নিজের বাড়িতে মগন রাজোয়াড়।—নিজস্ব চিত্র।
আত্মীয়ের বিবাহিত মেয়েকে শ্বশুরবাড়ি পৌঁছতে উত্তরপ্রদেশে গিয়ে রহস্যজনক ভাবে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন এক প্রৌঢ়। অপহরণের অভিযোগে কনের বাবাকে পুলিশ গ্রেফতার করে। পুলিশ তল্লাশিতে যায় উত্তরপ্রদেশ। কিন্তু সেখানে তাঁর হদিস মেলেনি। শেষে একমাস পরে সেই ব্যক্তিকে অচৈতন্য অবস্থায় জেলারই একটি রাস্তার ধারে পাওয়া দিয়েছে। মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত থাকায় সেই ব্যক্তির নিরুদ্দেশ হওয়ার কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। রঘুনাথপুর থানার পাথরকুনিয়া গ্রামের মগন রাজোয়াড়ের নিরুদ্দেশ হওয়া নিয়ে তাই ধন্দে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ।
পুরুলিয়া মফস্সল থানার ক্ষুদিবাঁধ গ্রামে আদি বাড়ি হলেও বিয়ের পরে পাথরকুনিয়া গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে গত ২২-২৫ বছর ধরে রয়েছেন পেশায় দিনমজুর প্রায় ৫২ বছরের মগন রাজোয়াড়। বাড়িতে তাঁর স্ত্রী ও চার ছেলেমেয়ে রয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৫ জানুয়ারি মগনবাবু তাঁর আত্মীয় ক্ষুদিবাঁধ গ্রামের বাসিন্দা শম্ভু রাজোয়াড়ের মেয়ে জ্যোৎস্নার বিয়েতে গিয়েছিলেন। বিয়ে হয় উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহরে। পরের দিন মেয়ে-জামাইকে বুলন্দশহরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য শম্ভুবাবু তাঁর আত্মীয় মগনবাবুকে নিয়ে রওনা দেন। ধানাবাদ থেকে তাঁরা ট্রেনে ওঠেন।
কিন্তু গোল বাঁধে উত্তরপ্রদেশ থেকে শম্ভু একাই ক্ষুদিবাঁধ ফেরার পরে। মগনের জামাই বিকাশ রাজোয়াড় দাবি করেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশ থেকে কয়েকদিন পরে একাই ফিরে আসেন শম্ভুবাবু। তিনি জানিয়েছিলেন শ্বশুরমশাই কয়েকদিন ওখানে কাটিয়ে ফিরে আসবেন। কিন্তু দিন কুড়ি পেরিয়ে যাওয়ার পরেও তিনি না ফেরায় বাড়ির লোকজন পুরুলিয়া মফস্সল থানায় নিখোঁজের ডায়েরি করেন।’’ পুলিশ জানিয়েছে, নিখোঁজের ডায়েরি করার ছ’দিন পরে শম্ভুবাবুর বিরুদ্ধে মগনবাবুকে অপহরণের অভিযোগ দায়ের করা হয়। সে দিনই শম্ভু রাজোয়াড়কে গ্রেফতার করে আদালতে তোলা হয়। সাতদিন তাঁকে পুলিশ নিজেদের হেফজতে নিয়ে এবং মগনের জামাই বিকাশবাবুকে নিয়ে বুলন্দশহরে জ্যোৎস্নার শ্বশুরবাড়িতে গিয়েছিল খোঁজ করতে। কিন্তু কোনও খবর পাওয়া যায়নি। পুলিশের বক্তব্য, জ্যোৎস্না তাঁদের কাছে দাবি করেছিলেন, বিবাইয়ে তাঁর ননদের বাড়ি থেকেই মগন হঠাৎ একদিন বেপাত্তা হয়ে গিয়েছিলেন। এ দিকে, শম্ভুবাবু পুলিশের কাছে যা জানিয়েন, তা বিভ্রান্তিকর বলে পুলিশের দাবি। কখনও তিনি জানিয়েছেন, যাওয়ার পথে মগন বাস থেকে নেমে যান, কখনও ট্রেন থেকে নেমে পড়ার কথা পুলিশকে জানিয়েছেন। সেই থেকে শম্ভুবাবু জেলহাজতে রয়েছেন।
ইতিমধ্যে মগনবাবুর পরিবার স্থানীয় পাড়ার বিধায়ক উমাপদ বাউরির মাধ্যমে পুরুলিয়ার পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হন। এরই মাঝে মঙ্গলবার মগনবাবুকে হাতে-পায়ে চোট থাকা অবস্থায় অচৈতন্য ভাবে পাওয়া যায় মফস্সল থানার খুদিবাঁধ গ্রামের মোড়ে। খবর পেয়ে বাড়ির লোকেরা তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা করিয়ে গ্রামে ফিরিয়ে আনেন। কিন্তু তাঁর আচরণ আগের মতো স্বাভাবিক নেই। বুধবার বাড়ি গিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়ার সম্পর্কে বারবার জানতে চেয়েও কথা বলা যায়নি। পরিবারের লোকেরা জানিয়েছেন, তাঁদেরও কিছু বলেননি। পুলিশের অনুমান, কোনও কারণে আঘাত পেয়ে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন হয়তো। কিছুদিন পর্যবেক্ষণে রেখে কথা বলার চেষ্টা করা হবে। তখন আদালতে তিনি জবানবন্দিতে যা বলবেন, সেই অনুযায়ী পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘ঘটনার তদন্ত চলছে। ওই ব্যক্তি সুস্থ হলেই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy