Advertisement
E-Paper

ধান বেচতে খোলা বাজারেই আগ্রহী চাষি

খোলা বাজারে ১২০০।সরকারের ঘরে ১৪৯০।দামের এত ফারাকের পরেও সহায়ক মূল্যে ধান বেচার শিবিরে গ্রামীণ প্রান্তিক চাষিদের আকৃষ্ট করতে পারছে না রাজ্য সরকার। ফলে ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেকটাই পিছিয়ে রাজ্য। বীরভূমের ছবিটাও তার থেকে কিছু মাত্র আলাদা নয়।

দয়াল সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:৩৫
দুবরাজপুরে চলছে শিবির। নিজস্ব চিত্র।

দুবরাজপুরে চলছে শিবির। নিজস্ব চিত্র।

খোলা বাজারে ১২০০।

সরকারের ঘরে ১৪৯০।

দামের এত ফারাকের পরেও সহায়ক মূল্যে ধান বেচার শিবিরে গ্রামীণ প্রান্তিক চাষিদের আকৃষ্ট করতে পারছে না রাজ্য সরকার। ফলে ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেকটাই পিছিয়ে রাজ্য। বীরভূমের ছবিটাও তার থেকে কিছু মাত্র আলাদা নয়। লক্ষ্যমাত্রা যেখানে ৩ লক্ষ ৮২ হাজার মেট্রিক টন, সেখানে ফেব্রুয়ারির ১০ দিন পরেও মাত্র ৪০ হাজার মেট্রিক টন ধান কিনতে পেরেছে প্রশাসন।

উদ্বেগের এই ছবিটা পাল্টাতে নবান্নের নির্দেশে কোথায় খামতি খতিয়ে দেখতে গত মঙ্গলবারই বীরভূমে ঘুরে গিয়েছেন অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দফতরের সচিব এস কে থাড়ে। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করে নানা বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে গিয়েছেন। ধান কেনার জন্য আরও বেশি করে প্রচারও চালাতে বলেছেন। সক্রিয় হতে বলেছেন সমস্ত বিডিও এবং এসডিও-দেরও। কিন্তু লাখ টাকার প্রশ্ন এর পরেও কি লক্ষ্যে পৌঁছনো সম্ভব? প্রতিক্রিয়া খুব একটা ইতিবাচক নয় জেলা প্রশাসনের কর্তাদেরই একাংশের।

জেলা খাদ্য দফতর সূত্রের খবর, বর্তমানে জেলায় ২১টি ক্রয়কেন্দ্র খুলে সহায়ক মূল্যে ধান কিনছে প্রশাসন। ইতিমধ্যেই জেলার ৬০টি সমবায় সমিতি ধান কেনায় চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। ধান কেনা শুরু করেছে ৫০টি। এ ছাড়াও স্বনির্ভর গোষ্ঠী সমূহের মাথায় থাকা বেশ কয়েকটি সঙ্ঘও সমবায়কে মাধ্যম করে ধান কেনায় চুক্তিবদ্ধ করা হয়েছে। অবাক করার বিষয়, খোলা বাজারে যেখানে ধানের দাম কুইন্ট্যাল প্রতি ১২০০ টাকার আশপাশে ঘোরাফেরা করছে, সেখানে সহায়ক মূল্য ১৪৭০ টাকা এবং ২০ টাকা উৎসাহ ভাতা মিলিয়ে কুইন্ট্যাল প্রতি ধানের দাম চাষি পাবেন— ১৪৯০ টাকা। দফতরের কর্তাদের অনেকেরই বাস্তব অভিজ্ঞতা বলছে, এর পরেও সরকারি ক্রয়কেন্দ্রগুলিতে না গিয়ে আড়ত বা মহাজনদের কাছেই ধান বেচতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন চাষিরা।

কেন এমনটা হচ্ছে?

জেলার চাষিদের সঙ্গে কথা বলে উঠে এল বেশ কিছু সমস্যার কথা। খয়রাশোল ব্লকের চাষি রামকৃষ্ণ মণ্ডল, দুবরাজপুরের রণবীর চৌধুরী, সিউড়ি ১ ব্লকের কারিবুল শেখ, নলহাটির ব্লকের বিনোভা লাহা— প্রত্যেকেই একাধিক অসুবিধার কথা তুলে ধরেছেন। এক, ধান সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি করতে না পারা। কারণ, একটি ব্লকে একটি মাত্র ক্রয়কেন্দ্র। রীতিমতো নাম নথিভুক্ত করে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের যাবতীয় তথ্য দিয়ে আসার পরে ধান কেনার জন্য ডাক আসছে কমপক্ষে দিন সাতেক পরে। দুই, এক জন চাষির কাছে একবারে ধান নেওয়ার পরিমাণ বেঁধে দেওয়া হয়েছিল মাত্র ১৫ কুইন্ট্যাল (মাত্র দু’দিন হল সেই পরিমাণ বাড়িয়ে ৪৫ কুইন্ট্যাল করেছে জেলা খাদ্য দফতর)। তার উপরে প্রতি কুইন্ট্যালে ১০ কিলোগ্রাম করে ধান বাদ দিয়েই দাম পাচ্ছেন চাষিরা। তিন, যোগাযোগ ও ধান বয়ে নিয়ে আসার খরচ।

চাষিদের দাবি, পঞ্চায়েত ভিত্তিক ক্রয়কেন্দ্র না থাকায় ব্লকে যেখানে যেখানে ক্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে, সেখান থেকে ব্লকের বহু গ্রামের দূরত্ব ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত হয়ে যাচ্ছে। এতটা পথ ধান বয়ে আনার খরচ যথেষ্টই। চার, সঙ্গে সঙ্গে নগদে টাকা না পাওয়া। এটিই সরকারি শিবিরে চাষিদের ধান বেচা নিয়ে অনাগ্রহের সব থেকে বড় কারণ বলে মানছেন দফতরের কর্তারাও। এ বার যদিও খাদ্য দফতর নির্দিষ্ট সফট‌্ওয়্যারের মাধ্যমে আরটিজিএস পদ্ধতিতে চাষির অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করে দিচ্ছে। তবু সেই টাকা পেতে কমপক্ষে তিন দিন সময় লাগছে। এর পরে আবার সংশ্লিষ্ট চাষি যদি তাঁর অ্যাকাউন্টে ‘কেওয়াইসি’ না দিয়ে থাকলে, ওই টাকা পাচ্ছেন না। এত ঝামেলা এড়াতে কম টাকাতেও কাছের আড়তদারদের ধান বিক্রি করছেন অধিকাংশই।

ধান কিনতে যে সমবায়গুলিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, চাষিদের মনে প্রশ্ন রয়েছে তাদের নিয়েও। প্রথমত, কেন্দ্রয় সমবায় ব্যাঙ্ক বন্ধ থাকায় গত দু’বছরে জেলার সমবায়গুলির হাল করুণ হয়েছে। ফলে চুক্তিবদ্ধ হলেও অনেক সমবায়ই ধান কেনায় তেমন উৎসাহ দেখাচ্ছে না। আবার ধান কিনেও চাষিকে টাকা দেওয়া যায়নি, এ জেলায় এমন ঘটনাও ঘটেছে। গত বছর নানুরের একটি সমবায়ের ওই অভিজ্ঞতার কথা ভেবে ধীরে চল নীতি নিয়েছে অনেকে। প্রশাসনের সুপারিশে ওই আর্থিক সঙ্গতিহীন ওই সমবায় অস্বিত্বহীন এক চালকলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে রাজনগর ও নানুরের দু’টি ব্লকের ৪১৩ জন চাষির কাছে থেকে ধান কিনেছিল। যদিও চাষিদের ১ কোটি ৪৪ লক্ষ টাকা এখনও মেটাতে পারেনি তারা। জেলায় ‘ব্লাক লিস্টেড’ বেশ কয়েকটি চালকল রয়েছে। এমনই একটি ধানকলের সঙ্গে চুক্তি করে ফেঁসেছে দুবরাজপুরে একটি কৃষি সমবায় সমিতিও। চাষিদের কাছে থেকে ধান কিনতে চাইলেও উপায় নেই।

জেলা খাদ্য নিয়ামক দীপেন্দু বড়ুয়া বলছেন, ‘‘প্রচার চলছে। ধান বিক্রি করতে গিয়ে কেউ ফিরেছেন, এমনটা হয়নি। তবে, কিছু চাষির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নিয়ে সমস্যা থাকায় টাকা ট্রান্সফার করতে অসুবিধা হচ্ছে।’’ অন্য দিকে, জেলার লিড ব্যাঙ্ক ম্যানেজার দীপ্তেন্দ্রনারায়ণ ঠাকুর জানান, জেলায় বৈঠকে ঠিক হয়েছে, চাষিদের কাছ থেকে দ্রুত কেওয়াইসি সংগ্রহ করে ওই সম্পর্কিত সমস্যা দূর করা হবে।

জেলা খাদ্য দফতরের এক আধিকারিকের অবশ্য মত, ধান কেনার সীমা ১৫ থেকে আগেই ৪৫ কুইন্ট্যাল হলে ভাল হতো। এখন খোলা বাজারে দাম বাড়তে শুরু করায় লক্ষ্যপূরণ করা সত্যিই অসুবিধার। ধান কিনতে চাইলেও চাষিরা ক্রয়কেন্দ্রে আসছেন না।

Paddy Open Market
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy