Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
ইদের আগে ঘরে ফেরার পালা

কেরল থেকে নিপা এল না তো, সংশয়

জেলা ও মহকুমা হাসপাতালগুলিকে সতর্ক করা হলেও, কেরল থেকে আসা কারও দেহে ওই ভাইরাস সংক্রমণ হয়ে থাকলে কী ভাবে তা চিহ্নিত করা যাবে, তা নিয়ে সংশয়ে স্বাস্থ্য দফতর।

ছবি: শাটার স্টক।

ছবি: শাটার স্টক।

দয়াল সেনগুপ্ত
সিউড়ি শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৮ ০০:০৮
Share: Save:

নিপা ভাইরাস নিয়ে স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশিকা ২০ দিন আগেই পৌঁছেছে বীরভূমে। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, ওই নির্দেশিকায় লেখা ছিল— ‘কেরল থেকে ফিরেছেন এমন কেউ জ্বরে আক্রান্ত হলে তাঁদের বিষয়টি অত্যন্ত যত্ন নিয়ে দেখতে হবে।’ সতর্ক ছিল জেলা স্বাস্থ্য দফতর। জেলা থেকে ব্লক— প্রতিটি স্তরের হাসপাতালে সে কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ইদের আগে কপালে ভাঁজ পড়ল স্বাস্থ্যকর্তাদের। কারণ কর্মসূত্রে দক্ষিণ ভারতে থাকা শ্রমিকদের অনেকেই ইদে জেলায় নিজেদের বাড়িতে ফিরেছেন। তাঁদের কেউ কেউ এসেছেন কেরল থেকে। তাঁদের কারও শরীরে নিপা ভাইরাস রয়েছে কি না, তা দ্রুত চিহ্নিত করে উপযুক্ত পদক্ষেপ করতে তৎপর স্বাস্থ্যকর্তারা।

জেলা ও মহকুমা হাসপাতালগুলিকে সতর্ক করা হলেও, কেরল থেকে আসা কারও দেহে ওই ভাইরাস সংক্রমণ হয়ে থাকলে কী ভাবে তা চিহ্নিত করা যাবে, তা নিয়ে সংশয়ে স্বাস্থ্য দফতর। প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, জেলার কোন ব্লক থেকে কত বাসিন্দা ভিন্‌ রাজ্যে কাজে গিয়েছেন, তার কোনও তথ্যও তাঁদের কাছে নেই।

কেরলে নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাই ওই রাজ্য থেকে আসা লোকেদের নিয়েই স্বাস্থ্য দফতর বেশি চিন্তিত। পরিস্থিতি সামলাতে প্রশাসনের তরফে জেলা পুলিশের সাহায্য চাওয়া হয়েছে। প্রশাসনের এক শীর্ষকর্তা জানান, প্রতিটি থানায় মোতায়েন সিভিক ভলান্টিয়ার ও গ্রামীণ পুলিশ এলাকার খবর রাখেন। দক্ষিণ ভারত, বিশেষত কেরল থেকে আসা কোনও শ্রমিক অসুস্থ হলে স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেবেন তাঁরা।

বীরভূম স্বাস্থ্য জেলার সিএমওইচ হিমাদ্রি আড়ি জানিয়েছেন, নানুর ও লাভপুরে এমন দু’জনের হদিস মিলেছিল যাঁরা কেরল থেকে জ্বর নিয়ে ফিরেছেন। বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাঁদের বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়। কিন্তু তাঁদের কারও দেহে নিপার অস্তিত্ব মেলেনি। তবে তাঁর মন্তব্য, ‘‘ইদের আগে এ নিয়ে আরও বেশি সতর্ক থাকা জরুরি।’’

প্রশাসনিক সূত্রে খবর, রাজমিস্ত্রি, রংমিস্ত্রি এবং জোগাড়ের কাজে জেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে অনেকেই দক্ষিণ ভারতে যান। উৎসবের সময় বাড়ি ফেরেন তাঁরা। সিএমওএইচ জানান, কেউ কেরল থেকে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন কি না, বাড়ি বাড়ি সমীক্ষার সময় আশাকর্মীদের তা জানতে বলা হয়েছে। পুলিশের সহযোগিতা পেলে আরও ভাল ভাবে নজরদারি করা সম্ভব।

জেলা স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, প্রতিটি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বিএমওএইচ-দের সতর্ক থাকার কথা জানানো হয়েছে। নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত কারও চিকিৎসার জন্য ‘আইসোলেশন ইউনিট’ তৈরি রয়েছে বলে জানিয়েছেন সিউড়ি হাসপাতালের সুপার শোভন দে ও বোলপুর হাসপাতালের সুপার অমিত মজুমদার।

রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের একটি সূত্রের দাবি, এই রোগ ঠেকানোর কোনও রাস্তা এখনও নেই। চিকিৎসা নেই। সর্বোপরি এই ভাইরাস নতুন বলে, এর বিরুদ্ধে মানুষের শরীরে সে ভাবে প্রতিরোধও গড়ে ওঠেনি। ফলে, মৃত্যুর হার বিশ্বে গড়ে প্রায় ৭৫ শতাংশ। আর সব চেয়ে বড় কথা, ফলের মধ্যেই যে ‘মৃত্যুবাণ’ লুকিয়ে রয়েছে, তা বোঝারও কোনও রাস্তা নেই! রোগের উপসর্গ প্রথম অবস্থায় অন্য যে কোনও ভাইরাস সংক্রমণের মতোই। জ্বর, মাথাব্যথা, বমি। কিন্তু এর পরের ধাপেই ভাইরাস তার খেলা দেখাতে শুরু করে। মাথায় পৌঁছে যায় সংক্রমণের রেশ। শুরু হয় খিঁচুনি। মানুষ অজ্ঞান হয়ে যান।

হাসপাতালে আক্রান্তকে ভর্তি করিয়ে রোগের উপসর্গ কমানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু অধিকাংশ রোগী মস্তিষ্কের (ব্রেন) প্রদাহে মারা যান। তার আগে তিনি যে কত জনকে সংক্রামিত করেন, তার ঠিক নেই। কারণ, তাঁর শরীর নিঃসৃত তরলের মধ্যেই থাকে মৃত্যুবাণ। সংক্রামিত পশু, বিশেষ করে শুয়োরের শরীর নিঃসৃত তরলের সংস্পর্শে এলেও এই রোগ হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, রোগ ঠেকাতে চাইলে পশুপাখির উচ্ছিষ্ট ফল এবং যে এলাকায় প্রচুর বাদুড়, সেখানকার খেঁজুরের রস বা তাড়ি খাবেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE