E-Paper

ভেজাল গুড়ে ছেয়েছে বাজার, আক্ষেপ শিউলিদের

বিষ্ণুপুরের চুড়ামণিপুরে খেজুর রস থেকে গুড় তৈরি হচ্ছে। এই প্রক্রিয়াকে মহল বসা বলা হয়। অক্টোবর-ফেব্রুয়ারি, এই পাঁচ মাস খেজুর রস সংগ্রহে ব্যস্ত থাকেন শিউলিরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২৪ ০৯:৫০
গুড় তৈরি। বিষ্ণুপুরের চূড়ামণিপুরে।

গুড় তৈরি। বিষ্ণুপুরের চূড়ামণিপুরে। নিজস্ব চিত্র।

ভোরে খেজুর রস সংগ্রহ করা। সকালে সেই রস জাল দিয়ে গুড় তৈরি। আর সন্ধ্যায় সেই গুড় দিয়ে পিঠে খাওয়া। বঙ্গজীবনে শীতের পরিচয় বহন করে খেজুর গুড়। খেজুর রস সংগ্রহকারী শিউলিদের অনেকের দাবি, আসল খেজুর গুড়ের চাহিদা ক্রমশ কমেছে। বাজারে যা গুড় পাওয়া যায়, তার বেশ কিছু ভেজাল বলেই দাবি খেজুর গুড় তৈরির কারিগরদের।

বিষ্ণুপুরের চুড়ামণিপুরে খেজুর রস থেকে গুড় তৈরি হচ্ছে। এই প্রক্রিয়াকে মহল বসা বলা হয়। অক্টোবর-ফেব্রুয়ারি, এই পাঁচ মাস খেজুর রস সংগ্রহে ব্যস্ত থাকেন শিউলিরা। কোতুলপুরের হেমন্তপুর গ্রামের বাসিন্দা আলফাজউদ্দিন দালাল ৬০ বছর ধরে খেজুর গুড় তৈরির কাজ করছেন। তাঁর দাবি, ‘‘বসতি গড়ে উঠছে। তার প্রয়োজনে খেজুর গাছ কাটা হয়েছে দেদার। গাছের সংখ্যা দিনের পর দিন কমছে।’’

চুড়ামণিপুর এলাকায় ১৩০টি খেজুর গাছ থেকে রস নেওয়ার বরাত পেয়েছেন আলফাজউদ্দিন। তিনি বলেন, “কয়েকদিন ঠান্ডা পড়েছে বলে রস ভাল হচ্ছে। গুড়ও হচ্ছে ভাল। তবে চাহিদা তেমন নেই। আগে অনেকেই আমাদের কাছে গুড় কিনে সারাবছর ধরে খেতেন। এখন গ্রামে গ্রামে ভেজাল গুড় বিক্রি করছেন অনেকে। স্বাদে খারাপ হলেও দাম কম হওয়ায় অনেকে আসল গুড় ভেবে ভেজাল গুড় কিনছেন। শ্রম, জ্বালানি, মাটির হাড়ি কেনার খরচ ও গাছের মালিকদের টাকা মিটিয়ে লাভের পরিমাণ খুবই কম। পাটালি বিক্রি করে যা লাভ হয়, তাতেই কোনওরকমে চলে যায়।”

খিলাফত খাঁ নামে গুড় তৈরির এক কারিগর বলেন, “এখন নলেন গুড়ের দাম ১০০ টাকা, রজগুড়ের দাম ১২০ টাকা, পাটালির দাম ২০০ টাকা। গাছে রস কমে গিয়েছে। আবহাওয়া ভাল থাকলে দিনে চার টিন রস থেকে দেড় টিন গুড় হতে পারে। তবে জ্বালানির খরচ খুব বেশি। এক বস্তা জঙ্গলের পাতার দাম ৫০ টাকা।’’ বিষ্ণুপুর রসিকগঞ্জের এক খেজুর গুড় ব্যবসায়ী বলেন, “ক্রেতারা গুড় খাবেন ভাল, আবার দামও দেবেন কম, এটা হয় নাকি? পাইকারি বিক্রেতারা ৫২ টাকা কিলো দরে আমাদের গুড় দিচ্ছেন। আমরা ১০-১৫ টাকা লাভ রেখে বিক্রি করছি। ক্রেতারাও জানেন, কেউই আসল গুড় দিচ্ছেন না।”

সোনামুখীর এক শিউলি বলেন, “ঝোলা গুড় বাজার থেকে কিনে চিনি মিশিয়ে ভেজাল গুড় তৈরি করছেন অনেকে। আমাদের তৈরি আসল গুড় বিক্রি হচ্ছে না। ভেজাল গুড়ের ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছেন। পরের বছর থেকে এই কাজ করতে পারব কিনা জানি না।’’

জয়কৃষ্ণপুরের বাসিন্দা স্বপন কোলে বাজারে গুড় কিনতে এসে বলেন, “দোকানে ভেজাল গুড় মেলে। আবার অনেক শিউলিরা আসল গুড় বলে ভেজাল গুড় বিক্রি করে। আমরা সবার কাছেই ঠকে যাই। অর্ধেক দামে দোকান থেকে গুড় কিনে খাচ্ছি।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bishnupur

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy