Advertisement
E-Paper

পতাকা টাঙাতে বাধার নালিশ, ভরা বাজারে ফেলে ‘মার’, তপ্ত বিবড়দা

ভোট যত এগিয়ে আসছে, দুই জেলায় বিক্ষিপ্ত ভাবে গোলমালের অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। দলীয় পতাকা টাঙাতে যাওয়া গিয়ে তালড্যাংরার বিবরদায় বুধবার সকালে এক বিজেপি নেতা মারধরে প্রচণ্ড জখম হন বলে অভিযোগ

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৯ ০০:০০
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিজেপি নেতা। নিজস্ব চিত্র

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিজেপি নেতা। নিজস্ব চিত্র

ভোট যত এগিয়ে আসছে, দুই জেলায় বিক্ষিপ্ত ভাবে গোলমালের অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। দলীয় পতাকা টাঙাতে যাওয়া গিয়ে তালড্যাংরার বিবরদায় বুধবার সকালে এক বিজেপি নেতা মারধরে প্রচণ্ড জখম হন বলে অভিযোগ। মঙ্গলবার রাতে মানবাজারের গোপালনগরে বিজেপি কর্মীদেরও পতাকা টাঙাতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। দু’টি ঘটনাতেই স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব মৌখিক ভাবে তৃণমূলের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন। যদিও তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, এর সঙ্গে তাঁদের দলের কেউ যুক্ত নয়। বিনা অনুমতিতে পতাকা টাঙানোয় প্রতিবাদ করেছেন স্থানীয় মানুষজন।

বিজেপির তালড্যাংরা ১ মণ্ডলের সাধারণ সম্পাদক মধুময় পরামানিককে আহত অবস্থায় প্রথমে স্থানীয় ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাঁকে বাঁকুড়া মেডিক্যালে পাঠানো হয়। পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন বিকেল পর্যন্ত ঘটনাটি নিয়ে কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি। তবে পুলিশ গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও বলেন, “বিবড়দার ঘটনার খবর পেয়েই দ্রুত পুলিশ সেখানে যায়। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলেই আমরা ব্যবস্থা নেব।”

বিজেপি ও স্থানীয় সূত্রে খবর, এ দিন সকালে মধুময় বিবড়দা বাজারে দলীয় পতাকা টাঙাচ্ছিলেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘আমাকে পতাকা টাঙাতে দেখে প্রথমে কয়েক জন তৃণমূল কর্মী বাধা দেন। তাতে কান দিইনি। এরপরেই জনা পনেরো তৃণমূল কর্মী লাঠি নিয়ে এসে বাজারের মধ্যে ঘিরে ধরে আমাকে মারধর করতে শুরু করে। অর্ধচেতন অবস্থায় মাটিতে পড়ে থাকি।’’

প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশের দাবি, হামলাকারীরা লাঠি উঁচিয়ে বাসিন্দাদের হমকি দেয়। এমনকি জখম মধুময়কে কেউ গাড়িতে তুলে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকেও দেখে নেওয়া হবে বলে শাসানি দিয়েছিল হামলাকারীরা। খবর পেয়ে স্থানীয় বিজেপি কর্মী ও মধুময়ের পরিজনেরা উদ্ধার করে তালড্যাংরা ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান।

মধুময়ের স্ত্রী রিঙ্কুর আক্ষেপ, “হামলাকারীদের হুমকিতে স্থানীয় কোনও গাড়িচালক আমার স্বামীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে রাজি হননি। শেষে তালড্যাংরা থেকে গাড়ি নিয়ে এসে ওকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যেতে হয়।” হাসপাতালে শুয়ে মধুময় দাবি করেন, কিছু দিন আগে বিবড়দা বাজারে তাঁরা দলীয় পতাকা টাঙিয়েছিলেন। কিন্তু তা খুলে ফেলে দিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। তাই এ দিন ফের পতাকা লাগাতে গিয়েছিলেন। তাঁর অভিযোগ, “ঘটনার সময় ওই বাজারেই তালড্যাংরা থানার কিছু সিভিক ভলান্টিয়ার দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু আমাকে মার খেতে দেখেও তাঁরা এগিয়ে আসেননি।” তালড্যাংরা থানার পুলিশ সেই অভিযোগ মানতে চায়নি।

বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিবেকানন্দ পাত্র দাবি করেন, “ভোটে হার নিশ্চিত জেনেই এখন সন্ত্রাসের পথে নেমেছে তৃণমূল। ওই এলাকার সাধারণ মানুষ একজোট হয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভোট দেবেন।” সন্ধ্যায় জখম দলীয় কর্মীকে দেখতে বাঁকুড়া মেডিক্যালে যান বিজেপির বাঁকুড়া কেন্দ্রের প্রার্থী সুভাষ সরকার। তবে, ওই ঘটনার সঙ্গে তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই বলেই দাবি করেছেন তালড্যাংরা ব্লক তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক মনসারাম লায়েক। তিনি দাবি করেন, “কারও অনুমতি না নিয়েই লোকজনের ঘরে ও দোকানে বিজেপির পতাকা টাঙাচ্ছিলেন ওই ব্যক্তি। তাতেই চটে গিয়ে প্রতিবাদ করেছেন মানুষ। এর সঙ্গে তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই।”

এ দিকে, মঙ্গলবার রাতে মানবাজার থানার গোপালনগর বাজারে কয়েকজন বিজেপি কর্মী পতাকা টাঙানোর সময় তৃণমূলের কয়েকজন চড়াও হয়ে পতাকা কেড়ে নিয়ে পুড়িয়ে দেন বলে অভিযোগ তুলেছেন দলের মানবাজার ১ ব্লক সভাপতি বাণীপদ কুম্ভকার। তাঁর দাবি, ‘‘তৃণমূলের ছেলেরা কর্মীদের হাত থেকে দলীয় পতাকা কেড়ে মাটিতে ফেলে দেয়। যেগুলো বাঁশ পুঁতে ঝোলানো হয়েছিল সে সব টেনে ছিঁড়ে ফেলে। কয়েকটা পতাকায় আগুন ধরিয়ে দেয়।’’ এর মধ্যে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছলে গোলমাল আর ছড়ায়নি। তৃণমূলের মানবাজার ১ ব্লক কার্যকরী সভাপতি দিলীপ পাত্রের দাবি, ‘‘এ ধরনের কোনও ঘটনা হয়নি। বিজেপি রাজনৈতিক ভাবে আমাদের সঙ্গে পেরে উঠতে পারছে না বলে এই ধরনের অবান্তর অভিযোগ করছে।’’

দুই জেলাতেই ভোট রয়েছে ১২ মে। প্রার্থীরা ভোট প্রচার শুরু করেছেন প্রায় মাস দেড়েক আগে। এতদিন সে ভাবে রাজনৈতিক সংঘর্ষের অভিযোগ ওঠেনি। কয়েক সপ্তাহ আগে থেকে বাঁকুড়া জেলার কিছু এলাকায় রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের উপরে হামলার অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। প্রথমে রানিবাঁধে সিপিএমের এরিয়া কমিটির সম্পাদক মধুসূদন মাহাতোকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে মারধরের অভিযোগ ওঠে। তারপরে পাত্রসায়রের নারায়ণপুর অঞ্চলে দলের পতাকা টাঙাতে যাওয়া বিজেপি কর্মী সুকুমার জৌলিকে মারধর করে পা ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপারের অবশ্য দাবি, “ভোটে সন্ত্রাস রুখতে পুলিশ সর্বত্রই সক্রিয় আছে। পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে।”

Politics Lok Sabha Election 2019 Manbajar TMC BJP
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy