জাতিসত্তার দাবিকে সামনে রেখে ফের পথে নামার সিদ্ধান্ত নিল কুড়মিদের বিভিন্ন সংগঠন। বুধবার থেকে পুরুলিয়ার কোটশিলায় শুরু হওয়া আদিবাসী কুড়মি সমাজ আয়োজিত দু’দিনের অধিবেশন থেকে অনির্দিষ্ট কালের রেল অবরোধ-সহ নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
সমাজের মূল মানতা অজিত মাহাতো বলেন, “অধিবেশনে এ রাজ্য ছাড়াও ঝাড়খণ্ড ও ওড়িশার কুড়মিদের মোট সাতটি সংগঠন হাজির ছিল। দাবি আদায়ে আন্দোলনই যে একমাত্র পথ, তা নিয়ে সকলে একমত হয়েছেন। আগামী ২০ সেপ্টেম্বর থেকে ফের অনির্দিষ্ট কালের জন্য রেল অবরোধের সিদ্ধান্ত হয়েছে।” দুর্গাপুজোর মুখে সেই কর্মসূচি ঘিরে ভোগান্তির আশঙ্কায় সাধারণ মানুষ থেকে ব্যবসায়ীরা।
সূত্রের খবর, আগামী সেপ্টেম্বরে তিন রাজ্যের একশোটি স্টেশনে অনির্দিষ্ট কালের জন্য অবরোধ হবে। এক জায়গায় যাতে বেশি সংখ্যায় পুলিশকর্মী মোতায়েন না করা যায়, সেই লক্ষ্যে এই কৌশল বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও অজিত বলেন, “তিন রাজ্যের একশো স্টেশনে অবরোধের সিদ্ধান্ত হয়েছে। স্টেশনগুলির নাম পরে জানানো হবে।”
জাতিসত্তার দাবিকে সামনে রেখে গত লোকসভা ভোটে লড়লেও চতুর্থ স্থান নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল অজিতকে। তার পরে, একই ভাবে রেল অবরোধের কথা ঘোষণা করা হয়। তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে নবান্নে বৈঠকের পরে তা প্রত্যাহার হয়েছিল। এ বছর ২৮ সেপ্টেম্বর দুর্গাপুজো শুরু হচ্ছে। তার সপ্তাহখানেক আগে রেল অবরোধ ঘিরে চূড়ান্ত হয়রানির আশঙ্কা বাড়ছে। অজিত বলছেন, “আমাদের দাবিকে রাজ্য বা কেন্দ্র, কোনও সরকার গুরুত্ব দেয়নি। তৃণমূল তাঁদের নির্বাচনী ইস্তাহারে আমাদের জাতিসত্তার দাবি অন্তর্ভুক্ত করেছিল। মুখ্যমন্ত্রী নিজেও প্রশাসনিক সভামঞ্চ থেকে ‘কুড়মিদের নিয়ে রাজ্য সমীক্ষা করছে’ বলে ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু কিছুই হয়নি। বাধ্য হয়ে পথে নামতে হচ্ছে। মানুষের সমস্যা হলে ক্ষমা চেয়ে নেব।” তিনি মনে করান, রাজ্য সরকার মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে ২০১৭-র মে মাসে তাঁদের দাবির পক্ষে সুপারিশ করেছিল। সেই সুপারিশের প্রেক্ষিতে কেন্দ্র ‘ফারদার কমেন্ট জাস্টিস’ রিপোর্ট চেয়ে রাজ্যকে চিঠি দেয়। তার পরে রাজ্যের তরফে কোনও পদক্ষেপ হয়নি। কেন্দ্রও চুপচাপ বসে।
আন্দোলনের পাশাপাশি কেন্দ্রের কাছে বার্তা পাঠাতে তাঁরা যে আলোচনার রাস্তাতেও থাকছেন, স্পষ্ট করেছেন অজিত। তিনি বলেন, “তিন রাজ্যের ২৫ জনের প্রতিনিধিদল সংসদের অধিবেশন চলাকালীন দিল্লি যাবে। বিভিন্ন দলের সঙ্গে দাবি নিয়ে আলোচনায় বসবে। তাঁদের মাধ্যমে আমাদের দাবি কেন্দ্রের কাছে ফের তুলে ধরতে চাই।” বৈঠকে হাজির ওড়িশার ময়ূরভঞ্জের একটি কুড়মি সংগঠনের প্রতিনিধি শশধর মাহাতো জানান, তিন রাজ্যের একশো স্টেশনে রেল অবরোধ কর্মসূচি সংগঠিত করতে এ বার প্রস্তুতি শুরু হবে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)