Advertisement
E-Paper

রং কালো বলে শ্বশুরবাড়ি তাড়িয়েছে, অভিযোগ বধূর

রং কালো। বড় মেয়ে অন্যের। এমনই অপবাদ দিয়ে বধূ ও তাঁর দুই মেয়েকে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে। ঘটনাটি পুরুলিয়ার কোটশিলা থানা এলাকার।

প্রশান্ত পাল

শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৫ ০১:০৮
দুই মেয়ে নিয়ে জেলাশাসকের অফিসের পথে বধূ। ছবি: সুজিত মাহাতো।

দুই মেয়ে নিয়ে জেলাশাসকের অফিসের পথে বধূ। ছবি: সুজিত মাহাতো।

রং কালো। বড় মেয়ে অন্যের। এমনই অপবাদ দিয়ে বধূ ও তাঁর দুই মেয়েকে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে। ঘটনাটি পুরুলিয়ার কোটশিলা থানা এলাকার।

সমস্যা মিটিয়ে শ্বশুরবাড়িতে ফেরার জন্য সব রকম চেষ্টা করেছিলেন বড়তোলিয়া গ্রামের বধূ লতিকা কুমার। সেই চেষ্টা সফল না হওয়ায় বিচার চাইতে অবশেষে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি। ওই বধূ জানালেন, তাঁদের মেয়ের গায়ের রং কালো এই অজুহাতে তাঁর উপর অত্যাচার করতেন শ্বশুরবাড়ির লোকজন। তাঁরা ভেবেছিলেন, সংসারের সমস্যা মিটে যাবে। কিন্তু তা হয়নি। জেলা সুরক্ষা আধিকারিক সুমা ঘোষ বলেন, ‘‘ওই বধূ আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। যে অভিযোগ উঠেছে, তা মারাত্মক। ওই বধূ কী ভাবে নিজের অধিকারে শ্বশুরবাড়িতে ফিরতে পারেন, কী ভাবে সুরক্ষা দেওয়া যায় বা বিয়েতে কী পণ দেওয়া হয়েছিল এবং ক্ষতিপূরণের দাবিতে তাঁর হয়ে আদালতে মামলা করা হবে। মহিলা যাতে আইনি সহায়তা পান সেটাও দেখা হবে।’’

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর আটেক আগে কোটশিলা থানারই গরয়াটাঁড় গ্রামের বাসিন্দা লতিকাদেবীর সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল বড়তোলিয়া গ্রামের যুবক কালোশশী কুমারের। বছর দু’য়েকের মধ্যে তাঁদের এক কন্যা সন্তান হয়। মেয়ে কালো হওয়ায় অত্যাচার শুরু হয়। ওই বধূর অভিযোগ, তাঁদের দুই মেয়ে। বড় মেয়ের বয়স ৬ বছর। ছোট মেয়ের বয়স ১০ মাস। বড় মেয়ের জন্মের পর থেকে তাঁর প্রতি শুরু হওয়া অত্যাচারের কথা প্রশাসনের কাছে লিখিত ভাবে জানিয়েছিলেন। মাস খানেক যেতে না ফের নির্যাতন শুরু হয়। কখনও কখনও মারধরও করা হত। লতিকাদেবীর দাবি, ‘‘আমার বড় মেয়ের গায়ের রং কালো। ছোট মেয়ে তুলনায় ফর্সা। সে জন্য স্বামীই আমাকে সন্দেহ করেন। ছোট মেয়ে ফর্সা হওয়ার পরে নিযার্তনের মাত্রা বাড়ে। শ্বশুরবাড়ির যুক্তি, যেহেতু বড় মেয়ে কালো, তাই সে অন্যের সন্তান। আমার উপর মিথ্যা সন্দেহ ও কলঙ্ক দিয়ে নিযার্তন চলছে। স্বামী মাস ছয়েক আগেই বেঙ্গালুরুতে কাজ করতে চলে গিয়েছেন। সেই সুযোগে আমাকে মারধর করে বের করে দেওয়া হয়।’’

বিচার চাইতে সোমবার দুই মেয়ে জাগরী ও আলপনাকে নিয়ে জেলা সদরে এসেছিলেন লতিকাদেবী। দাদা সমীরণ কুমার বলেন, ‘‘আমরা পুলিশের কাছে গিয়েছি, পুরুলিয়ায় মহিলা থানাতেও গিয়েছি। লিখিত অভিযোগও নিয়েছে। ওই পর্যন্ত পুলিশের কাছ থেকে কোনও সাড়া না পেয়েই প্রশাসনের কাছে এসেছি।’’ কাকা শ্যামাপদ কুমারের কথায়, ‘‘আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম, সব সাংসারে সমস্যা হয়। আলোচনা করে মিটিয়ে নেওয়া যাবে। কিন্তু তা হয়নি। ভাইঝিকে মারধর করে ওরা বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে।’’ জেলা পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার বলেন, ‘‘ওই বধূ প্রথমে পুলিশের কাছে এসেছিলেন সমস্যা সমাধানের আর্জি নিয়ে। তখন তাঁকে সুরক্ষা আধিকারিকের কাছে পাঠানো হয়। সেখানে কোনও সমাধান হয়নি বলেই শুনেছি। পরে তিনি অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করেছেন। তাঁকে বলা হয়েছে, মামলা করলে পুলিশ সহায়তা করবে।’’

ক্ষোভের সুরে লতিকাদেবী বলেন, ‘‘আমার অপরাধ কোথায়! স্বামী ছয় মাস আগে চলে গিয়েছেন। কীভাবে বেঁচে আছি খোঁজ নেন না। শ্বশুরবাড়িতে ঠিক মতো খেতেও দেওয়া হত না। দুই মেয়ের খরচ চালাতে আমাকে বিড়ি বাঁধতে হয়। এই অবস্থায় প্রথমে মীমাংসার আর্জি নিয়ে পুলিশের কাছে যাই। পরে অবস্থা সহ্যের বাইরে চলে যাওয়ায় ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি নিয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছি।’’ অনেক চেষ্টা করেও ওই বধূর শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

purulia kotshila kotshila marraige kotshila bartolia village dark complexion housewife shunned prashanta pal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy