Advertisement
২০ মে ২০২৪

পুড়ে মৃত মা ও শিশুপুত্র

শাশুড়ির সঙ্গে খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে প্রায়ই মনোমালিন্য বাধত বৌমার। এক ঘরে থেকেও তাই কথাবার্তাও হামেশাই বন্ধ থাকত দু’পক্ষের। রবিবার শ্বশুরবাড়ি থেকেই সেই বধূ ও তাঁর শিশুপুত্রকে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় মা-ছেলেকে ভর্তি করানো হয়েছিল বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সোমবার সেখানেই মৃত্যু হল দু’জনের।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বড়জোড়া শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৬ ০০:৪৩
Share: Save:

শাশুড়ির সঙ্গে খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে প্রায়ই মনোমালিন্য বাধত বৌমার। এক ঘরে থেকেও তাই কথাবার্তাও হামেশাই বন্ধ থাকত দু’পক্ষের। রবিবার শ্বশুরবাড়ি থেকেই সেই বধূ ও তাঁর শিশুপুত্রকে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় মা-ছেলেকে ভর্তি করানো হয়েছিল বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সোমবার সেখানেই মৃত্যু হল দু’জনের।

বড়জোড়ার তাজপুরের ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতেরা হলেন রিমা বাউরি (২২) ও তাঁর আড়াই বছরের ছেলে আরণ্যক। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, শ্বশুরবাড়িতে ঝামেলার কারণেই মানসিক অবসাদে শিশুপুত্রকে নিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন ওই তরুণী বধূ। মৃতার মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে আত্মহত্যায় প্ররোচনার দায়ে রিমার স্বামী জীবন বাউরি ও শাশুড়ি বুলি বাউরিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোনামুখীর বাসিন্দা রিমার সঙ্গে ২০১২ সালে বিয়ে হয় জীবনের। বিয়ের পর থেকেই শাশুড়ি বুলিদেবীর সঙ্গে সাংসারিক ছোটখাটো বিষয় নিয়ে মতপার্থক্য হত রিমার। দু’জনের বিবাদ মেটাতে হস্তক্ষেপ করতেন জীবন ও তাঁর বাবা নেপাল বাউরি। তবে শাশুড়ি-বৌমার দূরত্ব ঘোচেনি। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, বৌমার সঙ্গে বিবাদ থাকলেও একমাত্র নাতি আরণ্যকের প্রতি ভালবাসায় কোনও খাদ ছিল না বুলিদেবীর। গত বৃহস্পতিবার রিমা তাঁর স্বামী ও ছেলেকে নিয়ে দিদির ছেলের অন্নপ্রাশনে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে শুক্রবার বাপের বাড়ি সোনামুখীতে এক রাত কাটান। শনিবার তাঁরা তাজপুরে ফেরেন।

পারিবারিক সূত্রের খবর, শ্বশুরবাড়ি ফেরার পর থেকেই বুলিদেবীর সঙ্গে আবার নানা বিষয় নিয়ে ঝগড়া বাধে রিমার। রাতে কিছু না খেয়েই শুয়ে পড়েছিলেন জীবন ও রিমা। নেপালবাবুই ছেলে বৌমার রাগ ভাঙিয়ে তাঁদের খাওয়ান। রবিবার সকালে জীবন কাজে বেরিয়ে পড়েন। বুলিদেবী ও নেপালবাবু অন্য কাজে ব্যস্ত ছিলেন। আরণ্যক তখন বাড়ির উঠোনেই এক পড়শি শিশুর সঙ্গে খেলায় ব্যস্ত। পুলিশ তদন্তে গিয়ে জানতে পেরেছে, রিমা আরণ্যককে ডেকে বাড়ির ভিতরে নিয়ে এসে দরজা বন্ধ করতে দেন। এর পর একটি চেয়ারে ছেলেকে কোলে নিয়ে বসে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে নেন। আরণ্যকের চিৎকারে ছুটে আসেন নেপালবাবু, বুলিদেবী। তাঁরা দেখেন, দাউদাউ আগুন জ্বলছে নাতি ও বৌমার গায়ে। পড়শিরা এসে দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে মা -ছেলেকে উদ্ধার করে প্রথমে বড়জোড়া হাসপাতাল, পরে বাঁকুড়া মেডিক্যালে পাঠানো নিয়ে যান।

সোমবার রিমার মা লিলি বাউরি বড়জোড়া থানায় মেয়ের স্বামী ও শাশুড়ির বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁর অভিযোগ, “বিয়ের পর থেকেই ছোট ছোট বিষয়ে আমার মেয়ের সঙ্গে অশান্তি করতেন শাশুড়ি। জামাইও সে ভাবে প্রতিবাদ করত না।’’ নেপালবাবুর বিরুদ্ধে অবশ্য তাঁর কোনও অভিযোগ নেই। পরিবারে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে শোকে পাথর হয়ে গিয়েছেন নেপালবাবু। থানা চত্বরেই হাউহাউ করে কাঁদতে কাঁদতে জীবনবাবু বলছিলেন, “অভিমানের আগুনে পুড়ে আমার সব শেষ হয়ে গেল!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Burned to Death Barajora
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE