Advertisement
E-Paper

কটূক্তির প্রতিবাদ করায় ঘর ভাঙচুর

কলেজের ছেলেরা মায়ের প্রতি অশালীন মন্তব্য করেছে শুনে নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারেননি ছেলে। বাড়ির উল্টো দিকের কলেজের ছেলেদের কি না এত সাহস! অভিযুক্তদের ধরে এনে মায়ের কাছে ক্ষমা চাইয়ে তবেই শান্ত হয়েছিলেন বোলপুরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা প্রবাল পাল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০১৬ ০১:০৬
ভাঙচুরের চিহ্ন। শুক্রবার বোলপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র।

ভাঙচুরের চিহ্ন। শুক্রবার বোলপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র।

কলেজের ছেলেরা মায়ের প্রতি অশালীন মন্তব্য করেছে শুনে নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারেননি ছেলে। বাড়ির উল্টো দিকের কলেজের ছেলেদের কি না এত সাহস! অভিযুক্তদের ধরে এনে মায়ের কাছে ক্ষমা চাইয়ে তবেই শান্ত হয়েছিলেন বোলপুরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা প্রবাল পাল।

নিগৃহীতের পরিবারের অভিযোগ, বৃহস্পতিবার দুপুরের ওই ঘটনার কিছু পরেই সন্ধ্যায় পড়ুয়াদের একাংশ বাড়িতে পাল্টা চড়াও হয়। ভাঙচুর করে আসবাব। হুমকি, গালিগালাজের পাশাপাশি কিছু টাকাও ছিনতাই হয়েছে বলে অভিযোগ। শুক্রবার এই মর্মেই বোলপুর থানায় লিখিত ভাবে অভিযোগ জানিয়েছেন প্রবালের বাবা শ্যামলকুমার পাল।

প্রবালের দাবি, ‘‘এটা দাদাগিরি ছাড়া আর কিছু না। অপরাধ করেও অভিযুক্তেরা ক্ষমা চাইতে নারাজ ছিল। পরে অবশ্য ওরা মায়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয়। সেটাতে বোধহয় ওদের আত্মসম্মানে লেগেছিল। তাই পরে বাড়িতে চড়াও হয়।’’ গোটা ঘটনায় স্তম্ভিত পেশায় জীবনবিমার এজেন্ট শ্যামল। তিনি বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার দুপুরে স্ত্রী বাড়ি ফিরে জানান, কলেজের কিছু ছেলে কটূক্তি করেছে। শুনে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। বাড়ির ঠিক উল্টো দিকেই কলেজ। ছেলেমেয়েরা বাড়ির সামনে দিয়েই যাতায়াত করে, বসে যাকে। ওরা এমন করল!’’ দ্রুত চলে গিয়েছিলেন কলেজে। তাঁর কথায়, ‘‘গিয়ে জানতে পারি টিএমসিপি প্রভাবিত ছাত্র সংগঠনের কিছু সদস্যই এমনটা করেছে। পরে অবশ্য ওরা এসে ক্ষমাও চেয়ে যায়।’’ তৃণমূল ছাত্র পরিষেদর জেলা সভাপতি সুরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের অবশ্য দাবি, ওই ঘটনায় সংগঠনের কেউ যুক্ত নয়। একেবারেই ভিত্তিহীন অভিযোগ।

এলাকাবাসীর অনেকেরই অবশ্য অভিযোগ, রাতবিরেত তো বটেই দিনের বেলাতেও কলেজের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়ে ভেসে আসে কটূক্তি। শিস্। এঁদেরই এক জনের অভিযোগ, ‘‘কিছু ছেলে দিনরাত সার দিয়ে বসে থাকে। আড্ডা মারে। আর অসভ্যতা করে। পুলিশ কিছু দেখেও দেখে না।’’ বছরখানেক আগে ওই কলেজের সামনে দিয়ে আসা-যাওয়ার করা মহিলা এবং ছাত্রীদের কটূক্তির অভিযোগ তুলে সরব হন কিছু বাসিন্দা। সুর চড়ান কিছু অভিভাবকও। তারপরে উপদ্রব কিছু কমে বলে তাঁদের দাবি।

পাল পরিবারের দাবি সেই অভিযোগই এ দিন প্রমাণিত হল। পুলিশে দায়ের করা অভিযোগে শ্যামল দাবি করেছেন, সাড়ে আটটা নাগাদ আচমকা জনা পনেরো ছেলে দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকে পড়ে। প্রথমে বিমা অফিসের টেবিল, টেবিলের কাঁচ ভাঙচুর করা হয়। শ্যামলের কথায়, ‘‘ওই সময়ে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। সম্বিত ফিরলে বুঝতে পারি টেবিলে রাখা ২০ হাজার টাকা উধাও।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘কেন ক্ষমা চাইতে বলা হল সেটাই বারবার বলছিল ওরা। ছাত্র সংসদের নাম করেই হুমকি দিচ্ছিল। বলছিল, সংসদের কথা মেনেই চলতে হবে। তারপরেই দ্রুত পুলিশে খবর দেওয়া হয়। কিছু সময়ের জন্যে স্বাভাবিক হয় পরিস্থিতি।’’ কিছু সময় কেন?

পরিবারের দাবি, পুলিশকে গোটা ঘটনা জানানোর পরেও ভোর রাত পর্যন্ত দফায় দফায় বাড়িতে ইট-পাটকেল ছোড়া হয়েছে। এরপরেই শুক্রবার থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। পরিবারের তরফে অবশ্য কারও নামে অভিযোগ দায়ের হয়নি। বোলপুরের এসডিপিও অম্লানকুসুম ঘোষ এ বিষয়ে কিছু বলতে চাননি। তবে পুলিশ সূত্রের খবর, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। চব্বিশ ঘণ্টা পেরিয়ে যাওয়ার পরেও কাউকে আটক, কিংবা গ্রেফতার করা হয়নি। কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা এলাকার বিধায়ক চন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, ‘‘বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি। পুলিশ তদন্ত করে ব্যবস্থা নিক।’’

বোলপুর কলেজের অধ্যক্ষ নুরসাদ আলি এ দিনের ঘটনার কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন। তাঁর আর্জি, ‘‘ঘটনার এতটুকুও সত্যি হলে পুলিশ তদন্ত করে ব্যবস্থা নিক।”

Students vandalized
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy