Advertisement
E-Paper

বাঁকুড়া স্টেশন এলাকায় শুরু উচ্ছেদ

দোকান দখল করে অভিযোগকে কেন্দ্র করে বাঁকুড়া স্টেশন এলাকার এক ব্যবসায়ী ও তাঁর সঙ্গীদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ বেঁধেছিল ছোট ভাড়াগাড়ির চালকদের। রবিবারের সেই ঘটনাই বাঁকুড়া স্টেশন সংলগ্ন এলাকার জবরদখলের ছবিটা ফের তুলে ধরেছে। ঘট নার পর দিনই তাই স্টেশন সংলগ্ন অবৈধ দোকান ভাঙতে নামলেন রেল কর্তৃপক্ষ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৬ ০৭:১৩
আরপিএফের কড়া পাহারায় রেলের জমিতে ভাঙা হচ্ছে দোকান।—নিজস্ব চিত্র।

আরপিএফের কড়া পাহারায় রেলের জমিতে ভাঙা হচ্ছে দোকান।—নিজস্ব চিত্র।

দোকান দখল করে অভিযোগকে কেন্দ্র করে বাঁকুড়া স্টেশন এলাকার এক ব্যবসায়ী ও তাঁর সঙ্গীদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ বেঁধেছিল ছোট ভাড়াগাড়ির চালকদের। রবিবারের সেই ঘটনাই বাঁকুড়া স্টেশন সংলগ্ন এলাকার জবরদখলের ছবিটা ফের তুলে ধরেছে। ঘট নার পর দিনই তাই স্টেশন সংলগ্ন অবৈধ দোকান ভাঙতে নামলেন রেল কর্তৃপক্ষ।

সোমবার সকাল থেকেই রেলরক্ষী বাহিনী বা আরপিএফের তরফে এলাকায় মাইকিং করে রেলের জমি দখল করে যে সব অবৈধ দোকান চলছে, তা ভেঙে ফেলা হবে বলে ঘোষণা করা হয়। সেই ঘোষণা শুনেই ব্যবসায়ীরা যে যাঁর মতো দোকান থেকে মালপত্র বের করে নেন। বেলা গড়াতেই বুলডোজার নিয়ে আরপিএফের নেতৃত্বে জবরদখল করে থাকা স্টেশন সংলগ্ন গোটা চল্লিশেক ঝুপড়ি দোকান ভেঙে ফেলা হয়। ভাড়াগাড়ির চালকদের সংগঠনের তরফে একটি অফিসও গড়া হয়েছিল রেলের জায়গায়। সেটিও উচ্ছেদ করা হয়েছে এই অভিযানে। ওই অফিসের সামনেই রেলের ফাঁকা জায়গা ভাড়াগাড়ির স্ট্যান্ড হিসেবে ব্যবহার করছিলেন চালকেরা। সেই স্ট্যান্ডটিকেও বেআইনি জানিয়ে গাড়ি সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গোটা উচ্ছেদ অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন বাঁকুড়ার ওসি (আরপিএফ) বি কে সিংহ।

শনিবার রাত থেকেই স্টেশন সংলগ্ন একটি চা দোকান দখল করে নেওয়ার অভিযোগকে ঘিরে উত্তেজনার শুরু। কয়েক বছর ধরে ওই চা দোকানটি চালাতেন সুখদেব সিংহ। তবে টানা কয়েক মাস তিনি দোকান খোলেননি। শনিবার রাতে দোকানে এসে দেখেন স্টেশনের ভাড়াগাড়ির চালকেরা ওই দোকান দখল করে সংগঠনের অফিস ঘর তৈরি করে ফেলেছেন। এর পরেই আরপিএফ থানায় ঘটনাটি জানালে আরফিএফ কর্তৃপক্ষ ওই দোকান থেকে গাড়ির চালকদের সংগঠনের লোকজনকে হটিয়ে দেয়।

রবিবার দুপুরে ঘটনাটি নিয়ে উত্তেজনা চরমে ওঠে। ওই ব্যবসায়ীর পরিবারের লোকজনের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন ভাড়াগাড়ির চালকেরা। দফায় দফায় মারপিটের ঘটনা ঘটে দু’পক্ষের মধ্যে। অনেকগুলি ভাড়াগাড়ির কাচ ভাঙা এবং একটি মোটরবাইকে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে ওই ব্যবসায়ীর পরিবারের লোকজনের বিরুদ্ধে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ওই ব্যবসায়ীর পরিবারের কয়েক জনকে আটক করে নিয়ে যায়। রাতেই দু’পক্ষ একে অপরের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ দায়ের করে বাঁকুড়া সদর থানায়। এই ঘটনায় দু’পক্ষের মোট ছ’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে ওই ব্যবসায়ী সুখদেব, তাঁর ভাই জয়নারায়ণ সিংহ এবং ভাইপো সঞ্জয় রয়েছেন। এ ছাড়াও জাহির আব্বাস ও আসরফ খান নামের দু’জন গাড়ির চালককেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার তাঁদের বাঁকুড়া আদালতে তোলা হয়।

ঝামেলার পরে রাতেই রেল কর্তৃপক্ষ স্টেশন এলাকার অবৈধ নির্মাণ ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন। সেই মোতাবেক সকাল থেকেই মাইকিং করে দোকান ভেঙে ফেলা হবে বলে ঘোষণাও করে আরপিএফ। সকাল থেকেই ব্যবসায়ীরা দোকান খোলার কাজ শুরু করে দিয়েছিলেন। দুপুরে বুলডোজার নিয়ে এসে আরপিএফ কর্তৃপক্ষ বাঁকুড়া স্টেশন এলাকা থেকে স্টেশন মোড় পর্যন্ত অবৈধ দোকানপাট ও বেআইনি নির্মাণ ভেঙে দেয়। এই ঘটনায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে স্টেশন এলাকার ব্যবসায়ীদের মধ্যে। যদিও উচ্ছেদ অভিযানে কোনও রকম বাধা সৃষ্টি করার চেষ্টা করেননি ওই ব্যবসায়ীরা। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক চা দোকানি বলেন, “পাঁচ বছর ধরে এখানে দোকান চালাচ্ছি। এ রকম পরিস্থিতি আগে কখনও হয়নি। এই দোকানের উপরেই আমরা নির্ভরশীল ছিলাম। এ বার কী করব কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।’’ আর এক ব্যবসায়ীর আক্ষেপ, “আমরা কোনও ঝামেলার মধ্যেই জড়াইনি। দু’পক্ষের ব্যক্তিগত অশান্তির জন্য আমাদের উপরেও কোপ এসে পড়ল।’’

আইএনটিটিইউসি সমর্থিত ওই ভাড়াগাড়ির চালকদের সংগঠন ‘বাঁকুড়া টাউন সার্ভিস স্মল কমার্শিয়াল মোটর ভেহিক্যাল ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন’-এর সম্পাদক আকবর দালাল বলেন, “আমাদের স্ট্যান্ড তুলে দেওয়া হয়েছে। দলীয় অফিসও ভেঙে ফেলা হয়েছে। ওই এলাকায় যাতে আইনি প্রক্রিয়া মেনে গাড়ি রাখার অনুমতি দেওয়া হয়, সে বিষয়ে রেলের কাছে আবেদন করব।’’ বাঁকুড়ার স্টেশন ম্যানেজার শান্তব্রত বিশ্বাস বলেন, “রাতেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমাদের নির্দেশ দেন, রেলের জায়গায় অবৈধ নির্মান উচ্ছেদ করতে। সেই মোতাবেকই আমরা কাজ করেছি।”

Hawker eviction Bankura Eviction Rail Station Illegal shop
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy