Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
রাস্তা দাপাল তৃণমূল

পথ আছে, কিন্তু সাথী হারা বামেরা

রবিবার যাঁদের পথে ঘাটে মাইক ফুঁকে হরতালের সমর্থনে গলা ফাটাতে দেখা গিয়েছিল, রাত পোহাতে তারাই যেন অদৃশ্য হয়ে গেল। সোমবার হরতালের দিন সকাল থেকে দুই জেলায় বামেদের তথা সিপিএমকে কার্যত পথে দেখা গেল না। ফলে এ দিন যে বন্‌ধ ডাকা হয়েছিল, রাস্তায় বেরিয়ে তা মালুমই হল না।

বাঁকুড়ার মাচানতলায় তৃণমূলের কর্মীরা।—নিজস্ব চিত্র।

বাঁকুড়ার মাচানতলায় তৃণমূলের কর্মীরা।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৬ ০০:৫৫
Share: Save:

রবিবার যাঁদের পথে ঘাটে মাইক ফুঁকে হরতালের সমর্থনে গলা ফাটাতে দেখা গিয়েছিল, রাত পোহাতে তারাই যেন অদৃশ্য হয়ে গেল। সোমবার হরতালের দিন সকাল থেকে দুই জেলায় বামেদের তথা সিপিএমকে কার্যত পথে দেখা গেল না। ফলে এ দিন যে বন্‌ধ ডাকা হয়েছিল, রাস্তায় বেরিয়ে তা মালুমই হল না।

বড় নোট বাতিলের প্রতিবাদ জানাতে বামেরা এ দিন ১২ ঘণ্টার হরতালের ডাক দিয়েছিল। প্রতিবাদ জানাচ্ছে শাসকদল তৃণমূলও। যদিও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এ রাজ্যে বন্‌ধ হবে না বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন। তাই এ দিন বন্‌ধের বিরুদ্ধে তাঁর দলের নেতা-কর্মীদের পথে নামতে দেখা গেলেও বামেদের বন্‌ধ সমর্থনের জন্য রাস্তায় দেখাই গেল না।

বস্তুত রাজ্যে পালাবদলের পর বিরোধীদের ডাকা যে কোনও বন্‌ধেই মিশ্র প্রভাব দেখা গিয়েছে বাঁকুড়া শহরে। বন্‌ধের দিনে লাল ঝান্ডা হাতে বাম বা সিপিএম কর্মীদের মিছিল করতে দেখতে অভ্যস্ত শহরবাসী। তবে কেন্দ্রের নোট বাতিলের প্রতিবাদে ডাকা এ বারের বন্‌ধে জনজীবনে কোনও প্রভাব তো পড়তে দেখাই যায়নি, উল্টে দিনভর ধর্মঘটের সপক্ষে কোনও মিছিল বা সভাও করতে দেখা গেল না বন্‌ধ সমর্থকদের। দিনভর ভরা বাজারে এ নিয়ে সাধারণ মানুষকে নানা টিপ্পনিও কাটতে দেখা গিয়েছে। কেউ বলছেন, “ধর্মঘট ডেকেই বাজার থেকে উধাও ধর্মঘটিরা।” আবার কারও কথায়, “বন্‌ধ সমর্থকেরা ব্যাঙ্কে টাকা তুলতে গিয়েছেন।”

শুধু বাঁকুড়া শহরেই নয়, ধর্মঘট সফল করতে বিরোধীদের সে ভাবে পথে নামতে দেখা যায়নি এই জেলার অন্যত্রও। রবিবার সন্ধ্যাতেও বড়জোড়া চৌমাথা মোড়ে বন্‌ধের সমর্থনে সভা করে সিপিএম। সোমবার দিনভর অবশ্য তাঁদের আর দেখা মেলেনি বলেই জানাচ্ছেন বাসিন্দারা। বড়জোড়া ব্লক তৃণমূল সভাপতি অলক মুখোপাধ্যায় বলেই ফেললেন, “ভেবেছিলাম বন্‌ধ সফল করার ন্যূনতম প্রয়াস অন্তত সিপিএম করবে। কিন্তু এ বার একটা মিছিল পর্যন্ত করেনি ওরা।” জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি তথা জেলা সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তীর কথায়, “সিপিএম দলটা যে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গিয়েছে, তা টের পেয়ে গিয়েছেন ওই দলের নেতারা। তাই কেবল বন্‌ধ ডেকেই খান্ত!’’

কেন এমন হল? সিপিএমের জেলা সম্পাদক অজিত পতি অবশ্য বনধের সমর্থনে পথে না নামার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, “পুলিশ ও প্রশাসন বন্‌ধ রুখতে অতি সক্রিয় হয়েছিল। তা উপেক্ষা করেও বিভিন্ন জায়গায় দলের কর্মীরা নিশ্চই মিছিল করেছেন।’’ জেলার এক সিপিএম কর্মীর পাল্টা প্রশ্ন, “মোদীজি যা করেছেন তাতে এমনিতেই ক্রেতার অভাবে দোকানপাট অচল। তাহলে আমাদের আর রাস্তায় নেমে দোকান বন্ধ করতে হবে কেন?’’

রবিবার বিকেলেও পুরুলিয়া জেলার বিভিন্ন এলাকায় বন্‌ধ সফল করার দাবিতে পথে নেমেছিলেন বামনেতৃত্ব। এ দিন হয়তো বন্‌ধের সমর্থনে মিছিল বেরোবে। তা ঠেকাতে শাসকদল নামলে গোলমালের আশঙ্কা রয়েছে। এমনটা ভেবে মোড়ে মোড়ে পুলিশ মোতায়েন করা হলেও, বামেদেরই দেখা মেলেনি। ফলে শান্তিপূর্ণ এ দিন পার করতে পেরে স্বস্তিতে পুলিশকর্মীরা। তবে পুঞ্চা থানার সামনে এ দিন সিপিএম মিছিল ও পথসভা করে। পুঞ্চার ডাঙা বাজারের যাত্রী বিশ্রামাগার থেকে হরিমেলা পর্যন্ত মিছিল হয়। যদিও জনজীবন স্বাভাবিক ছিল। সকালে দিকে বেশ কয়েকটি রুটে বেসরকারি বাস পথে না নামলেও কোনও রাস্তায় বন্‌ধ সমর্থকদের পিকেটিং নেই জানার পরে বেসরকারি বাস চলাচল অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে যায়।

হরতালের কোনও প্রভাব পড়েনি দুই জেলার শিল্পাঞ্চলে। রঘুনাথপুর মহকুমার দুই বিদ্যুৎকেন্দ্র পিডিসিএলের সাঁওতালডিহি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও রঘুনাথপুরর ডিভিসির তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কর্মীদের হাজিরা ও উৎপাদন স্বাভাবিক ছিল। ডিভিসির এই প্রকল্পের মুখ্য বাস্তুকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, সোমবার প্রকল্পে স্বাভাবিক কাজ হয়েছে। বাঁকুড়ার মেজিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকেও জানানো হয়েছে, এ দিন সেখানে ৯০ শতাংশ হাজিরা ছিল।

অন্যদিকে কয়লাখনি অঞ্চল নিতুড়িয়ার দুই কয়লাখনি পারবেলিয়া এবং দুবেশ্বরীতে উৎপাদন স্বাভাবিক ছিল। পারবেলিয়ার ম্যানেজার রবীন্দ্র শর্মা জানান, সোমবার কয়লাখনিতে কর্মীদের হাজিরা ও উৎপাদন অন্যানদিনের মতোই ছিল। বন্‌ধের কোনও প্রভাব কয়লাখনিতে পড়েনি। একই ছবি মহকুমার নিতুড়িয়া, সাঁতুড়ি, পাড়ার স্পঞ্জ আয়রন কারখানাগুলিতে। নিতুড়িয়ার একটি বড় স্পঞ্জ আয়রন কারখানার কর্মকর্তা রঘুনাথ সারাওগি জানান, বন্‌ধ ডাকা হলেও তার প্রভাব কারখানায় পড়েনি।

সিপিএমের পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক তথা জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক মণীন্দ্র গোপ দাবি করেন, ‘‘বাঘমুণ্ডি, ঝালদা, কোটশিলায় বন্‌ধে ভালই সাড়া পেয়েছি। সকালের দিকে বান্দোয়ান, মানবাজার, বরাবাজারেও বাজার-দোকান বন্ধ ছিল। কিন্তু পুলিশ গিয়ে দোকানপাট খুলতে বলায় বেচাকেনা শুরু হয়। বেসরকারি বাস অনেক কম চলেছে।’’ কিন্তু রাস্তায় দলের নেতা-কর্মীরা নেই কেন?

মণীন্দ্রবাবুর যুক্তি, গ্রামে ধান কাটার মরসুম চলছে। এ ছাড়া শাসকদল অনেক জায়গায় হুমকি দিয়েছে। তাই সংঘাত এড়াতে এ দিন কর্মীরা পথে নামেননি। তবে বন্‌ধে সাড়া দিয়েছেন মানুষ।

যদিও তৃণমূল এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। দলের জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো পাল্টা দাবি করেছেন, ‘‘বিরোধীদের কোনও হুমকি দেওয়া হয়নি। এ সব মিথ্যা অভিযোগ। মানুষ বাড়ির বাইরে বেরিয়ে নিজেদের কাজ করে জনজীবন স্বাভাবিক রেখেছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Birbhum district
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE