E-Paper

অ্যাম্বুল্যান্সে অন্তঃসত্ত্বা, গাছ ফেলে ছিনতাই

অ্যাম্বুল্যান্স চালক চকমণ্ডলা গ্রামের বাসিন্দা সামিরুল শেখ বলেন, ‘‘আশা দিদির ফোন পেয়ে রাত বারোটা নাগাদ কুসুমডই পৌঁছই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০২৫ ০৭:২২
এই অ্যাম্বুল্যান্সটি থামিয়ে ছিনতাই করা হয় বলে অভিযোগ।

এই অ্যাম্বুল্যান্সটি থামিয়ে ছিনতাই করা হয় বলে অভিযোগ। নিজস্ব চিত্র।

অ্যাম্বুল্যান্সের ভিতরে প্রসব যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন অন্তঃসত্ত্বা। কিন্তু গাড়ি এগোচ্ছে না। কারণ, গাছ ফেলে অ্যাম্বুল্যান্সে আটকে ছিনতাই চলছে। শনিবার গভীর রাতে এমনই ঘটল রামপুরহাট শহর থেকে ১০ কিলোমিটার পশ্চিমে রামপুরহাট থানার অধীন চাকাইপুর এবং ছোড়া গ্রামের মাঝে চকমণ্ডলা যাওয়ার রাস্তার একটি বাঁকে।

গয়না ও নগদ ছিনিয়ে নেওয়ার পরেই গাড়িটি ছেড়ে দেওয়া হয়। রবিবার রামপুরহাটের এক নার্সিংহোমে পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছেন ওই অন্তঃসত্ত্বা। তবে মা ও শিশুর ক্ষতির আশঙ্কা ছিল বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। ঘটনায় কেউ আটক বা গ্রেফতার না হওয়ায় পুলিশি নজরদারি ও তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জেলা পুলিশ সুপার আমনদীপ বলেন, ‘‘খুব খারাপ ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার তদন্ত চালাচ্ছে। আশা করা যায় দ্রুত কিনারা করা যাবে।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, অ্যাম্বুল্যান্সটি রামপুরহাট ১ ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিশ্চয় যান হিসেবে ভাড়ায় খাটে। রামপুরহাট থানার কুসুমডই গ্রাম প্রসব যন্ত্রণায় কাতর অন্তঃসত্ত্বা পায়েল মাল, তাঁর পরিবারের লোকজন এবং এক জন আশাকর্মীকে নিয়ে অ্যাম্বুল্যান্সটি চকমণ্ডলা গ্রামে রামপুরহাট ১ ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আসছিল। পথে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।

অ্যাম্বুল্যান্স চালক চকমণ্ডলা গ্রামের বাসিন্দা সামিরুল শেখ বলেন, ‘‘আশা দিদির ফোন পেয়ে রাত বারোটা নাগাদ কুসুমডই পৌঁছই। যেতে কোনও বাধা পাইনি। হাসপাতালে আসার পথে রাত দেড়টা নাগাদ দেখতে পাই একটি বাঁকে গাছ পড়ে আছে। গাছ সরানোর জন্য গাড়ি থেকে নামতেই রাস্তার ধারের ঝোপ থেকে ছ’জন অপরিচিত ব্যক্তি আমাকে প্রথমে গাড়ির হেডলাইট বন্ধ করতে বলে। পরে গাড়ির ভিতরের আলোও বন্ধ করতে বলে। এর পরেই আমার কাছে যা টাকা আছে, সেটা বের করতে বলে।’’

সামিরুলের অভিযোগ, ‘‘ওদের মধ্যে তিন জনের কাছে ধারাল অস্ত্র ছিল। এক জনের কাছে পিস্তল জাতীয় কিছু ছিল। আমি ভয় পেয়ে আমার কাছে থাকা টাকা ওদের বের করে দিই। ছিনতাইকারীরা এর পরে রোগীর পরিজন এবং আশা দিদির কাছে থেকেও টাকা ও গয়না ছিনতাই করে।’’ আশাকর্মী দুলুরানি মণ্ডল বলেন, ‘‘আমার কানের দুল ও কাছে থাকা টাকা ছিনতাই করে। আমার আঙুল মুচড়ে দেয়।’’

অ্যাম্বুল্যান্সে থাকা পায়েলের স্বামী স্বামী রণজিৎ মাল বলেন, ‘‘আমার স্ত্রী প্রসব যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিল। ওই সময়ে ছিনতাইকারীরা রাস্তায় গাছ ফেলে আমাদের আটকেছিল। স্ত্রী’র খারাপ অবস্থার কথা বললেও ওরা আমাদের কাছ থেকে টাকা ও গয়না ছিনতাই করে। দশ মিনিট পরে রাস্তা থেকে গাছ সরিয়ে নেয়।’’

ছিনতাইয়ের মিনিট ১৫ বাদে পায়েলকে নিয়ে চকমণ্ডলায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পৌঁছয় অ্যাম্বুল্যান্সটি। তত ক্ষণে পায়েলের রক্তচাপ বেশ বেড়ে গিয়েছে। চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে পায়েলকে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। পাশাপাশি, কর্তব্যরত চিকিৎসক ছিনতাইয়ের কথা ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিককে জানান। তিনিই পুলিশে খবর দেন। হাসপাতালে পুলিশ এসে ঘটনার তদন্ত শুরু করে।

মেডিক্যাল অফিসার আনিসুর রহমান স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পায়েলকে দেখেছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘রোগীর রক্তচাপ বেড়ে গিয়েছিল। ইঞ্জেকশন দিয়ে স্থিতাবস্থায় আনা হয়। যে কোনওসময় খারাপ কিছু ঘটতে পারত। তাই রামপুরহাট মেডিক্যালে রেফার করা হয়।’’ তবে পরিবারের পক্ষ থেকে পায়েলকে রামপুরহাটেরই একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। রবিবার সেখানে অস্ত্রোপচার করে পুত্রসন্তান প্রসব করে তিনি।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Rampurhat Hooliganism

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy