Advertisement
E-Paper

রেশন কার্ড নিয়ে বিভ্রাট পুরুলিয়ায়

কেউ লটারি বিক্রি করেন, কেউ কাগজের ঠোঙা তৈরি করে সংসার চালান। নিম্নবিত্ত পরিবারের এমন বেশ কিছু মানুষ কেন্দ্রীয় সরকারের জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইনের রেশন কার্ড পাননি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৭ ০১:৩৮

কেউ লটারি বিক্রি করেন, কেউ কাগজের ঠোঙা তৈরি করে সংসার চালান। নিম্নবিত্ত পরিবারের এমন বেশ কিছু মানুষ কেন্দ্রীয় সরকারের জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইনের রেশন কার্ড পাননি। তাঁরা যাতে রেশনের সামগ্রী থেকে বঞ্চিত না হন, সে জন্য রাজ্য সরকার ‘খাদ্যসাথী’ প্রকল্প হাতে নেয়। গত কয়েক মাস ধরে সেই প্রকল্পের ডিজিটাল কার্ড বিলি হয় পুরুলিয়ায়। কিন্তু দুঃস্থ পরিবারের অনেকে সেই প্রকল্প থেকেও বাদ পড়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এর ফলে এখন রেশনে মাল কেনা নিয়ে তাঁরা বিপত্তিতে পড়েছেন।

জেলার বিভিন্ন এলাকার বহু দুঃস্থ মানুষের অভিযোগ, তাঁদের হাতে এপিএল-র সাদা রেশন কার্ড ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আবার কিছু সম্পন্ন পরিবার দরিদ্রসীমার নীচের লোকেদের জন্য বরাদ্দ করা সবুজ কার্ড পেয়েছেন। এর জেরে ১ মার্চ থেকে এমন দুঃস্থ মানুষেরা তুলনামূলক কম মূল্যের রেশনের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

যদিও পুরুলিয়ার জেলা খাদ্য নিয়ামক লতিফুদ্দিন শেখের দাবি, ‘‘কার্ডের শ্রেণি আমরা পাল্টাতে পারব না। গ্রাহকদের নির্দিষ্ট আবেদনপত্র পূরণ করে জমা দিতে হবে।’’

খাদ্য দফতর সূত্রে খবর, দুঃস্থ পরিবারের লোকজনকে ‘রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা যোজনা- ১’ ধরে সবুজ রঙের কার্ড দেওয়ার কথা। তাঁদের জন্য সদস্য পিছু ২ টাকা কেজি দরে ৭৫০ গ্রাম চাল ও গম রেশন দোকান থেকে দেওয়ার কথা। আর অবস্থাপন্নরা ‘রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা যোজনা- ২’ সাদা কার্ড দেখিয়ে ১৩ টাকা কেজি দরে ২৫০ গ্রাম করে চাল ও ৯ টাকা কেজি দরে গম পাবেন। ফলে যে সব দুঃস্থ ২ নম্বর কার্ড পেয়েছেন, তাঁদের সুবিধা কমে যাচ্ছে।

মানবাজারের মুসলমানপাড়ার বাসিন্দা মীর নিজাবুল আলি জানান, তিনি ছাতা, টর্চ, তালা-চাবি সারানোর কাজ করেন। তাঁর পরিবারে পাঁচ সদস্য।

তাঁর দাবি, ‘‘আমার যা আর্থিক অবস্থা তাতে সবার সবুজ কার্ড পাওয়ার কথা। কিন্তু মোটে তিন জনের সাদা রঙের কার্ড পেয়েছি। দু’জনের কোনও রেশন কার্ডই পাইনি। আগে ২ টাকা কিলো দরে চাল এবং গম পেতাম। ফলে অল্প আয়েও কোনওক্রমে সংসার চলে যেত। এখন টাকার অভাবে প্রতি সপ্তাহে রেশনের মাল কিনতে পাচ্ছি না।’’ তিনি বিডিওর কাছে অভিযোগ করেছেন।

মানবাজারের দাসপাড়ার বাসিন্দা বিধবা পূর্ণিমা দত্তর সংসার চলে ছেলের পানের গুমটির আয়ে। তাঁরাও সাদা কার্ড পেয়েছেন। নামোপাড়ার বাসিন্দা সহায় সম্বলহীন বৃদ্ধা শোভারানি চক্রবর্তী ঠোঙা তৈরি করে দিন চালান। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘বড়লোকের কার্ড নিয়ে আমি কী করব? আমার পক্ষে এত দাম দিয়ে চাল, গম কেনা সম্ভব হচ্ছে না। না খেয়ে কি মরতে হবে?’’ আবার নামোপাড়ার বাসিন্দা লটারি বিক্রেতা ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, তাঁরা কোনও কার্ডই পাননি।

পুরুলিয়ার এমআর ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের জেলা সম্পাদক প্রভাশিসলাল সিংহদেও বলেন, ‘‘আমাদের কিছু করার নেই। যে যেমন কার্ড পেয়েছেন, সেই অনুযায়ীই আমরা জিনিস দিচ্ছি।’’

খাদ্য দফতরের এক জেলা কর্তা জানান, ২০১০-’১১ সালে জনগণনার তথ্য অনুযায়ী রেশন কার্ডের এই শ্রেণি বিন্যাশ হয়েছে। তখন হয়তো তথ্যে ভুল থেকে যেতে পারে। মানবাজারের ব্লক খাদ্য ও সরবরাহ আধিকারিক সৌগত দাস স্বীকার করেন, ‘‘বেশ কিছু কার্ডে ভুল থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দেখা যাক কী করা যায়।’’

Ration Card Purulia
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy