Advertisement
E-Paper

‘আপনারা খেলে আমাদের বিয়ে হবে’! বেকার বদনাম ঘোচালেন চারমূর্তি, ঘুরতে এলে শুশুনিয়ায় নয়া চমক

রেস্তরাঁর মেনুতে চোখ বোলালেও কেমন যেন বিয়ে বিয়ে গন্ধ। মেনুতে রয়েছে, ‘আইবুড়ো থালি’, ‘বৌভাত থালি’, ‘স্পেশাল ব্যাচেলর চা’, ‘স্পেশাল ব্যাচেলর কফি।’

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২৪ ১৭:৩৯
Bachelor Biriyani

রেস্তরাঁর সামনে চার কর্ণধার। —নিজস্ব চিত্র।

পড়াশোনা করেছেন। কিন্তু অনেক চেষ্টার পরও চাকরি পাননি। বাড়ি থেকে পেয়েছেন ‘বেকার’ তকমা। নাটক, আবৃত্তি, গানের চর্চা করতেন। এদিক-ওদিক অনুষ্ঠান করেছেন। পরিচিতদের কাছ থেকে জুটেছে ‘বাউন্ডুলে’ কটাক্ষ। ইচ্ছে থাকলেও নিজেদের সংসার হয়নি এখনও। তাই ‘বাউন্ডুলে’ নাম ঘুচিয়ে ব্যবসায়ীর তকমা পেতে চান ওঁরা চার জন। অনেক স্বপ্ন নিয়ে নতুন বছরে চার বন্ধু মিলে খুলেছেন রেস্তরাঁ। নাম দিয়েছেন ‘ব্যাচেলর বিরিয়ানি'। রেস্তরাঁর সামনের লেখাটিও নজরকাড়া— ‘আপনারা খেলে আমাদের বিয়ে হবে’। এমন ‘মানবিক আবেদনে’ সাড়া না দিয়ে কি থাকা যায়? শীতের মরসুম শেষের আগে শুশুনিয়া পাহাড়ে বেড়াতে যাচ্ছেন যাঁরা, তাঁদের অনেকেই ঢুঁ মারছেন ‘ব্যাচেলর বিরিয়ানি’তে।

রেস্তরাঁর চার মালিকের তিন রকম শখ। বিশ্বজিৎ কর্মকার গানের চর্চা করেন। মাঝেমধ্যেই এ দিক-ও দিক অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার ডাক পড়ে। কৌশিক মণ্ডলের নেশা থিয়েটার। নাটকচর্চা করেন নিছক শখে। কখনও পেশা করতে চান না। তবে থিয়েটার করতে গিয়ে পকেটে টান পড়ে। বাকি দুই বন্ধু দীপ আচার্য এবং সন্দীপ কর্মকার সাংবাদিকতাকে পেশা করতে চেয়েছিলেন। স্থানীয় পত্রপত্রিকায় লেখালেখি করেছেন। কিন্তু পয়সাকড়ি তেমন মেলে না। নিজেদের পকেট খরচাই জোগাড় হয় না, তো সংসারে দেবেন কী! তাই চার বন্ধু তৈরি করেছেন এই ‘ব্যাচেলর' রেস্তরাঁ।

চার বন্ধুরই বাড়ি বাঁকুড়ার শুশুনিয়া পাহাড়ের আশপাশের এলাকায়। বিশ্বজিৎ বলেন, ‘‘কত দিনই বা বিনা রোজগারে এ ভাবে গান, থিয়েটার বা লেখাজোকা করে কাটানো যায়? কিছু রোজগার না করলে বিয়েটাও যে আটকে আছে। কিছু করতে হবে, ভাবতে ভাবতে শুশুনিয়া পাহাড়ের কোলে চার বন্ধু মিলে রেস্তরাঁ খোলার কথা ভেবেছি।’’ সেই আলোচনার ফসল এই ‘ব্যাচেলর বিরিয়ানি’। কোনও রাখঢাক না করে রেস্তরাঁর ‘ট্যাগ লাইনে’ নিজেদের মনের কথাই লিখেছেন চার জন— ‘আপনারা খেলে আমাদের বিয়ে হবে।’

রেস্তরাঁর মেনুতে চোখ বোলালেও কেমন যেন বিয়ে বিয়ে গন্ধ। মেনুতে রয়েছে, ‘আইবুড়ো থালি’, ‘বৌভাত থালি’, ‘স্পেশাল ব্যাচেলর চা’, ‘স্পেশাল ব্যাচেলর কফি।’ শুশুনিয়া বেড়াতে এসে অনেক পর্যটকের চোখ আটকাচ্ছে এই বিজ্ঞাপনে। খিদে পেটে মজা এবং আগ্রহ নিয়ে তাঁরা বসে পড়ছেন ‘ব্যাচেলর বিরিয়ানি’র চেয়ারে। অনিসন্ধিৎসু অনেকেই জানতে চাইছেন, রেস্তরাঁর নামকরণ এবং ট্যাগলাইন কার মাথা থেকে বেরিয়েছে? তার পর খেয়েদেয়ে সন্তোষ প্রকাশ করছেন খদ্দেররা।

‘ব্যাচেলর বিরিয়ানি’র টেবিলে বসে বিরিয়ানি চেখে দেখতে দেখতে কলকাতা থেকে আসা পর্যটক সন্দীপ মুখুটি বলেন, ‘‘চাকরির যা বাজার, তাতে সে আশায় বসে না থেকে এই চার বন্ধু যে রেস্তরাঁ করে রুজি রোজগারের চেষ্টা করছেন, এটা ভাল ব্যাপার। খাবারের মান থেকে ওঁদের ব্যবহারের কারণে যে ভাবে লোক আসছেন, তাতে আমার বিশ্বাস, খুব শীঘ্রই ওঁদের আইবুড়ো নাম ঘুচবে।’’ বলেই মুচকি হাসেন সন্দীপ। বাঁকুড়া থেকে শুশুনিয়া বেড়াতে আসা করবী গুছাইতের কথায়, ‘‘বিজ্ঞাপনের ট্যাগলাইন দেখা ইস্তক আমি শুধুই হেসেছি। এমন আবেদন কি অগ্রাহ্য করা যায়? আমি এখানে খেলে যদি ওঁদের বিয়ে হয়, সেই আশাতেই রেস্তরাঁয় ঢুকে পড়েছি।’’

সব দেখেশুনে রেস্তরাঁর অন্যতম মালিক কৌশিক বলেন, ‘‘নামকরণ থেকে বিজ্ঞাপনের ট্যাগলাইন বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আমাদের চার জনের ইচ্ছেই সর্বাধিক গুরুত্ব পেয়েছে। আসলে আমাদের বাস্তব পরিস্থিতি দেখে অনেকেই আড়ালে আবডালে হাসাহাসি করত। অন্যের হাসির খোরাক হওয়ার পর নিজেরাই বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে নিজেদের বাস্তব পরিস্থিতি তুলে ধরেছি। এই পরিস্থিতি থেকে আমাদের উদ্ধার করার আবেদনও রয়েছে বিজ্ঞাপনে। অনেকে সাড়া দিয়ে আমাদের এখানে আসছেন। সত্যিই রেস্তরাঁটা চললে আমাদের সংসার হবে।’’

Susunia Hill Resturant bankura
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy