Advertisement
E-Paper

সোনার প্রতিমা নেই, ধাতুর মূর্তিতে পুজো ভবানীপুরে

মুসলমান রাজাদের কাছ থেকে পাওয়া সিংহাসনের উপর আধশোয়া সোনার তৈরি আসল ভবানী মূর্তিটা কবেই চুরি গিয়েছে। তারপরে সেই মূর্তির আদলে কখনও তৈরি হয়েছে সিমেন্ট, কখনওবা ধাতুর ভবানী মূর্তি। এখনকার মূর্তিটি অবশ্য অষ্টধাতুর।

দয়াল সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:১৩
অষ্টধাতুর ভবানী মূর্তি। —নিজস্ব চিত্র

অষ্টধাতুর ভবানী মূর্তি। —নিজস্ব চিত্র

মুসলমান রাজাদের কাছ থেকে পাওয়া সিংহাসনের উপর আধশোয়া সোনার তৈরি আসল ভবানী মূর্তিটা কবেই চুরি গিয়েছে। তারপরে সেই মূর্তির আদলে কখনও তৈরি হয়েছে সিমেন্ট, কখনওবা ধাতুর ভবানী মূর্তি। এখনকার মূর্তিটি অবশ্য অষ্টধাতুর।

এ ভাবেই বার বার প্রতিমার উপাদান বদলেছে রাজনগরের ভবানীপুরের বৈদ্যদের পুজোর। কিন্তু পুজোর রীতি বা কৌলিন্য বদলায়নি এতটুকুও। রাজনগরের ভবানীপুরে বংশ পরম্পরায় কয়েক শতাব্দী ধরে মা দুর্গা ভবানীরূপে পূজিত হয়ে আসছেন। দুর্গার আর এক রূপ ভবানী। মা ভবানী-র নাম অনুসারেই গ্রামের নাম হয়েছিল ভবানীপুর।

বহুকাল আগে মাটির মন্দিরের বদলে তৈরি হয়েছে স্থায়ী ভবানী মন্দির। কালের প্রভাবে তাও জীর্ণ হয়ে পড়েছিল। সম্প্রতি সেই জীর্ণ মন্দির সংস্কারের কাজ শেষ হয়েছে। মহালয়ার দিন মন্দির উদ্বোধন হচ্ছে। পারিবারিক ইতিহাস বলছে, ওড়িশার মালঞ্চনগর থেকে প্রসিদ্ধ বৈদ্য ভবানীশঙ্কর কবিরাজ এসেছিলেন রাজনগরে। তৎকালীন রাজনগরের এক মুসলিম রাজা জোনেদ খাঁয়ের চিকিৎসার জন্য ওই কবিরাজকে এখানে নিয়ে আসা হয়েছিল হাতির পিঠে চাপিয়ে। তাঁর চিকিৎসায় রাজা সুস্থ হয়ে উঠলে সাম্মানিক বাবদ তাঁর কাছ থেকে সোনার ভবানী মূর্তি চেয়ে নিয়ে ছিলেন ভবানীশঙ্কর। তবে এই প্রচলিত কাহিনি নিয়ে প্রশ্নও রয়েছে। মুসলিম রাজ পরিবারে দেবীমূর্তি এল কী ভাবে?

বীরভূমের ইতিহাস নিয়ে চর্চা করছেন এমন অনেকের মতে, এটা অস্বভাবিক নয়। তাঁদের মধ্যে একজন আদিত্য মুখোপাধ্যায় বলছেন, “রাজনগরে মুসলিম রাজাদের শাসনকালের আগে সেখানে রাজত্ব করেছেন হিন্দুরাজা। হতে পারে ওই মূর্তি সেই আমলের বা পরে কোনও হিন্দু রাজা রাজনগরের মুসলিম রাজাদের উপহার দিয়েছেন। প্রথমে ভবানীমূর্তি নিয়ে আসা হয়েছিল রাজনগরের রানিপুর গ্রামে। বপরে বর্গী আক্রমণের ভয়ে সেই মূর্তি কবিরাজের বংশধরেরা একটি সাঁওতাল পল্লিতে নিয়ে গিয়ে লুকিয়ে রাখেন। পরে তা প্রতিষ্ঠা করা হয় ওই গ্রামে।

পরবর্তীকালে গ্রামের নাম বদলে হয় ভবনীপুর। সেই থেকে পুজোর একই রীতি বহন করে চলেছেন ২৪ ঘর সেবাইত। সেবাইতদের মধ্যে প্রবীণ দিলীপ সেনগুপ্ত, সমীর সেনগুপ্ত, প্রবীণা গীতারানি সেনগুপ্ত বা চাঁপা সেনগুপ্তরা বলেন, “দুর্গাপুজোর রীতি মেনেই মা ভবানীর পুজো হয়ে থাকে। তবে সবচেয়ে বেশি ধূম হয় নবমীর দিন। সে দিন প্রতিমা শোভাযাত্রা সহকারে মন্দির থেকে কিছুটা দুরে পীঠে (একটি বেদি) নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই চলে পুজোপাঠ, পশুবলি। সন্ধ্যায় আবার দেবীকে মন্দিরে ফিরিয়ে আনা হয়।” তাঁরা জানান, এখনও রাতে গ্রামের সবাইকে প্রসাদ খাওয়ানো হয়। আত্মীয়-স্বজন যাঁরা যেখানেই থাকুন, নবমীর দিন গ্রামে আসবেনই। খুব হইচই হয়।

বহু বছর ধরে মা ভবানীর পুজো করে চলেছেন পুরহিত তারাগতি চক্রবর্তী। তিনি জানান, আসলে মন্দিরে নারায়ণ বিগ্রহ থাকায় মন্দির চত্বরে পশুবলি নিষিদ্ধ। তাই নবমীর দিন দেবীকে মন্দিরের বাইরে নিয়ে যাওয়ার প্রথা।

মূলত কবিরাজ বা বৈদ্যদের পুজো বলেই খ্যাত মা ভবানীর এই পুজো। কিন্তু গ্রামের আদি দুর্গাপুজো বলে গ্রামের মানুষও ওই পুজো এখন নিজেদের বলেই মনে করেন। মন্দির সংস্কার করতে তাই ২৪ ঘর সেবাইতের সঙ্গে খরচ ভাগ করে নিয়েছেন ভবানীপুর গ্রামবাসী। গ্রামের যে কোনও মাঙ্গলিক কাজেও সবাই ভবানী মন্দিরে আসেন। সেটাই রীতি।

ইতিহাস সঙ্গে থাকুক। সামনের কটা দিন আনন্দে মেতে উঠতে তৈরি রাজনগরের ভবানীপুর। উচ্ছ্বাস তরুণ প্রজন্মের মধ্যেই বেশি। দেবদত্ত মুখোপাধ্যায়, মৌমিতা সেনগুপ্ত, বাবু সাধু, অনামিকা মিত্র জানায়, তাঁরা খুব আনন্দে কাটাতে চায় পুজোর ক’টা দিন।

dayal sengupta rajnagar metal idol latest news online news latest news online
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy