প্রতীকী ছবি।
চাল-ডাল-আলু (ড্রাই রেশন) শেষ বার বিলি হয়েছিল ফেব্রুয়ারি মাসে। তার পরে আর খাদ্য সামগ্রী জোটেনি। তার জেরেই সঙ্কটে বীরভূমের সুসংহত শিশু বিকাশ কেন্দ্রের (আইসিডিএস) উপভোক্তারা। ছয় মাস থেকে ছয় বছরের শিশু, প্রসূতি ও গর্ভবতী মা মিলিয়ে সংখ্যাটা চার লক্ষেরও বেশি। অধিকাংশই গরিব পরিবারের।
উপভোক্তাদের একাংশের অভিযোগ, অঙ্গনওয়ড়ি কেন্দ্র থেকে পাওয়া রান্না করা খাবারে অনেক সুরাহা হত। কিন্তু, সে-সব বন্ধ হয়ে গিয়েছে ১৫ মাস। মন্দের ভাল, মাসে মাসে একবার করে চাল, ডাল ও আলু বিলির ব্যবস্থা করেছিল সরকার। গত প্রায় চার মাস তা-ও বন্ধ রয়েছে। উপভোক্তাদের ক্ষোভ, করোনার প্রকোপ ও লকডাউনের জন্য এমনিতেই পরিবারের আয় তলানিতে ঠেকেছে। অঙ্গনওয়াড়ির চাল-আলু তো অন্তত দিক।
সূত্রের খবর, ফুড কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া (এফসিআই) এবং রাজ্য সরকার যৌথ ভাবে এই প্রকল্পের খাদ্য সামগ্রী দেয়। ঘাটতি তৈরি হয়েছিল তাতেই। বীরভূম জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘চালের ঘাটতি ছিল। সেটা সবে ঢুকেছে। আশা করছি, শীঘ্রই আইসিডিএস উপভোক্তাদের সে-সব বিলির নির্দেশ আসবে।’’
প্রসঙ্গত, করোনা সংক্রমণ রুখতে সেই গত বছরের মার্চ থেকেই রাজ্যে সব অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। কিন্তু, ওই কেন্দ্রগুলির উপরে নির্ভরশীল প্রসূতি, গর্ভবতী ও শিশুরা যাতে সমস্যায় না পড়েন, সেই ভাবনা ভেবেছিল রাজ্য সরকার। রান্না করা খাবার দেওয়া সম্ভব না হলেও উপভোক্তাদের বাড়ি বাড়ি মাথা পিছু ২ কেজি করে চাল, ৩০০ গ্রাম করে ডাল ও ২ কেজি করে আলু পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা হয়। কিন্তু বেশ কয়েক মাস সেই ‘ড্রাই রেশন’ সরবরাহে ছেদ পড়ায় সমস্যা তৈরি হয়েছে। প্রশ্নের মুখে উপভোক্তাদের পুষ্টির প্রসঙ্গও।
প্রশাসন সূত্রে খবর, জেলায় অনুমোদিত অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র পাঁচ হাজারের সামান্য বেশি। সেখানে ছ’মাস থেকে ছ’বছর পর্যন্ত শিশু, গর্ভবতী ও প্রসূতি মিলিয়ে উপভোক্তার সংখ্যা ৪ লক্ষ ২০ হাজারেরও বেশি। দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্র বন্ধ থাকা এবং ড্রাই রেশন না পাওয়ায় সমস্যা হওয়া স্বাভাবিক। জেলার একাধিক অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা তাঁদের অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, ‘‘কেন্দ্র বন্ধ থাকলেও নিজের নিজের এলাকা থেকে উপভোক্তারা প্রায়ই জানতে চান, এত দিন কেন চাল,ডাল, আলু পাচ্ছেন না। কবে দেবে। উত্তর দিতে পারছি না। আমাদেরও খারাপও লাগছে।’’
আবার অনেক কর্মীর দাবি, চালের ঘাটতি ছিল ঠিকই। কিন্তু, এমন বহু অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র রয়েছে, যেখানে যথেষ্ট পরিমাণ চাল ও ডাল মজুত ছিল। এই কয়েক মাসে সেগুলিতে পাকা লেগে খারাপ হওয়া আটকাতে তাঁদের কাঠখড় পোহাতে হয়েছে। এক কর্মীর কথায়, ‘‘তার পরেও চাল-ডালে পোকা ধরে যাওয়া আটকানো যায়নি। তার উপরে, অনেক কেন্দ্রের ভবন বেহাল। বৃষ্টির জল ঢুকেও মজুত খাবার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’’
সবচেয়ে উদ্বেগের গত বছরের গোড়া থেকে রান্নার জন্য মজুত তেল পড়ে পড়ে নষ্ট হয়ে যাওয়া। সূত্রের খবর, সর্ষের তেল বিলি না হওয়ায় তেলের বোতলগুলির অধিকাংশই মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছে। জেলায় পাঁচ হাজারেরও বেশি কেন্দ্র ধরলে পরিমাণটা যথেষ্টই।
জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলছেন, ‘‘এই বিষয়টিও নজরে আছে। তেলের বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy