Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ইতিহাসের কোটাসুরকে পর্যটন কেন্দ্র করার দাবি 

কারও মতে ‘রাজার গড়’। কেউ বলেন ‘অসুরের কোট’ বা রাজধানী। কান পাতলেই শোনা যায় ‘রাজা আর অসুর, দুই নিয়ে কোটাসুর’। সেই কোটাসুরকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার দাবি তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

সাক্ষ্য প্রবেশদ্বার

সাক্ষ্য প্রবেশদ্বার

অর্ঘ্য ঘোষ
ময়ূরেশ্বর শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:১২
Share: Save:

কারও মতে ‘রাজার গড়’। কেউ বলেন ‘অসুরের কোট’ বা রাজধানী। কান পাতলেই শোনা যায় ‘রাজা আর অসুর, দুই নিয়ে কোটাসুর’। সেই কোটাসুরকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার দাবি তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

প্রচলিত রয়েছে, কোটাসুরে এক সময় রাজা এবং অসুরের বাস ছিল। দীর্ঘ কাল আগে এখানে নাকি কোটেশ্বর নামে কোনও এক রাজার রাজধানী ছিল। তার নাম অনুসারেই জনপদটির কোটাসুর নামকরণ হয়েছিল বলে অনুমান। আবার দুর্ম্মদ বা দুর্জ্জয় সেন নামে এক রাজারও কথা শোনা যায়। ওই রাজার আমলে

কোটাসুরের নাম ছিল দুর্জ্জয় কোট। সেই রাজার আরাধ্য ছিলেন মদনেশ্বর শিব। মদনেশ্বর শিবের মন্দির আজ এলাকার একটি দর্শনীয় স্থান হয়ে প্রাচীনত্বের ধ্বজা ধরে রেখেছে।

আজ আর রাজবাড়ির নির্দশন নেই। হাতিশালা নেই। নেই ঘোড়াশালাও। কিন্তু কোটাসুরকে কেন্দ্র করে রাজত্বের স্বাক্ষ্য বহন করে চলেছে সংলগ্ন বেশ কিছু গ্রাম। হটিনগরের মতো কোটাসুরের কিছু দূরেই ময়ূরাক্ষীর আঁচল ছোঁওয়া গ্রাম ঘোড়দহ। এক সময় সেখানেই নাকি রাজার ঘোড়াশালা ছিল। কোনও এক বন্যায় গ্রামের কাছে বিরাট গর্ত বা দহ সৃষ্টি হয়। তার পর থেকেই ওই গ্রামের নাম হয় ঘোড়দহ। দহ যোগ হলেও ‘ঘোড়’ শব্দটিই রাজার ঘোড়াশালার পরিচয় বহন করে বলে অনেকে মনে করেন। ঘোড়দহ থেকে কিছু দূরের গ্রাম হাতিন। গ্রামটি রাজার হাতিশালার পরিবর্তিত রূপ বলে অনেকের ধারণা। রাজ আমলের কাজিপাড়াও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নির্দশনের স্বাক্ষ্য বহন করে চলেছে। গ্রামের নামই বলে দেয় এক সময় সেখানে মুসলমান প্রজাদের বাস ছিল। বর্তমানে ওই পাড়ায় একঘরও সংখ্যালঘুর বাস নেই। কিন্তু, তাঁদের বসবাসের স্বাক্ষ্য বহন করে চলেছে ওই পাড়া।

রাজার পাশাপাশি কোটাসুরকে ঘিরে রয়েছে অসুরের কাহিনীও। এক সময় ‘অসুরের কোট’ বা রাজধানী ছিল বলেই জনপদের নাম কোটাসুর হয়েছিল বলে মনে করা হয়। প্রবীণদের দাবি, মহাভারতের একচক্রা নগরীর অর্ন্তভূক্ত ছিল কোটাসুর। অজ্ঞাতবাস কালে পাণ্ডবরা এই এলাকায় আত্মগোপন করেছিলেন। বকাসুরকে বধ করেছিলেন ভীম। প্রমাণ হিসেবে মদনেশ্বর মন্দির প্রাঙ্গণে রক্ষিত একটি প্রস্তরখণ্ডকে বকাসুরের হাঁটুর মালাইচাকির ফসিল হিসেবে দাবি করে থাকেন এলাকার মানুষজন। একই সঙ্গে ওই চত্বরে রয়েছে প্রদীপের আকৃতির আরও একটি প্রস্তরখণ্ড। ওই প্রস্তরখণ্ডটিকে কুন্তীর প্রদীপ হিসেবে প্রদর্শন করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের বিশ্বাস, কুন্তী মন্দির লাগোয়া দেবীদহে স্নান করে মদনেশ্বরের নিত্যপুজা করতেন। আজও দেবীদহে স্নান করে শিবের পুজোর জন্য ভিড় জমান ভক্তেরা। এক সময় ওই দেবীদহ থেকে উদ্ধার হয়েছিল বহু আকর্ষণীয় দেবদেবীর মুর্তি। দেখভালের অভাবে সেই মূর্তিগুলি একে একে উধাও হয়ে গিয়েছে। গ্রামবাসীর চেষ্টায় অবশ্য মন্দিরটি নতুন রূপ পেয়েছে।

ইংরেজ শাসনেরও স্বাক্ষ্য বহন করে চলেছে কোটাসুর। জেলার অন্য জায়গার মতো কোটাসুরে রেশমকুঠি তৈরি হয়েছিল। কিছু দিন আগে পর্যন্ত নজরে আসত রেশমকুঠির চিমনি। সেই কুঠির চিহ্নমাত্র নেই। কিন্তু, রেশমকুঠির অস্তিত্ব রয়ে গিয়েছে কুঠিডাঙা গ্রামে। আর এক দিন রেশমগুটি থেকে সুতো কাটার সুবাদে কাটানি আখ্যায়িত হয়েছিলেন যে সব গ্রামবাসী, তাঁরা রয়ে গিয়েছেন। বাসভূমি কাটানিপাড়াও আছে। শরৎচন্দ্র, তারাশঙ্করের রচনায় স্থান করে নিয়েছে কোটাসুরের বাউল পুকুর, সন্নিহিত অমরকুণ্ডার মাঠ।

সেই হিসেবে কোটাসুরকে কেন্দ্র করে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি। এখানে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার পাশাপাশি রয়েছে অন্য সমস্ত রকম সুযোগ, সুবিধাও। কোটাসুর থেকে অনায়াসেই কলেশ্বর, বীরচন্দ্রপুর, তারাপীঠ, সাঁইথিয়ার নন্দিকেশ্বরী সহ অন্য দর্শনীয় স্থান ঘুরে আসা যায়।

স্থানীয় বাসিন্দা শান্তিপদ মণ্ডল, সদানন্দ মণ্ডলরা জানান, সরকার উদ্যোগী হলেই কোটাসুরকে কেন্দ্র করে আর্কষণীয় পর্যটনকেন্দ্র গড়ে ওঠতে পারে। সেক্ষেত্রে এলাকার আর্থ-সামাজিক চালচিত্রটাই বদলে যাবে। কিন্তু, সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা সহ আবেদন জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী জানান, ওই বিষয়ে কিছু জানা নেই। তবে এলাকার বাসিন্দারা লিখিত ভাবে জানালে সংশ্লিষ্ট মহলে পাঠিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

History Travel Mayureswar Mayureswar II
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE