মুখ্যমন্ত্রীর সভা ঘিরে বুধবার বাঁকুড়াবাসীর উন্মাদনা ছিল চোখে পড়ার মতো। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রচুর মানুষ বুধবার ইঁদপুরের বাগডিহায় সভাস্থলে এসেছিলেন। মঞ্চে মিনিট চল্লিশেক ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। জঙ্গলমহল কাপে ভালো খেলা ছেলেমেয়েদের চাকরিতে নিয়োগের ঘোষণাই হোক বা বিভিন্ন প্রসঙ্গে বিরোধীদের নিশানা করা— তাঁর কথায় কথায় উৎসাহে ফেটে পড়েছে জনতা। আর সেই সমস্ত কিছু মধ্যে তৈরি হয়েছে টুকরো টুকরো দৃশ্যের কোলাজ।
আকাশ থেকে
মঞ্চের পিছনে হেলিপ্যাডের ব্যারিকেড ভিড়ের চাপে ঝুঁকে পড়ছে। ভিড় সামলাতে হিমসিম পুলিশ কর্মীরা। এরই মধ্যে শব্দ শুনে উপরে চোখ চলে গেল সবার। চপার। ভিড়ের মধ্যে রব উঠল, ‘‘এসে গিয়েছেন।’’ মঞ্চে পুলিশ কর্মীরা চিৎকার করে বলে চলেছেন ‘‘শান্ত হয়ে বসুন, মুখ্যমন্ত্রী হেলিকপ্টারে আসছেন না।’’ পুলিশের কথা কানে তুললেন না কেউ। চপার মাটি ছুঁল। ভিড়ের মধ্যে তখন ‘দিদি দিদি’ রব।
চপার থেকে নামলেন কয়েক জন প্রশাসনিক কর্তা। মুখ্যমন্ত্রী এলেন সড়ক পথেই।
কাছাকাছি
মঞ্চে উঠলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁকে দেখতে মঞ্চের সামনের ব্যারিকেডে থাকা লোকজন ঠেলাঠেলি করে প্রায় একে অন্যের ঘাড়ে উঠে পড়েছেন। জনতাকে শান্ত করতে ছোটাছুটি করছেন পুলিশ কর্মীরা। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কিছু পুলিশ কর্মীর সঙ্গে রীতিমত বচসাও বাঁধিয়ে বসেন একদল লোকজন। ব্যারিকেডের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন ইঁদপুরের বাসিন্দা ভৈরব কুচলান। তিনি তখন গজগজ করে বলছেন, ‘‘ব্যারিকেড থেকে এত দূরে মঞ্চ করেছে পুলিশ যে মুখ্যমন্ত্রীকে দেখতে হলে দূরবীন লাগবে।’’
মঞ্চে উঠেই জনতার আক্ষেপ টের পেয়ে গেলেন নেত্রী। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান সেরেই ভিভিআইপি-দের মঞ্চ ছেড়ে ব্যারিকেডের কাছাকাছি গানবাজনার অনুষ্ঠানের জন্য গড়া মঞ্চে হ্যান্ড মাইক নিয়ে হাজির হলেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রীকে মূল মঞ্চ ছেড়ে কাছাকাছি আসতে দেখে আক্ষেপ মিটল জনতার। ভৈরববাবুরাই তখন বলাবলি করছেন, “মমতা এখনও সেই আগের মতই আছেন। সাধারণ মানুষের কাছাকাছি।’’
জনতা তো খুশি। কিন্তু পুলিশ কর্তাদের কপালে ভাঁজ। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয়ের বাইরে বেরিয়ে পড়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সুরক্ষার জন্য পুলিশ আধিকারিকেরা দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দিলেন। নিমেষে মঞ্চের আশেপাশে চলে এলেন কয়েক জন পুলিশ আধিকারিক। ওই মঞ্চে রাখা বাদ্যযন্ত্র সরাতে তখন ব্যস্ত নিরাপত্তা কর্মীরা। মুখ্যমন্ত্রীই তাঁদের ব্যতিব্যস্ত হতে নিষেধ করলেন। বললেন, “থাক না এগুলো। সব সরানোর দরকার নেই।”
বল পায়ে
এ দিনের সভায় প্রায় আশি হাজার মানুষকে একের পর এক চমক দিয়ে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মূল মঞ্চ ছেড়ে জনতার কাছাকাছি এসে পড়া যদি একটি চমক হয়, তাহলে জঙ্গলমহল কাপের খেলোয়াড়দের সামনে মঞ্চে কলকাতার খ্যাতনামা ফুটবলারদের দিয়ে বল নিয়ে কসরৎ করানোও কিছু কম নয়। এ দিনের সভায় ছিলেন ফুটবলার অ্যালভিটো ডি কুনহা, সমরেশ চৌধুরী, গৌতম সরকার। সভা শেষে মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের ফুটবলের ভেল্কি দেখাতে বলেন। তিন ফুটবলারই মঞ্চে এসে মুখ্যমন্ত্রীর কথা মতো পায়ে বল নাচানো শুরু করেন। সঙ্গে রাজ্যের মন্ত্রী তথা সঙ্গীতশিল্পী ইন্দ্রনীল সেনের গান।
মৌচাক
সবার চোখ যখন মঞ্চে ফুটবলারদের পায়ে, এক পুলিশ কর্মীর হঠাৎ নজরে পড়ল প্যান্ডেলের অন্য দিকে। একটা মৌচাক! নিরাপত্তাকর্মীরা গিয়ে মৌচাক আগলে দাঁড়িয়ে পড়লেন, যাতে কোনও ভাবে বল ছিটকে এলেও মৌচাকে না লাগে। তবে পোড় খাওয়া ফুটবলারদের পা যেন চুম্বক। বল ভেল্কি দেখিয়ে গেল। সেই সমস্ত মেটার পরে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে এক পুলিশ কর্তা বললেন, ‘‘রাতারাতি মৌচাকটা হল কী করে? ভাগ্যিস নজরে এসেছিল।’’
মুখ্যমন্ত্রী মঞ্চ ছাড়ার সময়ে ফের হেলিপ্যাডের সামনে জনতার ভিড় ভেঙে পড়ে। কোনও মতে সেই ভিড় সামলান পুলিশ কর্মীরা। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য ফেরার সময়েও হেলিপ্যাডমুখো হননি। সড়ক পথেই রওনা দেন মুকুটমণিপুরে। আজ, বৃহস্পতিবার মুকুটমণিপুর সংলগ্ন দেদুয়াতে প্রশাসনিক সভা রয়েছে তাঁর। সেখানে কী চমক থাকে, এখন সেই অপেক্ষা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy