Advertisement
E-Paper

জয়চণ্ডীতে ওঠার পাঠ প্রতিবন্ধীদের

শনিবার থেকে পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরের জয়চণ্ডী পাহাড়ে শুরু হয়েছে ২৩ জন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন কিশোর-কিশোরীকে নিয়ে পাহাড়ে চড়ার প্রশিক্ষণ শিবির। চলবে তিন দিন।

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৫:২৮
হাত-ধরে: এ ভাবেই আত্মবিশ্বাসী করার ভাবনা। ছবি: সঙ্গীত নাগ

হাত-ধরে: এ ভাবেই আত্মবিশ্বাসী করার ভাবনা। ছবি: সঙ্গীত নাগ

কেউ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, কারও আবার শারীরিক প্রতিবন্ধী। কারও আবার মানসিক সমস্যা রয়েছে। এমনই বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন কিশোর, কিশোরীদের পক্ষে পাহাড়ে চড়াটা যথেষ্ট চ্যালেঞ্জের। আর সেই কাজটাই করছে কেন্দ্রীয় সরকারের যুব দফতরের অধীনস্থ পর্বতারোহী আইএমএফ (ইন্ডিয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ফাউন্ডেশন) নামের একটি সংস্থা। শনিবার থেকে পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরের জয়চণ্ডী পাহাড়ে শুরু হয়েছে ২৩ জন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন কিশোর-কিশোরীকে নিয়ে পাহাড়ে চড়ার প্রশিক্ষণ শিবির। চলবে তিন দিন।

সংস্থার কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ছেলেমেয়েদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি করার জন্যই তাঁরা এই প্রশিক্ষণের সিদ্ধান্ত নেন। আইএমএফের পূর্ব জ়োন থেকে এই প্রথমবার প্রতিবন্ধীদের পাহাড় চড়ার প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

মূলত দু’টি ভাগ রয়েছে প্রশিক্ষণ পর্বে। প্রথম ভাগে তাঁদের পাহাড়ে চড়ার প্রাথমিক কলাকৌশল শেখাচ্ছেন প্রশিক্ষক অনির্বাণ মজুমদার। পরের ধাপে প্রতিবন্ধীদের এভারেস্ট জয়ের নজির তুলে এনে তাঁদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আত্মবিশ্বাস বোধ তৈরি করার চেষ্টা চালাচ্ছেন সংস্থার সদস্যেরা।

এ দিন জয়চণ্ডী পাহাড়ে গিয়ে দেখা গেল, যুব আবাসের ঠিক পিছনের পাহাড়ে শুরু হয়েছে পর্বতারোহণের প্রশিক্ষণ। ২৩ জন প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়েদের হাতে ধরে পাহাড়ে চড়া শেখাচ্ছেন অনির্বাণবাবু, ক্যাম্প কমান্ডার মলয় বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ সংস্থার অন্য সদস্যেরা।

পাহাড়ে কোনওদিনই চড়েনি স্বল্পদৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন ও মানসিক প্রতিবন্ধী শুভ্রজিৎ পাল। সংস্থার সদস্যদের সাহায্যে গুটি গুটি পায়ে পাহাড়ে চড়ছিল শুভ্রজিৎ। একই ভাবে আর এক প্রতিবন্ধী তৌসিফ খানকে প্রায় হাতে ধরেই পাহাড়ে চড়া শেখাচ্ছিলেন সংস্থার আরও কয়েকজন সদস্য। কয়েকশো মিটার উঁচুতে চড়ার পরে খানিক বিশ্রাম। তারপর একই ভাবে ধীরে ধীরে নীচে নামা। প্রায় ঘণ্টাখানেকের চেষ্টায় পুরো প্রশিক্ষণের একটা ধাপ শেষ হচ্ছে।

বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের এই ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া যে যথেষ্ট কঠিন ও ঝুঁকিপূর্ণ তা মানছেন প্রশিক্ষক অনির্বাণবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘সাধারণ ছেলেমেয়েরা পাহাড়ে চড়ার ক্ষেত্রে প্রশিক্ষকের নির্দেশ মেনে কাজ করে। কিন্তু, এক্ষেত্রে অনেকেই চোখে দেখতে পায় না। আবার অনেকে শুনতে পায় না। ফলে, শুধু নির্দেশ দিয়েই কাজ শেষ হচ্ছে না। জনে জনে হাতে ধরে শেখাতে হচ্ছে পাহাড়ে চড়ার কৌশল।” আবার অনেক ক্ষেত্রে মানসিক সমস্যায় থাকা ছেলেমেয়েরা পাহাড় চড়তে গিয়ে অযথাই উত্তেজিত হয়ে পড়ছে। নজর রেখে সামলাতে হচ্ছে তাদের।

আত্মবিশ্বাসী করার সঙ্গে সঙ্গে তাদের পাহাড় ও ওই এলাকার পরিবেশ, জঙ্গল প্রভৃতি বিষয়ে ওয়াকিবহাল করার চেষ্টাই তাঁরা করছেন বলে জানাচ্ছেন ক্যাম্প কমান্ডার মলয়বাবু। তিনি বলেন, ‘‘সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পাহাড়ে চড়ার প্রশিক্ষণ হচ্ছে। বিকালের দিকে আমরা ওই ছেলেমেয়েদের নিয়ে আলোচনায় বসে বোঝাচ্ছি, তারা কোথায় এসেছে। এই এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশ কেমন। এ সবের মাধ্যমে এখানকার পরিবেশের সঙ্গে তাদের মনের একটা মেলবন্ধন ঘটানোর কাজ করা হচ্ছে।” এই কাজে পাশে দাঁড়িয়েছে রেলকর্মীদের সংগঠন বান্ধব শিয়ালদহ ও একটি বিমা সংস্থা।

মূলত কলকাতা ও পাশের বিভিন্ন জেলার ছেলেমেয়েরাই যোগ দিয়েছে এই শিবিরে। তাদের সঙ্গেই এসেছেন অভিভাবকেরাও। তাদের মধ্যে আগরপাড়ার মিতালি পাল, বেলঘরিয়ার রিনা মজুমদার বলেন, ‘‘সংস্থার সদস্যরাই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এই শিবিরে আসার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। যারা ভাল ভাবে হাঁটতে পারে না, তারা পাহাড়ে চড়বে কী ভাবে— এই প্রশ্নটা প্রথমে ভাবিয়েছিল। কিন্তু ছেলেমেয়েদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি হবে, এই ভেবে শিবিরে নিয়ে এসেছি।’’

IMF Indian Mountaineering Foundation Specially Abled Person Trekking
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy