Advertisement
E-Paper

বাজ পড়ে মৃত্যু বাড়ছে, সতর্কতা কই

পুরুলিয়া জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর সূত্রে জানানো হচ্ছে, শুধুমাত্র বর্ষার বৃষ্টিতেই নয়, বছরের যে কোনও সময়ে মেঘ জমলেই বজ্রপাতের আশঙ্কা থাকে। সেই সময়ে সতর্কতা নেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু, অনেকেই সতর্ক না হওয়ায় বিপদ বাড়ছে।

সমীর দত্ত

শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৮ ০১:০৮
ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

ঝিরঝির করে বৃষ্টি শুরু হয়েছে দেখে মোটরবাইক থামিয়ে দুই বন্ধ গাছতলায় দাঁড়িয়েছিলেন। হঠাৎ বাজ পড়ায় দু’জনে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। বাসিন্দারা ধরাধরি করে তাঁদে বান্দোয়ান ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সজ্ঞাহীন অবস্থায় নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু, এক জনকে বাঁচানো যায়নি। অন্য জন টাটার বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়ে ফেরেন। মানবাজার-বান্দোয়ান রাস্তায় মাস তিনেক আগের ঘটনা।

বৃষ্টি শুরু হওয়ায় চাষের কাজ ফেলে এক দল পুরুষ-মহিলা দৌড়ে গিয়ে দুশো মিটার দূরে প্রাইমারি স্কুলের বারান্দা গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন। কিন্তু, তিন জন মহিলা তখনও ঘাড় গুঁজে কাজ করে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ চারপাশে বিদ্যুতের ঝলক। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছিলেন, ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলেছিলেন তাঁরা। চোখ খুলতে দেখেন জমিতে সেই তিন মহিলা পড়ে রয়েছেন। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গেলেও এক জনকে বাঁচানো যায়নি। দু’মাস আগে বরাবাজার থানা এলাকার ঘটনা।

পুরুলিয়া জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর সূত্রে জানানো হচ্ছে, শুধুমাত্র বর্ষার বৃষ্টিতেই নয়, বছরের যে কোনও সময়ে মেঘ জমলেই বজ্রপাতের আশঙ্কা থাকে। সেই সময়ে সতর্কতা নেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু, অনেকেই সতর্ক না হওয়ায় বিপদ বাড়ছে। পুরুলিয়া জেলায় ইদানীং বজ্রাপাতে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে বলে মত জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের আধিকারিকদের।

জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৬-’১৭ বর্ষে এই জেলায় মোট ৪১ জন বাজ পড়ে মারা গিয়েছিলেন। তার মধ্যে পুরুষ ২৫ জন ও মহিলা ১৬ জন। ২০১৭-’১৮ বর্ষে মৃতের সংখ্যা আগের তুলনায় কিছুটা কমলেও তা নেহাত কম নয়। এই বছরে বজ্রাঘাতে ৩৬ জন মারা গিয়েছেন। পুরুষ ২৬ জন ও মহিলা ১০ জন। এ বারও ইতিমধ্যে জেলার বিভিন্ন এলাকায় বাজ পড়ে আরও কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের মানবাজার মহকুমার আধিকারিক কাশীনাথ পাল বলেন, ‘‘বাজের আঘাতে মৃত্যু হলে পরিবারকে দু’লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। সাধারণত দু’মাসের মধ্যে আর্থিক ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে দেওয়া নিয়ম। কিন্তু দেখা গিয়েছে, অনেক সময় নথিপত্র জমা না হওয়ায় ক্ষতিপূরণ দিতে দেরি হচ্ছে।’’

জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের আধিকারিক উমেশ কাশ্যপ বলেন, ‘‘জেলাগুলির মধ্যে পুরুলিয়ায় বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। সম্প্রতি নবান্নের উদ্যোগে এই জেলায় ‘লাইটনিং ডিটেকশন সেন্সর’ নামে একটি যন্ত্র বসানো হয়েছে। তাতে আশপাশের কোথায়, কোথায় বাজ পড়তে পারে, তা ৪৫ মিনিট আগেই জানা সম্ভব। নবান্ন থেকে এই যন্ত্রের নিয়ন্ত্রণ করা হয়।’’

তবে ন্যূনতম সতর্কতা নিলে বজ্রপাতের দুর্ঘটনা থেকে রেহাই পাওয়া যেতে পারে বলে মনে করছেন বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, বৃষ্টির সময় বাইরে থাকলে চটপট কোনও বাড়িতে আশ্রয় নেওয়া দরকার। সেই বাড়ি পাকা হলে ভাল। তবে কোনও ভাবেই গাছের নীচে আশ্রয় নেওয়া ঠিক নয়। গাছ থেকে অন্তত দশ হাত তফাতে থাকা মঙ্গল। বিদ্যুৎবাহী তারের থেকেও দূরে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা।

বাড়ির ভিতরে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের সতর্ক থাকতে সমস্ত বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি যেমন, টিভি, ফ্রিজ, কম্পিউটার-প্রভৃতি থেকে প্লাগ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখতে বলা হচ্ছে। এই সময় ছাদে, বারান্দায় বা জানালার ধারে দাঁড়াতেও নিষেধ করা হচ্ছে। দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘উঁচু বাড়িতে বাজের আঘাত থেকে রক্ষা পেতে ত্রিশূলের আকারে একটি লোহার ফলা তারের মাধ্যমে মাটিতে গর্ত করে পুঁতে দিতে হবে। এর ফলে বাড়ির মাথায় বাজ পড়লেও তেমন কোনও ক্ষতি হয় না। কিন্তু অনেকেই এই নিয়ম মেনে চলেন না।

জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের আধিকারিক বলেন, ‘‘আমরা বিভিন্ন ব্লক এলাকায় শিবির করে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করছি। সতর্কতা ছাড়া বজ্রপাত এড়ানোর অন্য রাস্তা নেই। স্কুলে এবং ক্লাবে তা ব্যাখ্যা করা হচ্ছে।’’

Lightning Death
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy