প্রস্তুতি: চলছে কাঠামো তৈরি। ছবি: কল্যাণ আচার্য
বন্যার কারণে প্রায় ১০০ বছর আগে গ্রামের একমাত্র দুর্গাপুজো বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তার পর থেকে পুজো প্রচলনের আর কোনও উদ্যোগ হয়নি। এ বারই ফের দুর্গাপুজো করার তোড়জোড় শুরু হয়েছে লাভপুরের ‘বানডোবা’ গ্রামে।ওই গ্রামের পোশাকি নাম অবশ্য জয়চন্দ্রপুর। কিন্তু লাভপুরের গ্রামটিকে এলাকার মানুষ ‘বানডোবা’ গ্রাম বলে ডাকেন। কারণ, প্রায় প্রতি বছর বর্ষায় কুঁয়ে নদী এবং লাঙ্গলহাটা বিলের জলে প্লাবিত হয়ে যায় ওই গ্রাম। অথচ ওই গ্রামে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই। বাইরের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম বলতে রয়েছে নৌকা কিংবা লোহার কড়াই। বছরের প্রায় ৬ মাস ওই জলযন্ত্রণা ভোগ করতে হয় ‘বানডোবা’র বাসিন্দাদের।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই গ্রামে প্রায় ৯০টি পরিবারের বাস। অধিকাংশই কৃষিজীবী। গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, ১০০ বছর আগে ওই গ্রামে দূর্গাপুজোর প্রচলন ছিল। ছিল মাটির দূর্গামন্দিরও। কিন্তু ফি বছর বন্যায় সেই মন্দির-সহ অর্ধনির্মিত প্রতিমা ভেঙে যেত। তাই একটা সময় বন্ধ হয়ে যায় পুজো। পরবর্তী কালে পাকা মন্দির হয়েছে। সেই মন্দিরে অন্নপূর্ণা, সরস্বতী এবং বিশ্বকর্মা পুজো হলেও দুর্গাপুজো চালু হয়নি। এ বছরই প্রথম চালু হতে চলেছে পুজো৷
স্বভাবতই গ্রামে খুশির হাওয়া। সঙ্গে ব্যস্ততাও। গ্রামের প্রৌঢ় মানিকচন্দ্র মণ্ডল, গুণধর মল্লিক বলেন, ‘‘বাবা-ঠাকুরদার মুখে শুনেছি, ১০০ বছর আগে আমাদের গ্রামে দূর্গাপুজো ছিল। অর্থাভাবে এত দিন আর পুজো চালু করা যায়নি। এ বার পুজো হবে ভেবেই খুব ভাল লাগছে।’’ গ্রামের একাদশ শ্রেণির ছাত্র বিক্রম ঘোষ, রাখি বাগদিরা বলে, ‘‘আমাদের প্রায় ৩-৪ কিমি দূরে জামনা, বগতোড় বা ঠিবায় পুজো দেখতে যেতে হয়। কিন্তু অধিকাংশ বছর রাস্তা জলে-কাদায় ডুবে থাকে। তাই সন্ধ্যে নামার আগেই বাড়ি ফিরে আসতে হত। এ বার গ্রামেই পুজো হচ্ছে। দিনরাত আনন্দ করব।’’
জয়চন্দ্রপুরে দুর্গাপুজো হবে জেনে খুশি পার্শ্ববর্তী হরিপুর ও চতুর্ভুজপুর গ্রামের বাসিন্দারাও। ওই দুই গ্রামেও পুজো নেই। সম্প্রতি হরিপুর গ্রামে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠলেও চতুর্ভুজপুরের বাসিন্দাদের একই জলযন্ত্রণা ভোগ করতে হয়। ওই গ্রামের প্রশান্ত ঘোষ, হরিপুরের পলাশ মণ্ডলদর কথায়, ‘‘পুজো এলেই আমাদের মন খারাপ হয়ে যায়। গ্রামে পুজো না থাকায় ছেলেমেয়েদের নিয়ে মহিলারা বাপেরবাড়ি চলে যান। এ বার জয়চন্দ্রপুরের বাসিন্দারা সেই মন খারাপ দূর করে দিয়েছেন। পুজোর ব্যাপারে আমরাও ওঁদের পাশে থাকব।’’ জয়চন্দ্রপুরের পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা সজল মণ্ডল, কৃষ্ণগোপাল মণ্ডল, চিন্ময় বাগদিরা জানালেন, ৪০ হাজার টাকা বাজেট ধার্য হয়েছে। নিজেদের মধ্যে চাঁদা তোলার পাশাপাশি ঠিকায় ধান কেটে ওই টাকার সংস্থান করা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy