানার ওসি প্রসেনজিৎ বিশ্বাস বলেন, “আগুন লাগার খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে খাতড়া দমকল কেন্দ্রে জানানো হয়। দ্রুত নেভানোর চেষ্টা শুরু করায় পরিস্থিতি হাতের বাইরে যায়নি। আগুন পুরোপুরি নেভানো গিয়েছে।’’ কিন্ত দাবদাহে জেরবার মানুষজন যখন গাছের প্রয়োজনীয়তা একটু একটু করে টের পেতে শুরু করেছেন, তখন অসাবধনতার ফলে বারে বারে জঙ্গলের বহু গাছ পুড়ে যাওয়ায় চিন্তার ভাঁজ পড়তে শুরু করেছে বনকর্তাদের কপালে।

Hirbandh forest trees burnt fire
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy