মুসলিম পরিবারে তৈরি হওয়া ঘি ছাড়া ‘অভুক্ত’ থাকেন সিদ্ধেশ্বর। সম্পন্ন হয় না হোম। একই সঙ্গে মুসলিম পরিবারগুলির পাঠানো ফল এবং মিষ্টি খেয়ে উপবাস ভাঙেন হিন্দু সন্ন্যাসীরাও। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে সম্প্রীতির এমন অনন্য নজির বয়ে চলেছে বাঁকুড়ার ইন্দাস ব্লকের বিউর গ্রাম। প্রায় তিনশো বছর ধরে গ্রামবাসীরা পুজো করে আসছেন সিদ্ধেশ্বরের। এক বারও বেনিয়ম হয়নি সেই প্রথার।
বাঁকুড়ার বিউর গ্রামে গাজন শুরু হয় অক্ষয় তৃতীয়ার দিন। শেষ হয় বুদ্ধপূর্ণিমায়। স্থানীয় সেন, সরকার এবং রায়— এই তিন পরিবার গাজন পরিচালনা করলেও, এই উৎসব আসলে বিউর-সহ আশপাশের অন্তত ১০টি গ্রামের। বিভিন্ন গ্রাম থেকে শ’য়ে শ’য়ে মানুষ সন্ন্যাসী হন গাজনে। এই গাজনের অন্যতম আকর্ষণ বুদ্ধপূর্ণিমার হোম। সেই হোমের জন্য কমপক্ষে এক সের ঘি প্রয়োজন হয়। আর সেই ঘি আসে বিউর গ্রামেরই মল্লিকপাড়ার এক মুসলিম পরিবার থেকে। প্রথা, ওই মুসলিম পরিবার থেকে ঘি না এলে সিদ্ধেশ্বরের হোম হয় না।
সত্যনারায়ণ সরকার নামে গাজনের এক উদ্যোক্তা বলেন, ‘‘আমাদের গ্রামে হিন্দু এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্পর্ক কোনও দিনই এতটুকু টাল খায়নি। গাজন পরিচালনার ক্ষেত্রে যে কমিটি তৈরি হয় তাতে যেমন হিন্দুরা থাকেন তেমনই অনেক মুসলিমও আছেন। মুসলিম পরিবার থেকে আসা ঘিয়ে সিদ্ধেশ্বরের হোম হয়। তেমনই মুসলিম পরিবারগুলির পাঠানো ফল খেয়ে সন্ন্যাসীরা তাঁদের উপবাস ভঙ্গ করেন। যুগ যুগ ধরেই এই রীতি চলে আসছে।’’